পালং শাক একটি অতি জনপ্রিয় সব্জি | এর বৈজ্ঞানিক নাম Spinacea olerocea | আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য শাকসবজি ও ফলমূলের উপর নির্ভর করে। তাই এ দেশে সারাবছরই বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি চাষ করা হয়।
পালং শাক খেতে সুস্বাদু; তাই সবার কাছে এর চাহিদা থাকে। পালং শাক তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। তাই, কৃষকরা পালং শাক চাষে (Spinach Cultivation) বেশ আগ্রহীও হন | তবে, এই নিবন্ধে জেনে নিন পালং শাক উৎপাদন কৌশল,
চাষের সময় (Cultivation) :
ভাদ্র-আশ্বিন (আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি) মাসের মধ্যে বীজ বপন করা হয়।
মাটি (Soil):
দোআঁশ উর্বর মাটি বেশি উপযোগী। এছাড়াও এঁটেল, বেলে-দোআঁশ মাটিতেও চাষ করা যায়।
জমি তৈরী:
পালং শাক চাষ করার আগে চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে আল তৈরি করেও পালংশাক চাষ করা যায়। উঁচু আল পালংশাকের জন্য নির্বাচন করা হয়। উঁচু আলে কিছুটা আগাম পালংশাক বীজ বপন করা যায়। কোদাল দিয়ে আলের মাটি কুপিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে মাটি তৈরি করতে হবে।
বীজ বপন:
পালং শাকের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে রোপণ করা যায়। তবে সারিতে বপন করা সুবিধাজনক। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ২০ সে.মি. রাখতে হবে। একটি কাঠির সাহায্যে ১.৫-২.০ সে.মি. গভীর লাইন টেনে সারিতে বীজ বপন করে মাটি সমান করে দিতে হবে। বীজ বপনের পর অঙ্কুরোদগমে প্রায় ৭-৮ দিন সময় লাগে।
বীজ বপনের পরিমান:
প্রতি আলে বীজ দিতে হবে ৩৫-৪০ গ্রাম | প্রতি শতকে ১১৭ গ্রাম, প্রতি একরে ৯-১১ কেজি এবং প্রতি হেক্টরে ২৫-৩০ কেজি বীজ প্রয়োগ করতে হবে |
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে পালং শাক চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করা উচিত | এছাড়া, গোবর ৪০ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ৫০০ গ্রাম এবং এমপি ৫০০ গ্রাম নিতে হবে | ইউরিয়া ছাড়া সব সার জমির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। তবে গোবর জমি তৈরির প্রথম দিকে প্রয়োগ করাই উত্তম। ইউরিয়া সার চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ:
পালং শাকের জন্য প্রচুর জলের প্রয়োজন হয়। তাই সারের উপরিপ্রয়োগের আগে মাটির ‘জো’ অবস্থা বুঝে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। চারা রোপণের পর হালকা সেচ দেওয়া প্রয়োজন।
পরিচর্যা:
জমিতে আগাছা দেখা দিলেই তা তুলে ফেলতে হবে। গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য মাটিতে বেশি দিন রস ধরে রাখা এবং মাটিতে যাতে সহজে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে সেজন্য প্রতিবার জল সেচের পর আল/জমির উপরের মাটি আলগা করে দিতে হয়। পালংশাকে মাঝে মাঝে পিপঁড়া, উরচুঙ্গা, উইপোকা এবং পাতাছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। আক্রমণ হলে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হয়।
আরও পড়ুন - Pisciculture – গ্রামীণ যুবক ও মহিলাদের কর্মসংস্থান, আয়ের সুযোগ প্রচুর
ফসল সংগ্রহ:
বীজ বপনের এক মাস পর থেকে পালংশাক সংগ্রহ করা যায় এবং গাছে ফুল না আসা পর্যন্ত যে কোনো সময় সংগ্রহ করা যায়। প্রতি আলে ৮-১০ কেজি , প্রতি শতকে ২৮-৩৭ কেজি, প্রতি একরে ২৮০০-৩৮০০ কেজি, প্রতি হেক্টরে ৭-৯ টন শাক পাওয়া যায় |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Cherry Tomato Farming: চেরি টমেটো চাষে উপার্জন করুন লাখ টাকা, জেনে নিন কৌশল