চীনাবাদাম শুধু অর্থকরী ফসল হিসাবেই চাষ করা হয়না, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতেও এর ভূমিকা অপরিসীম | খরিফ ও রবি মরসুমের তুলনায় ফাল্গুন-চৈত্র মাসে চিনাবাদাম চাষের চল বেশি | গম, তিল, অড়হর ও আউশ ধানের সঙ্গে সাথী ফসল হিসাবে এই চাষ করা যায়। একক ভাবে চাষ করেও ভাল লাভ হয়। চীনাবাদাম চাষে (Peanut cultivation) কৃষকদের আর্থিক দিক থেকে উন্নতি হয় |
মাটি(Soil):
চিনাবাদামের ফুল মাটির উপরে ফুটলেও গর্ভাশয়ের নীচের যে বৃন্তটি শুঁটি গঠন করে, সেটি মাটির নীচে চলে যায় এবং সেখানে পুষ্ট হয়ে বাদামে পরিণত হয়। এই কারণে ভাল নিকাশি ব্যবস্থা আছে এমন হাল্কা, ঝুরঝুরে দোঁয়াশ মাটিতে বাদাম চাষ করা উচিত।
জাত:
দাঁড়ানো বা গুচ্ছ জাতের মধ্যে এগুলি চাষ করা যায়: এ কে ১২-২৪, টিএমভি ৭, টিএমভি ১০, এমএইচ ২, জে ১১, পোলচি ১, টিপিজি ৩৭ | ছড়ানো জাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: বি ৩০, বি ৩১। হাইব্রিড জাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে ট্যাগ ২০, ট্যাগ ২৪।
আরও পড়ুন - Ginger Farming: আদা চাষে লাভ পেতে চাষ করুন এই পদ্ধতিতে
মাটি শোধন:
১ একর জমির জন্য১০০ কেজি ভাল পচানো গোবর সারের সঙ্গে ১ কেজি করে উপকারী ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া (ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ও সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স) মিশিয়ে পরিমাণ মতো জল দিয়ে ১ সপ্তাহ আর্দ্রতা ও ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। এতে উপকারী ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ১০-১২ গুণ বৃদ্ধি পাবে। শেষ চাষের ১ সপ্তাহ আগে মাটিতে প্রয়োগ করে মাটি শোধন করলে টিক্কা, শিকড় ও গোড়াপচা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। ল্যাদা পোকা লাগার ভয় থাকলে ১ একর জমিতে ৪ কেজি ফোরেট ১০জি অথবা কার্বোফিউরন ৩ জি শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ শোধন:
প্রতি লিটার জলে ৫ গ্রাম উপকারী ছত্রাক (ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি) মিশিয়ে অথবা প্রতি কেজি বীজে ৫ গ্রাম ক্যাপটান মিশিয়ে শোধন করে নিলে বেশ কিছু রোগের আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। ল্যাদা পোকার আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে প্রতি লিটার জলে ৫ গ্রাম অ্যাসিফেট ৭৫% ডব্লুপি মিশিয়ে অথবা প্রতি কেজি বীজে ১০ মিলি ক্লোরোপাইরিফস ২০% ইসি মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
রোপন পদ্ধতি(Plantation):
দাঁড়ানো জাত হলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-৩০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব অন্তত ১৫ সেমি হতে হবে। ছড়ানো জাতের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০-৪৫ সেমি ও গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১৫ সেমি হতে হবে |
সেচ:
১ টা সেচ দিয়ে জো অবস্থায় বীজ বুনতে হবে। বেলে মাটি হলে ৫ দিন অন্তর, দোঁয়াশ মাটি হলে ১০ দিন অন্তর হাল্কা সেচ দেওয়া উচিত। ফুল আসা ও শুঁটি পাকার সময় যেন অবশ্যই সেচ দেওয়া হয়।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
বীজ বোনার ২৪-৩০ দিনের মধ্যে যেহেতু ফুল আসে, সেহেতু ২০ দিনের মাথায় প্রতি একরে ৮০-২০০ কেজি জিপসাম, ৭-১৪ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ প্রয়োগ করে মাটি ধরানো উচিত। এতে বেশি সংখ্যক ও গুণমানের শুঁটি মেলে। চুন প্রয়োগ করলে অর্বুদ ও শুঁটির গঠন ভাল হয়।
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
গোড়াপচা:
গোড়াপচা রোগে গোড়ায় কালো দাগ পড়ে ও শিকড় পচে যায়। ফলে কচি চারাগাছ মারা যায়। এই রোগের প্রতিকার হিসাবে প্রতি লিটার জলে কার্বেন্ডাজিম ৫০% ডব্লুপি এক গ্রাম মিশিয়ে বা পেনসাইকিরন ১.৫ মিলি অথবা ভ্যালিডামাইসিন ৩% এল ২ মিলি ভাল করে মিশিয়ে বিকেলের দিকে গাছের গোড়ায় ছেটাতে হবে।
কলার রট রোগ:
কলার রট সারানোর উপায় শস্য পর্যায় আর বীজশোধন। এ ছাড়া, মরচে রোগে বাদামের পাতায় লাল রঙের ছোট ছোট দাগ দেখা যায়। ট্রাইসাইক্লাজোল ৭৫% ডব্লুপি ০.৫০ গ্রাম প্রতি লিটার জলে আঠা-সহ ভাল করে গুলে স্প্রে করতে হবে।
সাদা পোকা:
গাঙ্গেয় সমভূমিতে এই পোকার উপদ্রব খুব বেশি হয় না। তবুও গভীর ভাবে জমি চাষ, আশপাশের ঝোপ পরিষ্কার ইত্যাদি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ২-১ টা গাছ রেখে দিলে সেখানে এই পোকা পূর্ণাঙ্গ দশায় আশ্রয় নেবে। তখন সেখানে ক্লোরোপাইরিফস ২০% ইসি ২.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
বীজ বোনার পর গুচ্ছ জাতের ক্ষেত্রে ৮৫-৯৫ দিন, ছড়ানো জাতের ক্ষেত্রে ১০০-১১০ দিন ও হাইব্রিড জাতের ক্ষেত্রে ১১০-১২৫ দিন সময় লাগে। হেক্টরপ্রতি ২.০ থেকে ২.৫ টন চীনাবাদামের ফলন পাওয়া যায় |
আরও পড়ুন -Seed Germination Process: বীজ অঙ্কুরোদগম পদ্ধতিগুলি কি কি?