ভারতীয় উপমহাদেশে চা পানীয় হিসাবে অধিক জনপ্রিয় হলেও, কফির পানের চাহিদাও মোটেই কম নয়। পশ্চিমবঙ্গেও কফির ক্রেতা অনেকে রয়েছেন। কৃষকদের মধ্যেও এখানে কফি তৈরী হচ্ছে দিনকে দিন। কিউবা, নিকারাগুয়া, নেদারল্যান্ডের মতন দেশে কফির চাষ বহুল পরিমাণে হয়। কফির মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যাফেইন রয়েছে। কফি পরিমিত মাত্রায় খেলে শরীরে উদ্যম আসে। আলঝাইমার মতন স্মৃতিভ্রংশ রোগের ক্ষেত্রে কফি পানের যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে। গবেষণায় প্রমাণিত কফি পান ক্যান্সারেরও ঝুঁকি কমায়।
কফির গন্ধেই মানুষের মন অনেকাংশে চাঙ্গা হয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে গেলে কফি পান করলে মনের বিষাদ ও দুঃখেরও কিছুটা উপশম হয়। তবে জেনে রাখা ভালো কিছু না খেয়ে সরাসরি কফি পান শরীরের পক্ষে মারাত্মক অপকারী।
কফি চাষের উপযুক্ত জলবায়ু: (Weather)
কফি চাষের জন্য উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ু সবথেকে সঠিক সময়। তবে কফি ফল পরিপক্ক হওয়ার সময় শুষ্ক জলবায়ু হল সঠিক সময়। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১২৫০ মিমি হলে কফির চাষ ভালো হয়। যেখানে কম বৃষ্টি হয় সেখানেও কফি চাষজ করা যায়, তবে সেই স্থানে অবশ্যই সাপ্তহিক উপায়ে সেচ প্রদান করা উচিত। এছাড়া মালচিং পদ্ধতিতেও কফি চাষ করা যায়।
মাটি: (Soil)
কফি ফলনের জন্য বেলে-দোঁয়াশ অম্ল মাটি ( মাত্রা ৬-৬.৫০) সবথেকে উপযুক্ত। লবনাক্ত মাটি এবং গাছের গোড়াতে জল জমলে কফি চাষে ক্ষতি হতে পারে।
চারা রোপন: (Planting)
কফির চারা, এর বীজ ও কলম থেকে তৈরী হয়। প্রথমে পরিষ্কার ও শুধু জলে ভিজিয়ে নিয়ে ফল থেকে বীজ আলাদা করতে হবে, এরপর বীজ শুকিয়ে নিয়ে, শুকনো কাঠের গুঁড়ো বা ছাইয়ের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ছায়াযুক্ত অঞ্চলে ফেলে রাখতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন অপেক্ষা করে নিয়ে এরপর বীজ তলায় বীজ পুঁতে দিতে হবে। ৩০-৪৫ দিনের ভেতর বীজ থেকে চারা হয়। ফেব্রুয়ারী- মার্চ মাসে পলিব্যাগে চারাগুলি স্থানান্তরিত করে নিতে হবে। মে -জুন মাস নাগাদ জমিতে গর্ত করে চারা বপন করার উপযুক্ত সময়। চারার গর্তে জৈব সার এবং সম্ভব হলে খুব অল্প পরিমাণে রাসায়নিক সার দিয়ে দিলে ভালো হয়।
কফি চারার জন্য ছায়া দেওয়ার উপযুক্ত গাছ:
অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং সূর্যালোকের অধিক উপস্থিতি কফি গাছ সহ্য করতে পারে না। এই কারণে কফি বাগানে ছায়া দেয় এমন গাছ পোঁতা দরকার। মান্দার, কড়াই, কাঁঠাল, ডুমুর, পেঁপে গাছের ছায়া কফি চারাকে অতিরিক্ত রোদ থেকে রক্ষা করে।
সার প্রয়োগ: (Fertilizer)
কফি চাষের সার প্রয়োগে কফি জাত, গাছের বয়স, মাটির গুণাগুণ, জলবায়ু আবহাওয়া বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এরাবিকা জাতের চেয়ে রোবাস্টা জাতের সার তুলনামূলক কম লাগে। কফি গাছের গোড়ায় কম করে চার বার সার দেওয়া উচিত। মার্চ, মে, অগাস্ট এবং অক্টোবর মাসম করে প্রতিবার ২০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫ গ্রাম টিএসপি, ২০ গ্রাম পটাশ সার প্রয়োগ করা দরকার।
গাছের গোড়া থেকে দূরত্ব রেখে নালা তৈরী করে সার দেওয়া উচিত। সেচ দিয়ে মালচিং করে দিলে আরও ভালো হয়। ৫-৬ কেজি জৈব সার প্রতি গাছ অনুযায়ী প্রয়োগ করলে ভালো ফলন আশা করা যায়। গাছের বৃদ্ধি কমে গেলে ১০ লিটার জলে ২৫ গ্রাম ইউরিয়া, টিএসপি ২০ গ্রাম এবং ১৮ গ্রাম পটাশ মিশিয়ে গাছের পাতায় স্প্রে করে দেওয়া উচিত।
পরিচর্যা: (Caring)
লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে বাগানে আগাছা না জন্মায়। এপ্রিল-মে মাস নাগাদ সেচ দেওয়া দরকার। চারা মরে গেলে সেই জায়গায় নতুন করে চারা পোঁতা উচিত।
ডাল-পালা ছাটাই:
গাছে ঠিকঠাক ফল আনানোর জন্য এবং সঠিক আকার তৈরী করার জন্য নিয়মিত ডাল-পালা ছাঁটা দরকার। মাটি থেকে ১-১.৫০ মি. উচুঁতে কাণ্ডের সবথেকে উপরের কুঁড়ি কেটে দেওয়া উচিত। এতে শাখার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে গাছ ঝোপালো আকার ধারণ করবে।
বালাই দমন: (Pest and disease management)
অন্যান্য গাছের মতন কফি গাছেও পোকা-মাকড় রোগ বালাইয়ের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। মিলিবাগ, গ্রীনবাগ, সাদা কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা কফি গাছ নষ্ট করতে অন্যতম ভূমিকা নেয়। ম্যালাথিয়ন/কার্বারিল/সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক দিয়ে এইজাতীয় পোকাগুলি হঠানো যায়। কফি গাছের অন্যতম রোগ হলো পাতার রাস্ট। ০.৫% বর্দো মিক্সার স্প্রে-এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে এই জাতীয় রোগের উৎপাত থামানো যায়।
ফল সংগ্রহ: (Harvesting)
কফি চারা রোপনের ২ থেকে ৩ বছর বাদে কফি সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। পরিপক্ক লাল ফল হাত দিয়েই তোলা হয়। সাধারণত একটি গাছ বছরে ১ কেজি ফল উৎপাদন করে।
আরও পড়ুন: Young Farmer Forum : চাষবাসের কৌশল হাতে কলমে শিখতে ইন্ডিয়ান ইয়ং ফারমার ফোরামই ভরসা