ভেষজ ওষুধ বা আয়ুর্বেদ বর্তমানে বিভিন্ন দেশের মানুষের সার্বিক স্বাস্থ্য সংরক্ষণে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।যার ফলে ধীরে ধীরে বাড়ছে ভেষজ উদ্ভিদ চাষের চাহিদা। ভারতের সবচেয়ে ধনী কৃষক রাজারাম ত্রিপাঠি,তিনিও এই ভেষজ উদ্ভিদেরই চাষ করেন।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই ভেষজ উদ্ভিদ জাত কাঁচামালের চাহিদা উর্দ্ধমুখী। এই সম্পর্কিত সত্য অনুধাবন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করার জন্য সুপারিশ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই গুরুত্ব আরোপ নিঃসন্দেহে বনৌষধি বা ভেষজ ওষুধের কার্যকারিতার উপযোগিতাকে মূল্যবান বলে নিশ্চিত করে এবং ভেষজ ওষুধ যে যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে।
ভেষজ ওষুধ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বিভিন্ন ঔষধি উদ্ভিদ উৎস থেকে সংগ্রহ বা আহরণ করা হয়। সাধারণতঃ বনে-জঙ্গল প্রাকৃতিকভাবে জন্মে থাকা ঔষধি উদ্ভিদ থেকেই ভেষজ ওষুধের কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে জমিতে চাষ করে ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ বাঞ্ছনীয়, নয়ত একসময় প্রকৃতি ভেষজ উদ্ভিদ শূণ্য হয়ে পড়বে। তাছাড়া, চাষকৃত ভেষজ উদ্ভিদের গুণগতমান অনেক উন্নত হয়ে থাকে। চাষের আওতায় থাকা উদ্ভিদের উৎপাদন ও সংগ্রহ পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং সঠিক পদ্ধতিতে তা সংগ্রহ করার সুযোগও থাকে।
বন্য উৎস থেকে সংগৃহীত কাঁচামালের ক্ষেত্রে এ ধরণের নিশ্চয়তা থাকে না। এ ক্ষেত্রে ভুল উদ্ভিদ নির্বাচন ও দ্রব্য সংগ্রহের আশঙ্কা যেমন থাকে তেমনই নিম্নমানের কাঁচামালের সরবরাহেরও সুযোগ থাকে। অসময়ে, অপরিণত অবস্থায় ও ভ্রান্ত পদ্ধতিতে ফসল তোলা হলে তার গুণগত মান সঠিক হয় না।
আরও পড়ুনঃ শুকনো ফুল থেকে তৈরি হচ্ছে সার, সুগন্ধি, ধূপকাঠি সহ অনেক পণ্য
ভেষজ উদ্ভিদ যথেষ্ট পরিবেশ বান্ধব। প্রায় সব ভেষজ উদ্ভিদেরই পরিবেশ বিশুদ্ধকরণের ক্ষমতা রয়েছে।ভেষজ উদ্ভিদ বাতাসে ভাসমান বিভিন্ন রোগজীবানু বিনাশের ক্ষমতা রাখে। তাই অধিক হারে ভেষজ উদ্ভিদ চাষ ক্রমশঃ দূষিত হয়ে যাওয়া পরিবেশ বিশুদ্ধকরণে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম।
অধিকাংশ ভেষজ উদ্ভিদ চাষে কৃত্রিম কীটনাশক ও সার বিশেষ প্রয়োজন হয় না। গুল্ম বা লতা জাতীয় উদ্ভিদ থেকে সারা বছর অথবা খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ফসল সংগ্রহ করা যায়। সে জন্য তুলনামূলক ভাবে ভেষজ উদ্ভিদ চাষে কম বিনিয়োগে অধিক লাভ অর্জন সহজেই সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ ঘরেই মাশরুম চাষ করুন, কম খরচে লাভ হবে দ্বিগুণ
মাশরুম সহ আরও বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে যা অল্প জায়গায় চাষ করা যায়, তাই ভূমিহীন বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এই চাষ বিশেষভাবে উপযুক্ত।আর্থিক বিশ্লেষণে ভেষজ উদ্ভিদ চাষ অন্য যেকোনো কৃষির চেয়ে বেশী লাভজনক। যে কোনো পতিত জমি বা রাস্তার পাশে ভেষজ উদ্ভিদ চাষ করা সম্ভব বলে এই উদ্ভিদ চাষে বিশেষ যত্নের দরকার খুব একটা হয় না, তাই ভেষজ উদ্ভিদ চাষে ঝুঁকিও কম।
আন্তর্জাতিক বাজারে এর বিশেষ চাহিদা আছে, তাই সঠিক উপায়ে সরকারী সাহায্যে বাজারকরণের ব্যবস্থা করা হলে ভেষজ উদ্ভিদ চাষ আর্থিক লাভের সহায়ক। সর্বনিম্ন সঠিক বাজার মূল্য সরকারী ভাবে প্রতিটি প্রজাতির উদ্ভিদজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে নির্ধারণ করা সম্ভব হলে বিনিয়োগকারী সঠিক বাজার মূল্যে যথেষ্ট লাভ অর্জন করতে পারবেন।