পানিফল ইংরেজি নাম Water chestnut, উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম Trapa bispinosa। কাঁচা অবস্থায়, সিদ্ধ করে কিংবা প্রক্রিয়াজাত করেও এ ফল খাওয়া যায়। এমনকি বিভিন্ন সবজির সাথে মিশিয়ে রান্নাও করা যায়। পানিফলকে শুকিয়ে আটা তৈরি করা হয়; সেই আটা দিয়ে পিঠা, কেক, বিস্কুট তৈরি করা যায়।
পানিফলের পুষ্টি ও ভেষজগুণ (Medicinal Properties) :
পানিফল পুষ্টিতে ভরপুর। প্রায় ৯০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেড, ৬০ শতাংশ শর্করা আছে। তাছাড়া বেশ ভালো পরিমাণ আঁশ, রাইবোফ্লেবিন, ভিটামিন বি, পটাসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন আছে। পুষ্টিমানের বিবেচনায় পানিফলে খাদ্য শক্তি আছে ৬৫ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৮৪.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১.৬ গ্রাম, ফ্যাট ০.৯ গ্রাম, শর্করা ১১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৮ মিলিগ্রাম, ০.১৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২, ভিটামিন সি ১৫ মিলিগ্রাম। পানিফলের শুধু খাদ্যগুণই নয় রয়েছে ঔষধি গুণও। পানিফলের শাঁস শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খেলে অ্যালার্জি ও হাত পা ফোলা রোগ কমে যায়। তলপেটের ব্যথায় পানিফল খুবই উপকারী। বিছাপোকা ও অন্যান্য পোকায় কামড় দিলে যদি জ্বালা পোড়া হয় তবে ক্ষত স্থানে কাঁচা পানিফল পিষে বা বেঁটে লাগালে দ্রুত ব্যথা দূর হয়। কাঁচা পানিফল বলকারক, দুর্বল ও অসুস্থ মানুষের জন্য সহজপাচ্য খাবার। পানিফলে শর্করা ও প্রোটিন আছে যথেষ্ট।
বিজ্ঞানসম্মত ভাবে পানিফল চাষ (Cultivation Method) :
জলবায়ু:
পানি ফল চাষের জন্য উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন | বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য জলের তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং গাছের বৃদ্ধির জন্য ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপযুক্ত।
মাটি:
এটি একটি জলজ উদ্ভিদ হওয়ার জন্য মাটির সেরকম কোন গুরুত্ব নেই। তবে পুকুরের নিচে ১৫ সেন্টিমিটার কাদামাটি থাকার প্রয়োজন। পুকুরের তলদেশে বেলে মাটি থাকলে ফলন কম হবে। এছাড়া পুকুরের জলের গভীরতা ৫০ সেন্টিমিটার থেকে ২.৫ মিটার হওয়া দরকার ভালো ফলনের জন্য।
উন্নত জাত (Variety) :
পানিফলের কিছু উন্নত জাত হল-
কাশ্মীর বাসমতি, কানপুরি, জনপুরী, গ্রীন স্পাইন, বালিয়া রেড, পাটনাই, কোটা সুধার, বিহার লার্জ রেড, লখনউ গ্রীন ইত্যাদি।
বীজতলায় চারা তৈরি:
সাধারণত আগের বছরের পানিফল চাষ করা জলাভূমি থেকেই বীজ সংগ্রহ করা হয় এবং সংগৃহীত বীজ থেকে পুষ্ট বীজ বেছে নিতে হবে। ১০০ কেজি গোটা ফল (খোসা পচনের পর ৩০ কেজি) দরকার ১ হেক্টর জমি চাষের জন্য। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে বীজ বীজতলায় ফেলতে হবে। এই সময় জলের গভীরতা ৪০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার থাকা প্রয়োজন। বর্ষাকাল শুরু না হওয়া পর্যন্ত চারাগাছ বীজতলাতেই রাখা হয়।
না হওয়া পর্যন্ত চারাগাছ বীজতলাতেই রাখা হয়।
বীজ পরিশোধন:
চারাগাছকে মূল জমিতে রোপণের আগে ০.২ % ক্লোরোপাইরিফস (Chlorpyriphyphos) এবং ০.১ % কার্বেন্ডাজিম (Carbrndazim) মিশ্রিত জলে ৮ থেকে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখতে হবে।
মূল জমিতে সার প্রয়োগ (Fertilizer) :
চারাগাছ লাগানোর আগে মূল জমি তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন জমিতে উপযুক্ত পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকে। যদি জৈব পদার্থ কম থাকে তখন খামার জাত জৈব সার (FYM) হেক্টর প্রতি ৫ টন হিসেবে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও চারাগাছ লাগানোর সময় হেক্টরপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে এবং গাছ লাগানোর ২০ থেকে ২৫ দিন পর চাপান সার হিসেবে পুনরায় প্রতি হেক্টর ২০ কেজি ইউরিয়া দিতে হবে। অনুখাদ্য হিসেবে জিঙ্ক এবং বোরন ব্যবহার করলে ফলের সংখ্যা ও ফলের ওজন বৃদ্ধি পাবে। নতুন চাষের জমিতে হেক্টর প্রতি ৬০ কেজি ইউরিয়া, ২০ থেকে ৪০ কেজি ফসফরাস এবং ২০ থেকে ৩০ কেজি পটাশিয়াম ব্যবহার করতে হবে।
মূল জমিতে চারা রোপণ (Plantation) :
৪-৫ টি পাতাযুক্ত চারাগাছকে জুন মাস থেকে জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের সময় পুকুরের জলের গভীরতা ৬০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার হওয়া প্রয়োজন। চারাগাছ গুলি ১.৫ মিটার থেকে ২ মিটার সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব বজায় রেখে কাদা মাটিতে হাত বা পা এর সাহায্যে পুঁতে দিতে হবে।
আরও পড়ুন - Fenugreek Cultivation - সহজ পদ্ধতিতে মেথি চাষ করে আয় করুন প্রচুর মুনাফা
অন্তর্বর্তী পরিচর্যা:
চারা রোপণের পর থেকে দু মাস পর্যন্ত নিয়মিতভাবে জলজ আগাছা তুলে ফেলতে হবে গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য। গাছের ফলন বৃদ্ধির জন্য গাছে ফুল আসার কিছুদিন আগে অতিরিক্ত ডালপালা ছেঁটে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুন - Water chestnut - পানিফল চাষে রোগপোকার আক্রমণ ও তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা