পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলের প্রায় সর্বত্র কাঁঠাল গাছ দেখা যায়। কাঁচা কাঁঠালকে বলা হয় এঁচোড়। কাঁঠাল গাছের কাঠ আসবাবপত্র তৈরীর জন্য সমাদৃত। কাঁঠাল পাতা তৃণভোজী প্রাণীর পছন্দের খাদ্য। তুলনামূলকভাবে বিশালাকার এই ফলের বহির্ভাগ পুরু এবং কন্টকাকীর্ণ, অন্যদিকে অন্তরভাগে একটি কাণ্ড ঘিরে থাকে অসংখ্য রসালো কোয়া। কাঁঠালের বৃহদাকার বীজ কোয়ার অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত।
কাঁঠাল ভারতের একটি অন্যতম সুপ্রাচীন ও জনপ্রিয় ফল। এর মধ্যে যথেস্ট পরিমান প্রোটিন, শর্করা, আঁশ ছাড়াও সোডিয়ান ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও রাইবোফ্ল্যাভিন আছে। কাঁচা অবস্থায় এটি (এঁচোড়) সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়।
কাঁঠালের জাত (Variety) -
কাঁঠালের বেশ কিছু জাত রয়েছে। চাষযোগ্য জাতসমূহ মোটামুটি দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। গালা ও খাজা - এ দুটি জাত ছাড়াও কাঁঠালের আরো জাত আছে। গালা ও খাজা কাঁঠালের মাঝামাঝি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হিসেবে রয়েছে ‘রসখাজা’। এছাড়া আছে রুদ্রাক্ষি, সিঙ্গাপুর, সিলোন, বারোমাসী, গোলাপগন্ধা, চম্পাগন্ধা, পদ্মরাজ, হাজারী প্রভৃতি। তার মধ্যে হাজারী কাঁঠাল ছাড়া, বাকী সব ভারতে চাষ হয়।
কাঁঠালের চাষ (Cultivation Method) :
জমি:
পানি দাঁড়ায় না এমন উঁচু ও মাঝারি সুনিষ্কাষিত উর্বর জমি কাঁঠালের জন্য উপযোগী।
চারা তৈরি:
সাধারণত কাঁঠালের বীজ থেকে কাঁঠালের চারা তৈরি করা হয়। ভাল পাকা কাঁঠাল থেকে পুষ্ট বড় বীজ বের করে ছাই মাখিয়ে ২/৩ দিন ছায়ায় শুকিয়ে বীজতলায় বপন করলে ২০-২৫ দিনে চারা গজাবে। ২-৩ মাসের চারা সতর্কতার সাথে তুলে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়।এছাড়া গুটি কলম, ডাল কলম, চোখ কলম, চারা কলম এর মাধ্যমেও চারা তৈরি করা যায়।
রোপনের সময়:
ষড়ভূজী পদ্ধতিতে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত চারা বা কলম মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য শ্রাবণ মাসে রোপণ করতে হয়।
রোপন পদ্ধতি:
গাছ ও লাইনের দূরত্ব ১২ মিটার করে রাখা দরকার। রোপণের সময় প্রতি গর্তে গোবর ৩৫ কেজি, টিএসপি সার ২১০ গ্রাম, এমওপি সার ২১০ গ্রাম সার প্রয়োগ করতে হয়। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতি গাছের জন্য সারের পরিমাণ বৃদ্ধি করা দরকার। চারা/ কলমের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য পরিমিত ও সময় মতো সেচ প্রদান করা দরকার।
রোগ প্রতিরোধ -
ফল ঝড়ে পরা – কাঠালে স্ত্রী ও পুরুষ ফুল একই গাছে হয়, তবে পরাগযোগ না হলে ফল শুকিয়ে ঝড়ে যায়। প্রতিকারে প্ল্যানোফিক্স ২.৫ – ৩ মিলি প্রতি ১০ লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
স্পঞ্জের মত ফল পচা – বোরনের অভাবে কচি কাঠাল ফলগুলি স্পঞ্জের মতো হয়ে পচে যায়। প্রতিকারের জন্য মাঘ থেকে জৈষ্ঠ মাস অবধি প্রতি মাসে একবার প্ল্যানোফিক্স ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়।
ছাল ফাটা রোগ – আম গাছের মত কাঁঠাল গাছের ছাল ফেটে যায় ও গা দিয়ে আঠা বের হয়। প্রতিকারের জন্য ব্লাইটক্স ১০ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে কান্ডের গায়ে লেপে দিয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - Papaya Farming - পেঁপে চাষ করে এই কৃষক মাসে আয় করছেন ৩০০০০ টাকা
ছত্রাকঘটিত মুচি ঝরে পড়া রোগ –
এই ছত্রাকঘটিত রোগে (Rhizopus artocarpi) মুচি ছোট অবস্থায় কালো হয়ে পচে গাছ থেকে ঝরে পড়ে। এটি কাঁঠাল গাছের সব থেকে বড় সমস্যা। প্রতিকার – ছত্রাক ঘটিত আক্রমণের জন্য ব্লাইটক্স ৪ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে মুচি আসার পূর্বে ও পরে প্রয়োজন ভিত্তিক স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন - Strawberry Cultivation - সহজ উপায়ে এখন বাড়িতেই করুন পুষ্টিকর ফল স্ট্রবেরী চাষ