শালগম শীতকালীন সবজি।পশ্চিমবঙ্গে শালগম সুপরিচিত সবজি ৷ স্ফীত ও রূপান্তরিত মূলই শালগমের প্রধান ভক্ষণযোগ্য অঙ্গ৷ স্ফীত মূলের যে অংশ মাটির নিচে থাকে তা সাধারণত সাদা অথবা হলুদাভ, কিন্তু উপরের অংশ জাতভেদে বেগুনী, লাল, সাদা, হলুদ, এমনকি সবুজও হয়৷ আবার সম্পূর্ণ লাল জাতও আছে৷ শাঁসের বর্ণ সাদা অথবা হালকা হলুদ৷ এর ছোট ও ভাল জাতটি মানুষ গ্রহণ করে, বড় আকারের শালগমগুলো পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
শালগমের পুষ্টিগুণ -
শালগমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি ক্যালসিয়াম ও লৌহ রয়েছে৷ রোগ প্রতিরোধ ও অস্থি গঠনে এটি সহায়তা করে৷
শালগমের জাত –
আমাদের দেশে বিভিন্ন দেশের কয়েক জাতের শালগম রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সাদা শাঁসবিশিষ্ট – সাদা মূলবিশিষ্ট জাত হচ্ছে- হোয়াইট ফ্ল্যাট ডাচ, হোয়াইট মিলান, সগোয়িন, টোকিওটপ, টোকিও মার্কেট এবং এক্সপ্রেস হোয়াইট৷ হলুদ শাঁসবিশিষ্ট ইয়েলো গ্লোব, গোল্ডেন বল, ইয়েলো এবারডিন ইত্যাদি।
জাপানি জাত – হোয়াইট লেডি, এক্সপ্রেস হোয়াইট, টোকিও ক্রস ইত্যাদি জাপানি জাত।
ভারতীয় জাত –
ভারতীয় জাতের মধ্যে-পশু চন্দ্রি, পশু স্বর্ণিমা, পশু কাঞ্চন এবং পশু স্বেতী অন্যতম৷ জলবায়ু ও মাটি – শালগম নাতি নতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর উপযোগী ফসল৷ ১৫-২০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় এটি সবচেয়ে ভাল জন্মে৷ শালগম চাষের জন্য উত্তম মাটি হালকা দো-আঁশ মাটি।
শালগম চাষের সময় –
আমাদের দেশে বৃষ্টির মৌসুম শেষ হবার পর ফসল লাগানো উত্তম৷ চারা কচি থাকা অবস্থায় বৃষ্টি হলে ফসল সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ নভেম্বরের প্রথম ভাগ থেকে ডিসেম্বরের শেষ ভাগ বীজ বোনার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়৷
শালগম চাষে জমি প্রস্তুত –
শালগমের জমি ভালভাবে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করা উত্তম৷ শালগম চাষে বীজ বপন –
শালগম ক্ষেতে সরাসরি বীজ বপন করে ও আগে চারা জন্মিয়ে পরে ক্ষেতে রোপণ করা যায়। তবে চাষ বেশি আগাম ফসল ব্যতীত সময় চারা রোপণ পদ্ধতি প্রয়োগ না করাই উত্তম, কারণ রোপণের সময় প্রধান শিকড় ভেঙে গেলে স্ফীত মূলের নিম্নাংশ শাখায়িত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়৷ তাছাড়া, আধুনিক কিছু কিছু জাত বীজ বোনার ৪০-৫০ দিন পর সংগ্রহের উপযোগী হয়৷ সারিতে বীজ বুনলে বা চারা রোপণ করলে সারি থেকে সারি ৩০ সেন্টিমিটার বা ১ ফুট৷ প্রায় এক মাসের চারা রোপণ করা যায়৷ চারা রোপণের ক্ষেত্রে চারা থেকে চারা ২০সেন্টিমিটার বা ৮ ইঞ্চি দূরত্বে রোপণ করতে হবে৷ শালগম চাষে বীজের পরিমাণ – বীজের পরিমাণ জমি ও চাষের ধরণের উপর নির্ভর করে। জমিতে যদি সরাসরি বীজ বুনে চারা উৎপাদন করা হয় তাহলে প্রতিশতকে ১০-১২ গ্রাম লাগতে পারে। আর যদি জমিতে চার রোপণ করা হয় তাহলে প্রতিশতকে ২.৫-৩ গ্রাম লাগতে পারে। শালগম চাষে সার প্রয়োগ / ব্যবস্থাপনা – শালগমের জন্য প্রতি শতক জমিতে ৪০ কেজি গোবর সার, ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৭০০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। আগাম জাতের বেলায় সব সার ফসল লাগাবার সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে, নাবি জাতের বেলায় ইউরিয়া ও পটাশের অর্ধেক উপরি প্রয়োগ করা ভাল৷ এছাড়াও বীজ বপনের ৩০ দিন পর প্রথম কিস্তি হিসেবে ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১৫০ গ্রাম এমওপি সার এবং বীজ বপণের ৪৫ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে আরও ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
শালগম চাষে সেচ ও জল নিষ্কাশন –
ভালো ফলন পাওয়ার জন্য শালগমের জমিতে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। জমিতে জল দাঁড়ানো অবস্থায় যাতে না থাকে সে জন্য জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
শালগম চাষে আগাছা ও নিড়ানি :
নিড়ানির সাহায্যে জমিতে সময়মতো ঘাস বাছাই ও মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। গাছের গোড়ায় একবার মাটি উঠিয়ে দিলে ভালো হয়। শালগম চাষে পোকামাকড় ও রোগদমন : শালগমের তেমন কোনো পোকামাকড় নেই। মাঝে মাঝে লেদা পোকা ঘোড়া পোকা পাতা খেয়ে নষ্ট করে। কোনো কোনো সময় মাস্টার্ড ফ্লাই বা করাত মাছি এবং পাতার বিটল পাতার ক্ষতি করে। শালগমের পাতায় দাগ প্রধান সমস্যা। এছাড়া চারা ধসা বা ড্যাম্পিং অফ, গদাই মূল, কাটুই পোকা, জাব পোকা, মোজাইক ও পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগও হয়ে থাকে। শালগমের পাতা বীজ বোনার ৩০-৩৫ দিনে পর তোলার উপযুক্ত হয়। বীজ বোনার ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে শালগম খাওয়ার উপযুক্ত হয়৷ এরপর মূল শক্ত ও আঁশময় হয়েযায়৷ স্বাদও নষ্ট হয়ে যায়৷ শালগমের ফলন এক শতকে-১০০-১২০ কেজি, একর-প্রতি-১০-১২ টন, হেক্টর প্রতি-২৫-৩০ টন হয়ে থাকে৷
আরও পড়ুন - জানুন আমলকি চাষ পদ্ধতি ও এর ঔষধি উপযোগিতা সম্পর্কে (Indian Gooseberry – Medicinal Plant Cultivation)