রাবার গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Ficus elastica।বাগান ও ঘর সাজানোর গাছ হিসেবেও রাবার সুপরিচিত। বায়ু শোধন করে পরিবেশকে নির্মল রাখার ক্ষেত্রে রাবার গাছের উপকারিতা দুর্দান্ত। বাড়ির বাগানে হোক বা টবে, রাবার গাছের চাষ পদ্ধতি সহজ। অল্প যত্ন পেলেই এই গাছ সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে। এটা আসলে বৃক্ষ জাতীয় গাছ। রাবারের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকার নিরক্ষীয় বন। সেখানকার মতো বৃষ্টিভেজা উষ্ণ জলবায়ু এ গাছের অতি প্রিয়। এছাড়াও এই গাছ বিচিত্র পরিবেশে মানিয়ে নিতে সক্ষম। প্রাকৃতিক পরিবেশে রবার গাছ ৫০ ফুটেরও বেশি উঁচু হতে পারে। তবে টবে রাখলে রাবার গাছ সাধারণত ৫/৬ ফুটের বেশি লম্বা হওয়ার সুযোগ পায় না।
রাবার গাছের পাতা (Rubber Tree) -
ইনডোর গাছ বা বাগানের গাছ হিসেবে রাবারের প্রধান আকর্ষণ এর সুদৃশ্য পাতা। মোম-মসৃণ একরাশ উজ্জ্বল পাতা এই গাছকে এক অদ্ভুত রাজকীয় মহিমা এনে দেয়। রাবার গাছের পাতা সাধারণত ঘন সবুজ রঙের হয়। তবে কালচে-লাল রঙের এবং বাহারি পাতা যুক্ত রাবার গাছও দারুণ জনপ্রিয়।
রাবার গাছের উপকারিতা -
শিল্প বান্ধব গাছ রাবার। এ গাছের ল্যাটেক্স রাবার শিল্পের মূল কাঁচামাল। অবশ্য বাগান বা বাড়ি সাজানোর ক্ষেত্রেও রাবার গাছের উপকারিতা কম নয়। সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি বায়ুশোধনে এ গাছ দারুণ কাজের। টবে রাখলে রাবার ঘরের বাতাস থেকে অনেক ক্ষতিকারক জৈব বাষ্প শুষে নেয়। যেমন,—ফর্ম্যালডিহাইড,বেঞ্জিন,টলুইন,ট্রাইক্লোরো ইথেন, ইত্যাদি।
কলম পদ্ধতিতে রাবার গাছ রোপনের ব্যবস্থাপনা (Grafting Method) -
ডাল কেটে মাটিতে লাগিয়ে বা কলমের সাহায্যে সহজেই রাবার গাছের বংশবৃদ্ধি করা যায়।
মৃত্তিকা -
ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে রাবার গাছের যত্নে সবচেয়ে বড়ো কথা হলো: সব ব্যাপারে ভারসাম্য। এই গাছের জন্য ভালো জল নিকাশি ব্যবস্থা যুক্ত দোঁয়াশ মাটি উপযোগী। টবের মাটি তৈরির সময় জৈব সার (ভার্মিকমপোস্ট বা কমপোস্ট বা গোবর সার) যোগ করতে হবে।
আরও পড়ুন - ধনিয়া চাষে ফসল সংগ্রহ ও রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ (Coriander Pest Management)
সূর্যালোকের ব্যবস্থা-
উজ্জ্বল আলোতে রাবার গাছ ভালো হয়। তবে প্রখর রোদে সরাসরি রাখলে রাবারের পাতায় ঝলসা লাগতে পারে।
সেচ-
রাবার গাছে জল দেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা দরকার। বেশি জলে রাবার গাছের শিকড় বা গোড়া পচে যেতে পারে। আবার টবের মাটি একেবারে শুকিয়ে গেলেও এ গাছের ক্ষতি হয়।
পোকামাকড় ও রোগ-
রাবার গাছের রোগ খুব কমই দেখা যায়। কদাচিত অ্যাফিড, মিলি বাগ, মাইটস, স্কেল ইত্যাদি পোকামাকড়ের আক্রমণ ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে গাছের আক্রান্ত অংশটা যত্ন সহকারে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে বা রাবিং অ্যালকোহল (আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল)-এ তুলো ভিজিয়ে মুছে ফেলতে হবে। এধরনের পরিস্থিতিতে রাবার গাছে নিম তেল স্প্রে করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
মাঝেমাঝে রাবার গাছের পাতাগুলো ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে মুছে দিলে বা স্প্রেয়ারের সাহায্যে ধুয়ে দিলে সেগুলো তরতাজা দেখায়। গাছের আকার আকৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দরকার মতো রাবারের প্রুনিং বা ছাঁটাই করা যেতে পারে। তাছাড়া প্রতি বছর রাবার গাছের টব ও মাটি বদলে দেওয়া উচিত।
সতর্কতা-
রাবার গাছের রস গায়ে লাগলে কারো কারো অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হয়। তাছাড়া এই গাছের পাতা বা কান্ড খেয়ে ফেললে পেটের গোলমাল, বমি, ডাইরিয়া সহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঘরে বা বাগানে রাবার গাছ রাখলে এই ব্যাপারগুলো মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া এই গাছের আর কোনো সমস্যা নেই।
আরও পড়ুন - তুলসী চাষে আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ-পোকা ব্যবস্থাপনা (Pest Management In Tulsi Farming)