চালতা ফল হিসেবে যতটা পরিচিত-তার থেকেও বেশি পরিচিত আচার হিসেবে। কিন্তু চালতার ঔষধিগুনও চমৎকার, চালতার টক খেলে সর্দি-জ্বর সেরে যায়, এছাড়া এটি শক্তি-বর্ধক, রক্ত-আমাশয় নিরাময়েও বেশ কার্যকরী। খুব সহজেই চালতা চাষ করে লাভবান হওয়া যায় | এই নিবন্ধে চালতা চাষ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
মাটি ও জলবায়ু(Soil & climate):
চালতা চাষ সাধারণত ভেজা স্যাঁত-স্যাঁতে মাটিতে ভালো হয়। এছাড়া পাহাড়ী ও সমতল মাটিতেও ভালো হয়। চালতা চাষে তেমন কোন সার লাগেনা। আবার জলাবদ্ধতা কিংবা প্রখর রোদেও তেমন প্রভাব ফেলে না এ গাছের উপর। তাই এটি অনেক লাভজনক ফলন হিসেবে গণ্য।
বীজ বা চারা রোপণ পদ্ধতি:
চালতার বীজ থেকে চারা করা যায়, আবার গুটি কলমের মাধ্যমেও চারা তৈরী করা যায়। তবে কলমের চারায় ফলন তাড়াতাড়ি আসে এবং ভালো মানের ফলন পাওয়া যায়। চারা তৈরী করার পর যথাস্থানে রোপন করার পূর্বে গর্তে জৈব সার ১৫-২০ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ২৫০ গ্রাম দিয়ে মাদা তৈরী করে ১৫-২০ দিন রেখে তারপর, সেখানে গাছ রোপণ করতে হবে এবং গাছগুলো ১৫-২০ ফিট দূরত্বে রোপণ করতে হবে । কারণ চালতা গাছগুলো সাধারণত ২০-২৫ ফিট উঁচু হয়ে থাকে আর দূরত্ব ঠিক হলে গাছের ফলন ভালো হবে। চারা রোপণ করে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ভালো করে বেঁধে দিতে হবে। তাহলে গাছ সোজাভাবে বড় হবে ।
পরবর্তী পরিচর্যাঃ
এ গাছে তেমন কোন সার কিংবা বালাইনাশক লাগে না। তবে এ গাছ বর্ষা কালে রোপণ করলে ভালো । গাছ রোপণ করার পর গাছ বড় হতে থাকলে সে সময় ডালপালা ছেঁটে নির্দিষ্ট আকৃতি দেয়া যায়। আর আগাছা জন্মালে তা পরিষ্কার করে দিতে হয়। তাহলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় ।
রোগবালাই দমনঃ
চালতা গাছে তেমন কোন রোগ বালাইর আক্রমন হয় না। তারপরও এক ধরনের ফল ছিদ্রকারী পোঁকার আক্রমন হয়, সেক্ষেত্রে সুমিথিয়ন ২ মিলি. ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২-৩ বার স্প্রে করলে, এ রোগ থেকে পরিত্রান পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন -Soil borne diseases of crops: জেনে নিন ফসলের মাটিবাহিত রোগের ক্ষয়-ক্ষতির সমাধান
ফল সংগ্রহঃ
চালতা দেখতে সবুজ প্রকৃতির হলেও পাকলে কিন্তু হালকা হলুদ ও ফ্যাঁকাসে সবুজাভ দেখা যায়। সাধারণত শীতের শুরুতে চালতা পাকতে আরম্ভ করে। পাকার পর গাছ থেকে পেড়ে বাজারজাত করা যেতে পারে। যেহেতু চালতা সহজে পঁচনশীল ফল নয় তাই কিছুদিন রেখেও খাওয়া যায়। আবার দুরবর্তী স্থানেও নেয়া যায়। একটি ২০-২৫ ফিট গাছ থেকে, বছরে ৩০০০ থেকে ৪০০০ হাজার চালতা পাওয়া যায়। তাই এটি অনেক লাভজনক একটি ফসল।
চালতা যেহেতু সহজেই কোন কষ্ট ছাড়া ফলানো যায় তাই আমরা বসত-বাড়ির আশে পাশে কিংবা পতিত জমিতে এর চাষ করতে পারি । এছাড়াও সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চালতার আচার বাজারজাত করা যেতে পারে, আর এটি লাভজনক ব্যাবসায় বটে । গ্রামীণ অর্থনীতিতে চালতার এক বিশেষ ভূমিকাও রয়েছে | কৃষকবন্ধুরা চালতা চাষ করে অধিক উপার্জন করতে পারেন | এমনকি, বেকার সমস্যা দূরীকরণেও এই চাষের জুড়ি মেলা ভার |
আরও পড়ুন -Weed management methods: দেখে নিন ক্ষেতের আগাছা দমন করার উপায়