কলমি একটি পাতা জাতীয় গ্রীষ্মকালীন শাক। আমাদের দেশের বাড়ির আশেপাশে একপ্রকার অনাদরে, অবহেলায় এই কলমি শাক জন্মায়। প্রাকৃতিকভাবে পানিতে বা পানির ধারের ভেজা মাটিতে সাধারনত এই শাক দেখা যায় । তেমন কোন যত্নেরও প্রয়োজন হয় না।
উপকারিতা (Benefits) -
এটির উপকারিতার কথা ভেবে দিন দিন কলমি শাকের ব্যবহার বাড়ছে। দামেও অন্যান্য শাকের তুলনায় এই শাক খুবই সস্তা। অথচ পুষ্টিগুণে অনন্য একটি শাক কলমি।কলমি শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি। কলমি শাকে আছে পর্যাপ্ত পরিমানে লৌহ । জন্মের পর শিশু মায়ের বুকের দুধ না পেলে মাকে কলমি শাক রান্না করে খাওয়ালে শিশু পর্যাপ্ত পরিমানে দুধ পাবে।নিয়মিত কলমি শাক খেলে কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর হয়।
উপকারি এই শাকটি কোন রকম রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করেই টবে চাষ করা যায়।ছাদ বাগানে কলমি চাষ খুব লাভজনক।একবার চাষ করে বেশ কয়েক দফা ফলন পাওয়া যায় । আসুন জেনে নিই এর সহজ চাষ পদ্ধতি।
চাষ পদ্ধতি (Cultivation Method) -
প্রায় সব ধরণের মাটিতেই কলমি শাক শাক চাষ করা যায় । অপেক্ষাকৃত কম গভীরতার পাত্র কলমি শাক চাষের জন্য বেশি উপযোগি। ছাদ বা ব্যালকনিতেও কলমি চাষ সম্ভব। প্রথমে টব/ড্রামের নিচে ৩/৪ টি ছিদ্র করে নিতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে। টবের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে । এখন ২ ভাগ দোআঁশ কিংবা বেলে- দোআঁশ মাটি এবং ১ ভাগ গোবর একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টব ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ৭-৮ দিন । সাত-আট দিন পর পূণরায় মাটি খুচিয়ে দিতে হবে। মাটি যখন খুব ঝুরঝুরে হবে তখন কলমি শাকের বীজ বপন করতে হবে । সবচেয়ে ভাল হয় ৫-৬ ইঞ্চি দূরত্বে একসংগে ১০-১২টি করে বীজ বপন করা । বীজ বপনের পর হালকা পানি দিতে হবে। কলমি শাক অর্ধজলজ উদ্ভিদ হলেও টবে কলমি চাষে কম পানি দেয়া ভাল। তাতে কলমি শাক সোজা এবং শক্ত থাকবে।
সময়:
গিমাকলমি সারা বছরই চাষ করা যায়। তবে চৈত্র (মধ্য মার্চ-মধ্য এপ্রিল) থেকে শুরু করে শ্রাবণ (মধ্য জুলাই-মধ্য আগস্ট) পর্যন্ত বীজ বপনের উওম সময়।
জমি তৈরি এবং বীজ বপন: প্রথমে ৫-৬ টি চাষ এবং মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। লাইন করে এবং ছিটিয়ে উভয় পদ্ধতিতে বীজ বোনা যায়। তবে লাইনে বীজ বপন করলে যত্ন নিতে সহজ হয়। লাইন হতে লাইনের দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার (৮ইঞ্চি) এবং বীজ হতে বীজের দূরত্ব হবে ১৫ সেন্টিমিটার (৬ ইঞ্চি)। এক সাথে অন্তত ২টি বীজ বোনা ভালো। তবে একাধিক চারা জন্মালে ১টি রেখে বাকিগুলো কেটে দিতে হবে। শতাংশপ্রতি বীজ প্রয়োজন হবে প্রায় ৪০-৫০ গ্রাম।
সার প্রয়োগ:
কাঙ্খিত ফলন পেতে প্রয়োজন সুষম সার ব্যবহার। মাটির উর্বরতা বিবেচনা করে সার দিতে হয়। এজন্য মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সার দেয়া উওম। আর তা যদি সম্ভব হয় তাহলে স্বাভাবিক মাত্রায় দিতে হবে। শতাংশপ্রতি যে পরিমাণ সার প্রয়োজন তা হলো- ইউরিয়া ৫৬০- ৬৫০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০-৪৯০ গ্রাম, এমওপি ৪০০-৪৯০ গ্রাম এবং জৈব সার ৩২-৪০ কেজি। ইউরিয়া বাদে বাকি জৈব ও অজৈব সার শেষ চাষের সময় মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। প্রতিবার পাতা সংগ্রহের পর ইউরিয়া সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
আগাছা দমন :
অন্য যে কোনো ফসলের ন্যায় কলমিশাকের জমিতে আগাছা জন্মাতে দেয়া যাবে না। কারণ আগাছা খাবারের সাথে ভাগ বসায়। পাশাপাশি রোগ-পোকা আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। তাই আগাছা দেখা দেয়ার সাথে সাথে তুলে ফেলতে হবে।
সেচ ব্যবস্থা:
শুষ্ক মৌসুমে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে সাধারণত সেচের দরকার হয় তবে ওই সময় অনাবৃষ্টি হলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
রোগ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা:
কলমিশাকে রোগ-পোকা তেমন হয় না বললেই চলে। তবে কিছু পোকার আক্রমণ হতে পারে। যেমন বিটল, বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা। এসব পোকা দেখা দিলে হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলতে হবে। তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে দমন করতে হবে। জমি বেশি স্যাঁতসেঁতে থাকলে গোড়া পচে যেতে পারে। ড্যাম্পিং অফ রোগের কারণে এমনটা হয়। এই সময় অনুমোদিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
শাক সংগ্রহ:
বীজ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে শাক সংগ্রহের উপর্যুক্ত হয়। প্রথম সংগ্রহের ৮-১০ দিন পরপর পাতা তোলা যাবে। শতাংশ প্রতি গড় ফলন প্রায় ১৬০-১৮০ কেজি।
আরও পড়ুন - সঠিক নিয়মে বাড়িতে পুদিনা চাষের কৌশল (Mint Cultivation)