এই 20টি ব্যবস্থা পোল্ট্রি খামারকে বার্ড ফ্লু থেকে নিরাপদ রাখবে! ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিটের জন্য ৫০% পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া যাবে, শীঘ্রই আবেদন করুন এই হাইব্রিড জাতের টমেটো 900 কুইন্টাল প্রতি হেক্টর ফলন দেবে দুধের সঠিক সময় বেছে নিলে উৎপাদন বাড়বে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
Updated on: 9 August, 2020 10:39 AM IST
Chrysanthemum farming

পথিবীর বুকে যত ধরনের ফুল চাষ হয় তাদের মধ্যে চন্দ্রমল্লিকার ফুলের উৎপাদন দ্বিতীয় স্থানে অর্থাৎ বিশ্ব বাজারে এর স্থান দ্বিতীয়, ঠিক গোলাপের পরেই। এর চাষ বহুদিন ধরে পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগণাতে জেলাতে হয়ে আসছে, এই জেলাগুলি ছাড়াও হাওড়া, হুগলী ও মুর্শিদাবাদ জেলাতেও এই ফুলটির চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। মানুষের আর্থিক উন্নতির সাথে সাথে বাজারে এর চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। এর চাষ করে বহু কৃষক আর্থিক দিক থেকে উন্নমিত হয়েছেন। চাষ কার্যে ফসলের রোগ পোকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ সঠিক সময়ে কীট নিয়ন্ত্রণ না করলে ফসলের ক্ষতি হয়। তাই আর্থিক দিক থেকে অধিক লাভের জন্য ফসলের উচ্চ ফলনের জন্য রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক।

চন্দ্রমল্লিকার রোগ ও তার প্রতিকার :

১। চন্দ্রমল্লিকার পাতা ঝলসানো রোগ :

চন্দ্রমল্লিকা যেসব রোগে ভোগে, তার মধ্যে পাতা ঝলসানো রোগ হল মারাত্মক ও অন্যতম। এই রোগ দেরাদুনে প্রথম দেখা দিলেও এখন যে সব রাজ্যে এই ফুলের চাষ হয়, প্রায় সেইসব রাজ্যেও এই রোগের প্রকোপ দেখা গেছে।

রোগের লক্ষণ : এই রোগের লক্ষণ প্রধানতঃ পাতাতে দেখা দিলেও রোগের প্রবণতা বাড়লে গাছের ডগা ও ফুলে আক্রমণ ঘটে। গাছের নীচের পাতাতে প্রথম ছোট গোলাকার বা ডিম্বাকার দাগ হলুদ আভা দিয়ে ঘেরা দেখা যায়। পরে এই দাগগুলো একে অপরের সাথে মিশে গিয়ে অনির্দিষ্ট আকারের হয়ে পাতার কিনারা থেকে পাতার মধ্যশিরার দিকে ইংরাজী ‘V আকৃতি হয়ে এগোতে থাকে। পাতার দাগগুলির রং গাঢ় বাদামী থেকে কালো রঙের হয়। অসংখ্য দাগের জন্য পাতা পরিণত হওয়ার আগে হলদে হয়ে গাছ থেকে ঝরে পড়তে পারে, অথবা গাছে ঝুলে থাকতে পারে। পাতার কালো দাগ ফ্যাকাসে সাদা হলে, ঐ জায়গায় পিকনিডিয়াম নামক ছত্রাকের অংশ গুড়ি গুড়ি আকারে আতস কাঁচ বা বাইনোকুলার যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়।

রোগ জীবাণু ও রোগ চক্র :

এই রোগটি সেপটোরিয়া ক্রিসানথেমি নামক ছত্রাকে আক্রমনে হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে বৃষ্টি ও তাপমাত্রা বাড়লে এই রোগ মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মাঠে দেখা যাবে। আগার কচি পাতা থেকে নীচের বুড়ো পাতাতে আক্রমণ বেশি হয়।

প্রতিকার : পাতায় দাগহীন চারা জমিতে লাগতে হবে। গাছের আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে। রোগ আক্রমণ প্রথম দেখা দেওয়ার সাথে কপার অক্সি ক্লোরাইডের গ্রুপের ওষুধ যেমন ব্লাইটক্স (৪ গ্রাম) বা ম্যানকোজেব গ্রুপের ওষুধ যেমন ইন্দোফিল এম ৪৫ (২.৫ গ্রাম) এর সাথে কার্বেনডাজিম গ্রুপের ওষুধ ব্যাভিস্টিন (১ গ্রাম) অথবা ডাইফেনোকোনাজোল গ্রুপের ওষুধ যেমন স্কোর (১ মিলি) বা অ্যাজোক্সিস্ট্রোবিন, গ্রুপের ওষুধ অ্যামিস্টার (১ মিলি) প্রতি লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা যেতে পারে।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চন্দ্রমল্লিকার চাষপদ্ধতি জানতে হলে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে- 

(Chrysanthemum flower cultivation) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষ করে উপার্জন করুন অধিক অর্থ

Chrysanthemum pest management

২) গোড়া পচা রোগ -

চন্দ্রমল্লিকার গোড়া পচা রোগ বর্ষাকালে ও বর্ষা চলে যাওয়ার ১-১.৫ মাস পর্যন্ত মাঠে দেখা যেতে পারে।

যে জায়গায় চন্দ্রমল্লিকার চারা বসানো হয় ঐ চারার কাটা অংশ এবং পাতা বাদামী হয়ে পচে যায়। আক্রান্ত পচে যাওয়া পাতা গাছের কাণ্ড থেকে একের পর এক ঝরে পড়ে। অবশেষে, চারাতে শিকড় তৈরী হয় না। চারাগুলি ঢলে পড়ে মারা যায়। মূল জমিতে চারা বসানোর পর, গাছ যখন বাড়তে থাকে এবং মাটিতে রস বেশি থাকলে তখন মাটির সংলগ্ন কাণ্ডে জলভেজা পচন গাছের ছালে দেখা যায়। আস্তে আস্তে কাণ্ডের চারদিক ঘিরে পচিয়ে ফেলে। ছালের রঙ বাদামী থেকে কালোয় হয়ে কাণ্ড থেকে আলাদা হয়ে থাকে। আক্রান্ত গাছের কাণ্ড মাটি থেকে উপরে ও মাটির নীচে বাড়তে থাকে। আক্রমণ বেশি হলে গাছের শিকড় ও পচাতে পারে। অবশেষে আক্রান্ত গাছ ঢলে গিয়ে মরে যায়।

রোগজীবাণু ও রোগচক্র :

রোগটি রাইজোকটোনিয়া সালোনি নামক একটি ছত্রাকের আক্রমণে হয়। এই ছত্রাকটি চন্দ্রমল্লিকা ছাড়া, বেগুন, লঙ্কা, আলু ও আরও অনেক পোষক উদ্ভিদে আক্রমণের মাধ্যমে কালযাপন করতে পারে। তাছাড়া এই ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত শস্যাবশেষ ও ছাত্রকের তৈরি অংশ ‘স্ক্লোরোসিয়ার’ মাধ্যমে মাঠে বেঁচে থাকতে পারে। ঘন ঘন বষ্টি, নিচু দাঁড়া এবং মাটিতে অতিরিক্ত রস থাকলে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে।

প্রতিকার : জমির দাঁড়াগুলি উঁচু করতে হবে যাতে মাটিতে রসের ভাব কমে। বিঘেতে ২.৫-৩.০ টন পচা গোবর সার ব্যবহার করতে পারলে ভাল হয়। এছাড়া মাটি সবুজ সার ব্যবহার করা যেতে পারে। জমিতে গোড়া পচা রোগ দেখার সাথে সাথে গাছের গোড়াতে ১ মিলিলিটার কনটাফ (হেস্কা কোনাজোল) বা ১৫ মিলিলিটার সীথসার (ভ্যালিডা মাইসিন) বা ১ মিলি লিটার (পেনসাইফিউরন) প্রতি লিটার জলের সাথে মিশিয়ে নার্সারির চারাতে ও মাঠে লাগানো চারার গোড়াতে ১২-১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩) শেকড় পচা :

গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত গাছ হঠাৎ ঢলে পড়ে। ভালো জল নিকাশি ব্যবস্থা এবং আক্রান্ত অংশকে জমি থেকে দ্রুত সরিয়ে ফেলে রোগের প্রকোপ কমানো যায়। মেটাল্যাক্সিল + ম্যানকোজেব (২.৫ গ্রাম/লি.) দিয়ে মাটি ভিজিয়ে স্প্রে করলে রোগের তীব্রতা হ্রাস পায়। অন্যথায় ক্লোরো থ্যালোনিন ও কাবেণ্ডাজিমের মিশ্রণ (২ গ্রাম + ১ গ্রাম / লি.) স্প্রে করা যেতে পারে।

চন্দ্রমল্লিকায় কীটশত্রুর আক্রমণ ও তার প্রতিকার -

ক) জাব পোকা :

পাতার নীচ থেকে ও কচি ডগা থেকে রস শোষণ করে। গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। পাতা কুঁকড়ে যায়, ফুল শুকিয়ে যায়। নীমঘটিত কীটনাশক এবং সায়নিক কীটনাশক যেমন ম্যালাথিয়ন (১মিলি./লি) ১৫ দিন অন্তর পর্যায়ক্রমে প্রয়াগ করা যেতে পারে।

খ) চিরুণী পোকা বা থ্রিপস্ :

গাছের বাড়ন্ত ডগার পাতা এবং ফুল থেকে রস শোষণ করে খায়, আক্রান্ত পাতা ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং রূপালি রঙের হয়। আক্রান্ত ফুলকে প্রচণ্ড তাপে শুকিয়ে গেছে বলে মনে হয়। পোকা ধরার জন্য নীল আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে। ডাইমিথোয়েট (২ মিলি./লি.) বা ফেনিট্রোথায়ন (১ মিলি./লি.) বা ফিপ্রোনিল (১ মিলি./লি.) স্প্রে ব্যবহার করা যেত পারে।

গ) শুঁয়ো পোকা :

বর্ষাকাল থেকে শীতকাল পর্যন্ত এদের ক্ষতি দেখা যায়। শিরা উপশিরাগুলি বাদ দিয়ে পাতার সম্পূর্ণ অংশ খেয়ে ফেলতে পারে। প্রথমাবস্থায় ছোট ল্যাদাগুলি হাত দিয়ে সংগ্রহ করে নষ্ট করে দিলে উপকার পাওয়া যায়। অন্যথায় কুইনালকস (২ মিলি./লি.) স্প্রে করা যেতে পারে।

Image source - Google 

Related link - (NSC,2020) ৫ বছরে অর্থ দ্বিগুণ সরকারের এই স্কিমে, সাথে পাবেন ট্যাক্সেও ১.৫০ লক্ষ পর্যন্ত ছাড়! আজই বিনিয়োগ করুন এই স্কিমে

English Summary: Disease and pest management of Chrysanthemum flower
Published on: 09 August 2020, 10:39 IST