গত কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে সাফল্য মিলছে কৃষকদের | কম খরচে বেশি লাভের অঙ্ক ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। এ রাজ্যে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষের ব্যাপাওক সাফল্য পেয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষকরা। শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ হলেও বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। এই পেঁয়াজ চাষের জন্য শুধু প্রয়োজন উঁচু জমি। যেখানে জল দাঁড়াবে না। তাহলেই জমি প্রস্তুত করে সঠিক বীজ ফেলতে হবে।
এই নিবন্ধে পেঁয়াজ চাষের (Onion Cultivation) পদ্ধতি আলোচনা করা হলো;
মাটি (Soil):
উর্বর বেলে-দো-আঁশ মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য অতি উপযোগী। বর্ষায় পেঁয়াজ চাষের জন্য উঁচু জমি দরকার যেখানে বৃষ্টির জল জমেনা। জমিতে সেচ ও জল নিকাশের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
চারা তৈরী:
সাধারণত, ৩x১ মিটার আকারের প্রতি বীজতলার জন্য ২৫-৩০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। পেঁয়াজ রবি ও খরিপ মৌসুমে চাষ করা যায়। খরিপ মৌসুমে চাষের জন্য জুলাই-আগষ্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র) ও রবি মৌসুমে চাষের জন্য ফেব্রুয়ারী-মার্চ (মাঘ-ফাল্গুন) মাসে বীজ তলায় বীজ বপন করতে হয়। জমির আগাছা পরিষ্কার করে ভালোভাবে চাষও মই দিয়ে ৩x১ মিটার আকারের বীজতলা করে এক সপ্তাহ রাখা হয়।
রোপণ (Plantation):
বীজ বপনের আগের দিন সন্ধ্যায় বীজ ভিজিয়ে রেখে পরের দিন তুলে ১ ঘন্টা রৌদ্রে শুকিয়ে তারপর বীজতলায় বপন করতে হবে। বীজ বপনের পর ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে। বীজ বপনের পরদিন বেডে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দিনের বেলা বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে এবং রাত্রে খোলা রাখতে হবে। প্রয়োজনে জল ছিটিয়ে দিতে হবে |
রোপণ দূরত্ব:
১৫x১০ সেমি দূরত্বে চারা রোপণ করা হয়। বর্ষার সময় ১ মিটার চওড়া ও ১৫ সে.মি. উঁচু বেড তৈরি করে চারা রোপণ করা হয়। দুই বেডের মাঝে ৩০ সেমি চওড়া জল নিকাশের নালা রাখা হয়। ৪০-৪৫ দিন বয়সের চারা জমিতে লাগানোর উপযুক্ত |
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
পেঁয়াজের চাষের জমিতে প্রতি হেক্টরে গোবর ৮-১০ টন, ইউরিয়া ২৫০-২৭০ কেজি, টিএসপি ১৯০-২০ কেজি এবং ১৫০-১৭০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়। জমি তৈরির সময় ১৬০-১৭০ কেজি ইউরিয়া ও বাকি সার মাটিতে মেশাতে হয়। চারা রোপণের ২০ দিন পর বাকি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করা হয়।
রোগবালাই ও দমন (Disease management system):
জাব পোকা:
জাব পোকা দলবদ্ধভাবে পেঁয়াজ পাতার রস চুষে খায়, ফলে গাছ দূর্বল ও হলুদাভ হয়ে যায়। জাব পোকার মলদ্বার দিয়ে যে তরল পদার্থ বের হয় তাকে ’হানিডিউ’ বলে যা পাতায় আটকে গেলে সুটি মোল্ড নামক কালো ছত্রাক জন্মায়। ফলে গাছের সবুজ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রতিকার:
আক্রমণ বেশি হলে সাইপারমেক্সিন গ্রুপের সাইপেরিন, সাইপার অথবা ইমাডিক্লোরো ফিড গ্রুপের এডমায়ার প্রতি লিটারে ১ মিলি সাইপারমেক্সিন অথবা ইমিডা ক্লোরোফিড প্রতি লিটারে ০.৫ মিলি গাছে ৪ থেকে ৫ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।
কান্ড পচা রোগ:
স্কেলরোসিয়াম রলফসি ও ফিউজারিয়াম নামক ছত্রাক দ্ধারা এ রোগ হয়। যে কোন বয়সের গাছ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কন্দ ও শিকড়ে এর আক্রমণ দেখা যায়। আক্রান্ত কন্দে পচন ধরে এবং আক্রান্ত কন্দ গুদামজাত করে বেশী দিন রাখা যায় না।
প্রতিকার:
প্রথমে, আক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংশ করতে হবে। মাটি সব সময় স্যাঁত স্যাঁতে রাখা যাবে না। ম্যানকোজেব গ্রুপের এগ্রিজে ডাইথেনএম-৪৫ অথবা ব্যাভিষ্টিন (কার্ববোন্ডাজিম) ছত্রাকনাশক প্রতি কেজি বীজে ১০০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধণ করে বপন করতে হবে।
আরও পড়ুন - Cardamom farming - এলাচ চাষ করে প্রতি বিঘায় আয় করুন ১০ লক্ষ টাকা
ফসল সংগ্রহ:
বীজ বপন থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত প্রায় পেঁয়াজ চাষে মোট ১১০-১২০ দিন সময় লাগে। পেঁয়াজ গাছ পরিপক্ক হলে পাতা ক্রমান্বয়ে হলুদ হয়ে হেলে পড়ে। জমির প্রায় ৭০-৮০% গাছের এ অবস্থা হলে পেঁয়াজ তোলার উপযোগী হয়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Ice Apple Farming: আপনিও কি মিষ্টি তাল শাঁস চাষে ইচ্ছুক? জেনে নিন কৌশল