সাধারণত, বাজরা একটি প্রাগৈতিহাসিক ফসল | বাজরাকে ইংরেজিতে বলা হয় pearl millet | ভারতে এই ফসলের চাষ ব্যাপকভাবে হয় | এটি অতন্ত্য জনপ্রিয় একটি ফসল | মূলত, বাজরা খরা ও বন্যা দুটোই সহ্য করতে পারে। প্রধানত, এটি ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ | বিনাযত্নে এমনকি চাষ ছাড়াই বাজরা চাষ (Bajra firming) করা যায়। তবে ভালো ফলন পেতে হলে চাষ দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সার ও সময়মতো সেচ দিতে হয় | তবে জেনে নিন, কিভাবে বাজরা চাষ করা যায়
জমি তৈরী:
বাজরা চাষের জন্য ঠিকমতো বীজতলা তৈরী করা প্রয়োজন | বাজরার বীজ খুবই ছোট, একারণে খেয়াল রাখতে হবে বীজতলার মাটি যেন ঢেলাযুক্ত না হয় | এর ফলে, বীজ গজালে সমস্যা হবে |দুই থেকে তিনবার লাঙ্গল দেওয়া প্রয়োজনীয় । চাষ কমপক্ষে ১৫ সেমির গভীর হলে ভালো। বাজরা চাষের জন্য উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। জমিতে কোনোভাবেই যেন জল না জমে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বীজতলার মাটিতে বীজ গজানোর মতো যথেষ্ট জল থাকা প্রয়োজনীয় |
চাষের সময় (Proper time):
বাজরার ভালো ফলন পেতে জল সেচ দরকার। কাছাকাছি সেচের ব্যবস্থা আছে এমন জমিতে বাজরা চাষ করা বাঞ্চনীয়। প্রধানত জুন-জুলাই মাসে (জৈষ্ঠ্য-আষাঢ়) বাজরা চাষ করা হয়। বাজরা সময় মতো না চাষ করতে পারলে পুনঃরোপন করেও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়। কারণ পুনঃরোপিত ফসলের চারা বিরূপ আবহাওয়ার জন্য যথেষ্ট বয়স্ক থাকে।
বীজের পরিমান:
১ হেক্টর জমির জন্য ৫ কেজি বীজ যথেষ্ট।
রোপণ:
প্রতিটি সারির মধ্যবর্তী দূরত্ব ৪৫ সেমি এবং প্রতিটি গাছের মধ্যেবর্তী দূরত্ব ১০ থেকে ১২ সেমি হওয়া ভালো। বীজ ২-৩ সেমি গভীরতায় বপন করতে হবে। বাজরার চাষ সাধারণত বীজ ছিটিয়ে চাষ হয়। এই পদ্ধতি কার্যকর না হলে তাহলে আলুর মতো করে বপন করতে হবে। এতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হবে এবং ভালো অঙ্কুরোদ্গম হবে।
পুনঃরোপণ:
চাষ করা সমান জমিতে বীজ বুনতে হবে | ২০০ বর্গমিটার জমিতে ২ কেজি বীজ বুনলে এক হেক্টর জমিতে চাষে প্রয়োজনীয় বাজরা চারা পাওয়া যায়। ১০ সেমি দূরত্বে এবং ১.৫ সেমি গভীরতায় বীজ বুনতে হবে। তিন সপ্তাহ পর চারা তুলে পুনরায় রোপণ করতে হবে। এটা হলো পুনঃরোপনের জন্য প্রস্তুত করা চারা। খেয়াল রাখতে হবে, যখন চারা তোলা হয় তখন মাটি ভিজে থাকা প্রয়োজন যাতে শিকড়ে কোনো আঘাত না লাগে। পুনঃরোপনের সময় একটি করে চারা লাগাতে হবে। প্রতিটি সারির দূরত্ব হবে ৫০ সেমি এবং প্রতিটি চারার মধ্যে দূরত্ব হবে ১০ সেমি।
সেচ ব্যবস্থা (Application of fertilizer):
প্রধানত, বাজরা বৃষ্টির জলে হওয়া ফসল | যথেষ্ট পরিমানে বৃষ্টি হলে, সেচ প্রয়োজন হয়না | তবে খরা হলে দুটো সেচ প্রয়োজন হয় | তবে, বাজরা জলমগ্নতা সহ্য করতে পারে না। জল জমলে দ্রুত বের করে দিতে হবে |
আগাছা দমন:
চাষের ৩ থেকে ৫ সপ্তাহ পর নিড়ানি দিতে হবে। ফুল আসার আগে পর্যন্ত ২-৩ বার নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হয় |
ফসল সংগ্রহ:
প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ২০% আর্দ্রতা থাকে। অর্থাৎ গাছ প্রায় মরে শুকিয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। খড় রঙের শস্য দেখা যায়। পুরো গাছ কেটে ফসল সংগ্রহ করতে হয় । অথবা ইয়ার হেড (শীষ) প্রথমে তোলা হয় এবং বাকি গাছ পরে কেটে ফেলা হয়। থ্রেশার বা মাড়াই মেশিন দিয়ে ইয়ারহেড থেকে দানা বের করা হয় এবং এরপর বাতাসের বিপরীতে ধরে বা কুলো দিয়ে হাকিয়ে অথবা ফ্যানের বাতাসে খোসা ওড়ানো হয়।
আরও পড়ুন - জানেন কিভাবে মৌমাছি পালন করে হতে পারেন লাভবান?
ফসল তোলার পরবর্তী ব্যবস্থা:-
শস্যকে রোদে শুকানো হয়, সংরক্ষণের জন্য আর্দ্রতা কমিয়ে ১২-১৪% করে নেওয়া হয়। সংরক্ষণ করা হয় মাটির পাত্রে। এর খড় উৎকৃষ্টমানের পশুখাদ্য | শুকিয়ে যত্ন করে রেখে দিলে শীতকালে পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - বাড়িতে বসেই সুস্বাদু স্ট্রবেরি পেতে চান? নিজের ছাদ বাগানে সহজেই করতে পারেন স্ট্রবেরি চাষ