বরবটি একটি জনপ্রিয় সবজি। এই সবজি বর্তমানে বারো মাসই পাওয়া যায়। আমাদের দেশের কৃষকেরা উন্নত জাতের বরবটি চাষ করে যেমন তাদের চাহিদা মিটাতে পারেন, তেমনি আবার বাজারে বিক্রয় করে আর্থিক ভাবে লাভবান হতে পারে। বরবটি আমিষসমৃদ্ধ একটি সবজি। এই সবজি চাষ আমরা বসতবাড়িতেও করতে পারি। প্রায় সারা বছরই এই সবজি চাষ করা যায়।
নিম্নে বরবটি চাষের (Cow Peas) বিভিন্ন দিক-নিদের্শনা দেওয়া হল:
বরবটির জাত (Variety) :
বরবটির চাষ করলে ভাল জাত দেখে চাষ করতে হবে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের বরবটির জাত রয়েছে। যেমন- বিএইউ বরবটি-১, কেগর নাইটি, চীনা বরবটি, ফেলন, লালবেনী, ঘৃত কুমারী, গ্রীন লং, তকি, বনলতা ইত্যাদি। তবে কেগরনাটকী নামে একটি উন্নত জাতের বরবটি অনেক দিন পর্যন্ত আমাদের দেশে চাষ হয়ে আসছে। কেগরনাটকী জাতটি পৌষ এবং মাঘ মাস ছাড়া সারা বছরই চাষ করা যায়। বরবটির উল্লেখযোগ্য জাতের মধ্যে কেগরনাটকী ও লাল বেণী জাতের ফলন সবচেয়ে বেশি।
বরবটির প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি নির্বাচন (Climate & Soil) -
অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায় বরবটি ভালো জন্মে।তবে খুব শীতে বরবটির চাষ বেশী ভাল হয় না।কারন শীতকালে বরবটি গাছের বৃদ্ধি কম হয় ও ফল কম ধরে।বরবটি উষ্ণ ও অবউষ্ণ অঞ্চলের ফসল। আগেই বলা হয়েছে বরবটি এখন বার মাসই চাষ করা হয়। প্রায় সব ধরনের মাটিতে বরবটি সব সময় চাষ করা যায়। তবে দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে বরবটির চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
বরবটির চাষের সময়:
বরবটির বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রয়ারী থেকে জুলাই মাস। শীতকালে বরবটির বীজ বোনা উচিৎ নয়।
বরবটির চাষের জমি তৈরি ও বীজ বপন:
বরবটি চাষের জন্য জমি হতে হবে আগাছা মুক্ত ও ঝুরঝুরে মাটি। এর জন্য জমি ভালোভাবে কয়েক বার চাষ দিতে হবে। জমি পরিষ্কার করে ৪ থেকে ৫৬ টি চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে জমি তৈরি করতে হবে। তারপর মাটির উপরে বেড ও মাদায় তৈরি করে প্রত্যেক মাদায় ৪-৫ টি বীজ বপন করতে হবে। হয়। বীজ বপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে সারি হতে সারির দূরত্ব হতে হবে ২-৩ হাত এবং মাদা হতে মাদার দূরত্ব হতে হবে ১/২ হাত। একই সময় পলিব্যাগে কিছু চারা তৈরি করে রাখলে যেসব জায়গায় বীজ গজাবে না সেসব ফাঁকা জায়গায় পলিব্যাগে চারা রোপণ করে পূরণ করা যাবে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ কেজি (শতকে ৪০ গ্রাম) বীজ লাগে।
বরবটির চাষের সার প্রয়োগ পদ্ধতি:
জৈব সার বরবটি গাছের জন্য খুবই ভাল সার। অল্প সময়ে অধিক ফলন পেতে হলে অন্যান্য সারও দিতে হবে পরিমাণমতো। যেমন-টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া। এসব সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হবে। তবে মনে রাখবেন বরবটি চাষে ইউরিয়া সার কম লাগে। এছাড়াও আপনি গোবর সার, জিপসাম সার, জিংক সালফেট সার ও বোরক্স সার দিতে পারেন। ইউরিয়া সার বেশি দিলে গাছ ঝোপালো হয় ও ফলন কম হয়।
বরবটির চাষের সেচ জল নিষ্কাশন:
জমিতে পানির যাতে অভাব না হয় সেজন্য প্রয়োজন অনুসারে শুকনার সময় সেচ দিতে হবে। নালার মধ্যে পানি ঢুকিয়ে সেচ দিলে গাছের শিকড় সে পানি টেনে নিতে পারে।
বরবটির চাষের আগাছা ও নিড়ানি:
বৃষ্টির পানি যাতে আটকে না থাকে সেজন্য নালার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। এবং জমি সবসময় আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। বিশেষ করে গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। বরবটির গাছ বড় হলে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। জমিতে মাটির অবস্থা বুঝে মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে। জমিতে পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না।
বরবটির চাষের রোগ-বালাই দমন:
বরবটি গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমন দেখা যায়। যেমন-জাব পোকা, বিছা পোকা, মাজরা পোকা ইত্যাদি। এসকল পোকা বরবটি গাছের কচিপাতা, কাণ্ড, ফুল ও ফলের ক্ষতি করে থাকে। তাই এই সব পোকা কঠোরভাবে দমন করতে হবে। এ পোকাগুলো দমন করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরণের উন্নত মানের কীটনাশক ঔষধ পাওয়া যায়। এছাড়াও বরবটি গাছের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। যেমন- এনথ্রাকনোজ রোগ, পাতায় দাগ রোগ, গাছের শিকড় ও গোড়া পচা রোগ ইত্যাদি। এসব রোগ দমন করার জন্যও বাজারে বিভিন্ন ছত্রাকনাশক পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - জানুন সঠিক নিয়মে বাড়ির টবেই থানকুনি চাষের কৌশল (Centella asiatica Cultivation)