দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্যের চাহিদা (Food Security) বৃদ্ধি পাচ্ছে। খাদ্যের চাহিদার সাথে সাথে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে খাদ্যের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে তবে সেই অনুসারে উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তাই এখন এমনই খাদ্য উৎপাদন করতে হবে যা একই সাথে আমিষ ও ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ করতে পারে।
মাশরুমই হচ্ছে সেই কাঙ্খিত আদর্শ পুষ্টিমান সম্পন্ন খাবার। কারণ মাশরুম (Mushroom Cultivation) পুষ্টিমান সবজি এবং মাংসের মাঝামাঝি। মাছ, মাংস, ডিম খেলে আমরা শরীরে পর্যাপ্ত আমিষ পেতে পারি তবে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান ভিটামিন ও ফাইবার মোটেও পাওয়া যায় না। অথচ প্রাণিজ আমিষের সাথে প্রবেশ করে শরীরে তৈরী হয় অতি ক্ষতিকর চর্বি যা হার্টের প্রধান শত্রু। সাধারণত সবজি হচ্ছে মাছ, মাংস ও ডিমের ঠিক বিপরীত অর্থাৎ শর্করা ও আমিষের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ। সুতরাং মাশরুমই একমাত্র আদর্শ খাবার যা মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব মৌলিক পুষ্টি উপাদান সয়ংসম্পূর্ণভাবে সরবরাহ করে। নিয়মিত মাশরুম খেলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ভেঙ্গে পেটের মেদ দূর করে, এছাড়া দীর্ঘদিন যাবত শরীরে অবস্থানরত অনেক কঠিন ও জটিল রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।
মাশরুম চাষে লাভ (Profits in mushroom cultivation) -
এর পাশাপাশি চলে আসা যাক লাভ-ক্ষতির হিসাবে। বাড়িতে মাশরুম চাষ করে কি পরিমানে লাভ করা যেতে পারে। বাড়ির বারান্দায়, কোনো ফাঁকা ঘরে বা নিদেনপক্ষে ছাদেই অনায়াসে করা যেতে পারে মাশরুম চাষ। এই চাষের জন্য হাজার পাঁচেক টাকা মূলধনই যথেষ্ট। তবে যেটা মাথায় রাখা প্রয়োজন যে, মাশরুমের কিন্তু কোনো বীজ হয়না, যা থেকে আমরা মাশরুম তৈরী করি তাকে "স্পন" বলে। প্রতিটি "স্পন" থেকে প্রায় ২০০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যেতে পারে। ঘরে ১৫০-২০০ টি "স্পন" লাগানো যেতেই পারে। সুতরাং, ১৫০-২০০ "স্পন" থেকে প্রায় ৩০-৪০ কেজি মাশরুম পাওয়া যাবে। বর্তমান বাজারমূল্যে প্রতি কেজি মাশরুম ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।
সহজে চাষ (Easy cultivation method) -
ভারতবর্ষের তথা পশ্চিমবঙ্গের নাতিশীতষ্ণ আবহাওয়া এবং এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাপনের ধরণ মাশরুম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এটি চাষের জন্য কোনো ধরণের ফসলি জমির দরকার হয় না বরং শোবার ঘরের মতো ছোট ছোট ঘরেই মাশরুম চাষ করা যায়। শহরাঞ্চলে দক্ষ গার্ডেনারের সাহায্যে ঘরের ছাদকেই মাশরুম চাষের জন্যে উপযোগী করে ফেলা যায়। কাজটি হালকা এবং নিজ বাড়িতে হওয়ায় যে কেউ এই কাজে অংশ নিতে পারে। সুতরাং পরিবারের সকলেই তাদের নিজ নিজ কাজের পাশাপাশি মাশরুম চাষে অবদান রাখতে সক্ষম।
চাষে অংশ নিচ্ছেন মহিলারাও -
সাধারণত মহিলারা বাড়ির ভেতরে কাজ করতে অভ্যস্ত। তাদের জীবনমান বিবেচনা করলে বলা যায় যে, মাশরুম চাষ মহিলাদের জন্য উপযোগী। কৃষি কাজে ক্রমবর্ধমান রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার পরিবেশকে ক্রমান্বয়ে হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মাশরুম চাষ করতে কোনো রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার করতে হয় না। তাই মাশরুম চাষ শতভাগ পরিবেশ বান্ধব।
আবার অন্যান্য ফসল চাষের তুলনায় মাশরুম আবাদের মাধ্যমে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে কৃষকের হাতে অর্থ ফিরে আসে। মাশরুম চাষে সাধারণত ব্যবহৃত কাঠের গুড়ো যা কিনা পরিপূর্ণভাবে পরিত্যক্ত হলে তা অন্যান্য কৃষি কাজে সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কাঠের গুড়ো উদ্ভিজ্জ পদার্থ হওয়ায় এবং কোনো রাসায়নিক উপাদান না থাকায় আদর্শ জৈব সার বিবেচনা করা যেতে পারে।
ভারতবর্ষের অন্যতম বড় সমস্যা অপুষ্টি। অর্থের অভাবে অনেক দরিদ্র মানুষের পক্ষে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য ক্রয় করা মোটেও সম্ভব হয় না। তাই ঘরে ঘরে মাশরুম চাষ এ সমস্যার সমাধান করতে পারে সহজেই। ভারতবর্ষ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম জনগোষ্ঠির দেশ হওয়ায় এখানকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব । শহর ও গ্রামাঞ্চলে ঘরে ঘরে মাশরুম কৃষি বিকল্প ও নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরী করে বেকারত্ব মোচনে অবদান রাখতে পারে।
পরিশেষে এ'কথা বলা যেতেই পারে যে, মাশরুম চাষ সমাজে পিছিয়ে পরা মানুষের দারিদ্র দূরীকরণের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে, তা বলাবাহুল্য।
আরও পড়ুন - Monsoon Crop Care - ভালো ফল পেতে এই মরসুমে কীভাবে করবেন পেয়ারা গাছের পরিচর্যা, জেনে নিন পদ্ধতি