ব্রোকলি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সব্জি | এটি ফুলকপির মতো দেখতে হলেও বর্ণে সবুজ | আমাদের দেশের এই সব্জির চাহিদা বেশি ভালো রকম | এর বর্ণ সবুজ হওয়ায় অনেকেই একে সবুজ ফুলকপি বলে | চাইনিজ খাবারের ব্যবহৃত অন্যতম প্রধান উপকরণ এই ব্রোকলি। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, সি এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে এবং এর গন্ধটাও আকর্ষণীয়। ব্রোকলি ফুলকপির মত অত বড় হয় না। নিয়মিত ব্রোকলি খেলে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় | এর বাজারদর ভালো থাকায় চাষীদের মধ্যে ব্রোকলি চাষে (Broccoli Cultivation) আগ্রহ বাড়ছে |
উপযুক্ত জলবায়ু ও মাটি (Soil and Climate):
সাধারণভাবে যে ধরনের জলবায়ুতে ফুলকপির চাষ হয় সেখানে ব্রোকলি চাষও সম্ভব। জল জমে না এরূপ উঁচু জমি, উর্বর দোআঁশ মাটি হলে ফলন ভালো হয়। ব্রোকলির গাছ ১৫-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভাল জন্মায় ব্রোকলি এপ্রিল মাসের পরেও ভালো ফলন দিতে পারে। দেশের সব অঞ্চলেই প্রায় ব্রোকলি চাষ করা যেতে পারে। সেচ ও জল নিষ্কাশনের সুবিধা আছে এমন জমি ব্রোকলি চাষের জন্য উপযুক্ত |
জাত:
ব্রোকলি সবুজ রঙের ছাড়াও বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে | বেগুনি বা সাদা রঙেরও হয়ে থাকে তবে এই জাতগুলি কম সুস্বাদু হয় | ছোট আকারের গাড় সবুজ বা নীলাভ সবুজ রঙের ব্রোকলি জাতের চাহিদা বেশি। উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হচ্ছে- প্রিমিয়াম ক্রপ, গ্রিন কমেট, ডিসিক্কো, টপার-৪৩, ডান্ডি, সপ্রডিটিং টেক্সাস ১০৭, গ্রিন ডিউক, ক্রুসেডার, ওয়ালথাম ২৯, গ্রিন মাউন্টেইল, ইতালিয়ান গ্রিন, গ্রীন বাড ইত্যাদি।
কিভাবে চারা তৈরী হয়?
পাতা পচা সার বা গোবর সার ১ ভাগ, বালি ১ ভাগ ও মাটি ২ ভাগ মিশিয়ে ব্রোকলির বীজতলা তৈরি করতে হয়। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত ব্রোকলির চারা রোপন করা যায়। কম বয়সের চারা দ্রুত বাড়ে। সেপ্টেরম্বর মাসে যখন বৃষ্টি কমে আসে তখন উঁচু জমি দেখে বীজতলা করা যায়। বীজতলায় ১ মিটার চওড়া করে বেড তৈরি করতে হবে। বেডের মাটি ভাল করে কুপিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে প্রতি বর্গমিটারে ৪ থেকে ৫ কেজি গোবর সার মাটির সাথে মিশিয়ে বেড সমান করে কয়েকদিন রেখে দিতে হবে। আগাম মৌসুমে বৃষ্টি হলে বীজতলায় পলিথিনের ছাউনি দিয়ে রাখতে হবে । এক হেক্টর জমির চারার জন্য বীজতলায় ২৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম বীজ বুনতে হবে। মনে রাখবেন মাস খানেকের কম বয়সী চারা লাগানো ভাল। লক্ষ রাখতে হবে কখনও যেন বীজতলা একেবারে শুকিয়ে না যায় আবার জল জমে না থাকে। চারা তোলার পূর্বে বীজতলায় সেচ দিতে হবে। তাহলে চারার গোড়া নরম হয়ে আসে এবং বীজ তুলতে সহজ হয়।
জমি তৈরী:
সারাদিন রোদ পায় এমন জমি ব্রোকলি চাষের জন্য বাছতে হবে। লাঙ্গল বা টিলার দিয়ে মাটি কয়েক দিন রোদে ফেলে রাখতে হবে। সেচ ও জল নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য বেডে চারা রোপণ করাই ভালো। সেচ দেওয়া এবং জল নিষ্কাশনের জন্য নালা অত্যন্ত জরুরি। চাষ দেওয়ার সময় শতকে ২৫ থেকে ৪০ কেজি পচা গোবর বা খামারজাত সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। মাটির সব ঘাস, শিকড় আগাছা, আবর্জনা, পরিষ্কার করে মাটির ঢেলা ভেঙে ফেলে সমান করতে হবে। চারা লাগানোর পর চারার গোড়ায় অবশ্যই জল দিতে হবে। চারা রোপনের পূর্বে গোড়ার দিকে দু-একটি বড় পাতা কেটে বাদ দিলে চারা কম মরবে। চারার মাথা থেকে নতুন পাতা ছাড়া শুরু হলেই বুঝতে হবে চারা মাটিতে লেগে গেছে এবং নতুন শিকড় ছেড়ে মাটি থেকে খাবার ও জল গ্রহণ শুরু করেছে।
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
ব্রোকলির জন্য জৈব সার খুবই উপকারী। ইউরিয়া সারের পরিমাণ বাড়ানোর সাথে সাথে ফলনও বাড়ে। জমি তৈরির সময় ও পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পরিমান জৈব সার ও রায়াসানিক সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি হেক্টরে গোবর ১৫ হাজার কেজি, ইউরিয়া ২৫০ কেজি, এমপি ২০০ কেজি, টিএসপি ১৫০ কেজি এবং প্রতি চারায় পচা খোল ৫০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হয়। জৈব সারের সাথে ইউরিয়া সার চারা রোপণের ১৫ দিন পর থেক দু ভাগে সমান ভাগ করে দিতে হবে।
পোকামাকড় ও প্রতিকার (Disease management system):
ব্রোকলি চাষের সময় জমিতে অনেক ধরণের পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। পোকা দমনের জন্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। আমাদের দেশে ব্রোকলির সবচেয় ক্ষতিকর পোকা হল মাথাখেকো লেদা পোকা। এছাড়াও আরও অন্যান্য পোকার মধ্যে রয়েছে ক্রসোডলমিয়া লেদা পোকা, বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা ইত্যাদি।
আরও পড়ুন - Apple Farming: গ্রীষ্মকালে কিভাবে বাড়ির ছাদে আপেল চাষ করবেন, জেনে নিন পদ্ধতি
ফসল সংগ্রহ:
সাধারনত ব্রোকলির কেন্দ্রীয় মাথা বা ফুল গুচ্ছটিই তোলা হয়। তোলার সময় সঠিকভাবে বুঝে ব্রোকলি সংগ্রহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, উপযুক্ত সময়ে তোলা না হলে ফুল ঢিলা হয়ে যায়, এমনকি ফুল ফুটতে শুরু করে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - বর্ষায় আপেল ফসলে সহজ পদ্ধতিতে রোগ নিয়ন্ত্রন