কামরাঙ্গা এক অতি পরিচিত ফল | ভিটামিন সি যুক্ত টক-মিষ্টি এই ফলের বৈজ্ঞানিক নাম Averrhoa carambolaLinn| এই ফলটি খেতে অনেকেই খুব পছন্দ করে। পাকা কামরাঙ্গা দিয়ে আচার, সস, জেলি, তৈরি করা হয়। গ্রাম বাংলায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কামরাঙ্গা গাছ দেখা যায়। তবে থাই জাতের কামরাঙ্গার স্বাদ মিষ্টি।
মাঝারি আকৃতির কামরাঙ্গার ডালপালা বেশ ঝোপালো হয় এবং শক্ত। ৩০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে থোকা থোকা হালকা গোলাপি রঙের ফুল হয়। জুন-সেপ্টেম্বর মাসে ফুল আসে এবং সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি মাসে ফল পাকে | কামরাঙ্গা একটি রপ্তানিযোগ্য ফল হওয়ায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এর চাষ হওয়ার বেশ সম্ভাবনা রয়েছে |খুব সহজেই কামরাঙ্গা চাষ (Star Fruit Cultivation) করা হয়, জেনে নিন সহজ পরিচর্যা |
মাটি (Soil):
বালিমাটি ছাড়া যে কোন মাটিতে কামরাঙ্গা চাষ করা যেতে পারে |
জলবায়ু (Climate):
গরম ও আদ্র জলবায়ু কামরাঙ্গা চাষের উপযোগী |
বংশবিস্তার:
কলম রোপপনের মাধ্যমেও কামরাঙ্গার বংশবিস্তার করা যায় |
রোপণ পদ্ধতি:
সমতল ভূমিতে বর্গাকার বা আয়তকার এবং পাহাড়ি ভূমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে চারা রোপণ করা হয়।
রোপণ সময় :
চারা বা কলম রোপণের উপযুক্ত সময় হলো মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য ভাদ্র মাস। তবে সেচ সুবিধা থাকলে আশ্বিন-কার্তিক মাস পর্যন্ত চারা বা কলম রোপণ করা যেতে পারে |
জমি তৈরী (Land prepation):
কামরাঙ্গার চারা রোপণের জন্য ১মি :১মি:১মি: আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে। চারা রোপণের জন্য প্রতি গর্তে ১৫ থেকে ২০ কেজি জৈব সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি এবং ১০০ গ্রাম জিপসাম গর্তের মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে এবং জল দিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন রেখে দিতে হবে |
পরিচর্যা:
১) গাছ লাগানোর ৪/৫ মাস পর থেকে নিয়মিত ২৫-৩০ দিন অন্তর অন্তর সরিষার খৈল পচা পানি প্রয়োগ করতে হবে।
২) সরিষার খৈল ১০ দিন জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সেই পচা খৈলের জল পাতলা করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে।
৩) ১ বছর পর টবের আংশিক মাটি পরিবর্তন করে দিতে হবে। ২ ইঞ্চি প্রস্থে এবং ৬ ইঞ্চি গভীরে শিকড়সহ মাটি ফেলে দিয়ে নতুন সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে তা ভরে দিতে হবে।
৪) গাছের মরা ডাল কেটে দিতে হবে। অধিক ফলন পেতে হলে প্রতিবছর একবার ডালগুলি কেটে গাছকে ছোট রাখতে হবে। ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর টবের মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিতে হবে।
চারা রোপণ:
গর্তের মধ্যখানে চারা বসিয়ে গোড়ার মাটি একটু উঁচু করে দিতে হবে। চারা লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে একটি শক্ত কাঠিতে বেঁধে দিতে হবে। তারপর সেচ দিতে হবে |
সেচ:
চারা রোপণের পর ১ মাস নিয়মিত সেচ প্রদান করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে এবং ফল ধরার পর প্রতি ১৫ দিন পর পর অন্তত ২ থেকে ৩ বার সেচ দিলে ফল ঝরার পরিমাণ হ্রাস পায় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। বর্ষা মৌসুমে বাগানে জল নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে |
আরও পড়ুন - Watermelon Health Benefits – এই সময়ে ফলের তালিকায় অবশ্যই রাখুন তরমুজ, আর রোগ থেকে পান মুক্তি
ফল সংগ্রহ:
ফল পাকার পর গাছে বেশিদিন থাকে না; এক সপ্তাহের মধ্যেই ঝরে পড়ে। তাই সামান্য হলুদ বর্ণ ধারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই হাত দিয়ে বা জাল লাগানো কোটার সাহায্যে ফল সংগ্রহ করতে হবে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টন কামরাঙ্গার ফলন পাওয়া সম্ভব।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Watermelon Farming: জেনে নিন তরমুজ চাষ পদ্ধতি ও সঠিক উপায়ে পরিচর্যা