ড্রাগন ফল মূলত আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটি ফল যা বর্তমানে আমাদের দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ড্রাগন ফলের গাছ এক ধরনের ক্যাকটাস জাতীয় গাছ। এই গাছের কোন পাতা নেই। ড্রাগন ফলের গাছ সাধারনত ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এ ফলের আকার বড়, পাকলে খোসার রং লাল হয়ে যায় ,শাঁস গাঢ় গোলাপী রঙের, লাল ও সাদা এবং রসালো প্রকৃতির । ফলের বীজগুলো ছোট ছোট কালো ও নরম । একটি ফলের ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই ফলের পুষ্টিগুণও (Dragon fruit agriculture) প্রচুর | ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত ফলে ফিবার, ফ্যাট, ক্যারোটিণ, প্রচুর ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন ,ক্যালসিয়াম, আয়রন রয়েছে। এই ফল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।
চাষের সময় (Time):
ড্রাগন ফল রোপণের জন্য উপযোগী সময় হলো মধ্য এপ্রিল (mid April) থেকে মধ্য অক্টোবর (mid October) |
জমি তৈরী (Soil):
সুনিষ্কাশিত উঁচু ও মাঝারি উঁচু উর্বর জমি নির্বাচন করতে হবে এবং ২-৩ টি চাষ দিয়ে ভালোভাবে মই দিতে হবে।
রোপণ:
১.৫ মিটার x ১.৫ মিটার x ১ মিটার আকারের গর্ত করে তা রোদে খোলা রাখতে হবে। গর্ত তৈরির ২০-২৫ দিন পর প্রতি গর্তে ২৫-৩০ কেজি পচা গোবর , ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি, ১৫০ গ্রাম জিপসাম এবং ৫০ গ্রাম জিংক সালফেট সার গর্তের মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে। গর্ত ভরাটের ১০-১৫ দিন পর প্রতি গর্তে ৫০ সেমি দূরত্বে ৪ টি করে চারা সোজাভাবে মাঝখানে লাগাতে হবে। চারা রোপণের ১ মাস পর থেকে ১ বছর পর্যন্ত প্রতি গর্তে ৩ মাস পর পর ১০০ গ্রাম করে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
বংশবিস্তার:
অঙ্গজ পদ্ধতি বা বীজের মাধ্যমে ড্রাগন ফলের বংশবিস্তার হয়ে থাকলেও মাতৃ গুনাগুণ বজাই রাখার জন্য অঙ্গজ পদ্ধতিতে অর্থাৎ কাটিং এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করাই ভালো। কাটিং এর সফলতার হার প্রায় শতভাগ এবং তাড়াতাড়ি ধরে। কাটিং থেকে উৎপাদিত একটি গাছে ফল ধরতে ১২-১৮ মাস সময় লাগে। সাধারণত বয়স্ক এবং শক্ত শাখা ১ থেকে ১.৫ ফুট কেটে হালকা ছায়াতে বেলে দোআঁশ মাটিতে গোড়ার দিকের কাটা অংশ পুতে সহজেই চারা উৎপাদন করা যায়। তারপর ২০ থেকে ৩০দিন পরে কাটিং এর গোড়া থেকে শিকড় বেরিয়ে আসবে। তখন এটা মাঠে লাগানোর উপযুক্ত হবে।
পরিচর্যা:
আগাছা অপসারণ করে নিয়মিত সেচ দিতে হবে এবং প্রয়োজনে চারপাশে বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ লতানো এবং ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার লম্বা হওয়ায় সাপোর্টের জন্য ৪ টি চারার মাঝে ১টি সিমেন্টের ৪ মিটার লম্বা খুঁটি পুততে হবে। চারা বড় হলে খড়ের বা নারিকেলের দড়ি দিয়ে বেধে দিতে হবে যাতে কাণ্ড বের হলে খুঁটিকে আঁকড়ে ধরে গাছ সহজেই বাড়তে পারে।
সার প্রয়োগ (Fertilizer) :
১-৩ বছরের গাছে ৪০-৫০ কেজি গোবর সার, ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি ও ২৫০ গ্রাম এমওপি প্রয়োগ করতে হবে | ৩-৬ বছরের গাছে ৫০-৬০ কেজি গোবর সার, ৩৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০ গ্রাম টিএসপি ও ৩০০ গ্রাম এমওপি প্রয়োগ করতে হবে | ৬-৯ বছরের গাছে ৬০-৭০ কেজি গোবর সার, ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩৫০ গ্রাম টিএসপি ও ৩৫০ গ্রাম এমওপি প্রয়োগ করতে হবে | ১০ বছরের উর্ধে গাছে ৭০-৮০ কেজি গোবর সার, ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি ও ৫০০ গ্রাম এমওপি প্রয়োগ করতে হবে |
সেচ:
ড্রাগন ফল খরা ও জলবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই শুস্ক মৌশুমে ১০-১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।এছাড়া ফলন্ত গাছে ৩ বার অর্থাৎ ফুল ফোটা অবস্থায় একবার, ফল মটর দানা অবস্থায় একবার এবং ১৫ দিন পর আরেকবার সেচ দিতে হবে।
আরও পড়ুন - Apple Farming: গ্রীষ্মকালে কিভাবে বাড়ির ছাদে আপেল চাষ করবেন, জেনে নিন পদ্ধতি
রোগ ও প্রতিকার (Disease management system):
মূলপচা:
গোড়ায় অতিরিক্ত জল জমে গেলে মূল পচে যায়। এ রোগ হলে মাটির ভিতরে গাছের মূল একটি দুটি করে পচতে পচতে গাছের সমস্ত মূল পচে যায়। গাছকে উপরের দিকে টান দিলে মূল ছাড়া শুধু কান্ড উঠে আসে। তাই জলের পরিমান খেয়াল রাখতে হবে |
কাণ্ড ও গোড়া পচা রোগ:
ছত্রাক অথবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হতে পারে। এ রোগ হলে গাছের কাণ্ডে প্রথমে হলুদ রং এবং পরে কালো রং ধারণ করে এবং পরবর্তীতে ঐ অংশে পচন শুরু হয় এবং পাচার পরিমাণ বাড়তে থাকে। এ রোগ দমনের জন্য যে কোন ছত্রাকনাশক (বেভিস্টিন, রিডোমিল, থিওভিট ইত্যাদি) ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে প্রয়োগ করে সহজেই দমন করা যায়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Organic Farming: অর্গ্যানিক ফার্মিং বা জৈব কৃষিকাজে ফলছে সোনার ফসল