এই 20টি ব্যবস্থা পোল্ট্রি খামারকে বার্ড ফ্লু থেকে নিরাপদ রাখবে! ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিটের জন্য ৫০% পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া যাবে, শীঘ্রই আবেদন করুন এই হাইব্রিড জাতের টমেটো 900 কুইন্টাল প্রতি হেক্টর ফলন দেবে দুধের সঠিক সময় বেছে নিলে উৎপাদন বাড়বে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
Updated on: 30 August, 2020 4:38 AM IST
kharif onion

পিঁয়াজ আমাদের রাজ্যে একটি অর্থকরী মশলা ফসল। প্রতিদিনের রান্নায় এর ব্যবহার ছাড়াও পিঁয়াজের অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। দেশের চাহিদার তুলনায় এ রাজ্যে ফসলের উৎপাদন অনেকটাই কম। উৎপাদন কম হওয়ার নেপথ্যে রোগবালাই একটি প্রধান কারণ। পিঁয়াজে বেগুনী ঝলসা রোগ, গোড়া ও কান্ড পচা, ডাউনি মিলডিউ ইত্যাদি রোগ দেখা যায়। এই রোগসমূহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ফলন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। তাই পিঁয়াজের কয়েকটি মারাত্মক রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

) বেগুনী ঝলসা রোগ -

বিজ্ঞানসম্মত নাম- অল্টারনেরিয়া পারি

সংক্ষিপ্ত বিবরণ- এটি একটি ছত্রাকঘটিত রোগ।

ক্ষতির লক্ষণ- পাতার উপরে ছোটো ছোটো লম্বাটে বা ডিম্বাকৃতি ঝলসানো দাগ দেখা যায়। দাগগুলি বাদামী হয় ও দাগের মাঝে সাদাটে রঙ দেখা যায়। পরে দাগগুলি একসঙ্গে মিশে গিয়ে বড় হয়ে বেগুনী রঙ ধারন করে। আর্দ্র আবহাওয়ায় দাগগুলির উপরে বাদামী-কালো রঙের ছত্রাকের রেণু জন্মায় ও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত পাতা গুলি ডগা থেকে শুকিয়ে যায়। ঝলসা দাগ ফুলের ডাটি বা কলিতেও দেখা যায়। পেঁয়াজের ফলন কমে যায়।

নিয়ন্ত্রণ-

  • ৫ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি দিয়ে প্রতি কেজি বীজ অথবা থাইরাম ৭৫ ডব্লু.পি. ২ গ্রাম/লিটার জলে গুলে ভালোভাবে বীজ শোধন করুন।
  • জমিতে ভাল জলনিকাশী ব্যবস্থা করতে হবে ও গাছ বেশী ঘন হয়ে গেলে তা তুলে ফেলতে হবে।
  • মেটালাক্সিল+ম্যাঙ্কোজেব ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
  • রোগের প্রকোপ বেশী হলে নিচের যে কোনো ওষুধ প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন-
  • হেক্সাকোনাজোল ৫ইসি ১.৫ মিলি; প্রোপিকোনাজোল ১ মিলি; ম্যাঙ্কোজেব ৭৫ডব্লু.পি. ২.৫ গ্রাম; ক্লোরোথ্যালোনিল ২ গ্রাম, ডাইফেনকোনাজোল ১ মিলি।

 

) পেঁয়াজের গোড়া কন্দ পচা -

বিজ্ঞানসম্মত নাম- ফুসারিয়াম অক্সিস্পোরাম

সংক্ষিপ্ত বিবরণ- এটি পেঁয়াজের একটি ছত্রাকঘটিত মাটিবাহিত রোগ।

ক্ষতির লক্ষণ- গাছ বড় হলে কন্দ তৈরি হবার পরপরই গোড়ায় পচন ধরে। গাছের পাতা শুকিয়ে ঝুলে পড়ে। শিকড় গোলাপি রঙের হয় ও পচে যায়। গাছের গোড়া খুড়লে রস দেখা যায়। কন্দ নরম হয়ে ধীরে ধীরে পচে যায়।

নিয়ন্ত্রণ-

  • শস্য পর্যায় মেনে চাষ করতে হবে।
  • জমি তৈরির সময় ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ও নিমখোল জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
  • কারবেন্ডাজিম ১ গ্রাম বা ক্লোরোথ্যালোনিল ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
  • কপার অক্সি-ক্লোরাইড ৪ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

) পেঁয়াজের তুলো (ডাউনি মিলডিউ) রোগ -

বিজ্ঞানসম্মত নাম- পেরোনোস্পোরা ডেসট্রাক্টর

সংক্ষিপ্ত বিবরণ- এটি বীজবাহিত ছত্রাকঘটিত রোগ। রোগাক্রান্ত কন্দ থেকে উৎপন্ন গাছ বেঁটে, বিকৃত ও ধূসর সবুজ রঙের হয়।

ক্ষতির লক্ষণ- শুষ্ক আবহাওয়াতে পাতার উপর একটি শুকনো দাগ দেখা যায়। বাতাসের আর্দ্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগ বিস্তার লাভ করে। ধীরে ধীরে দাগগুলি বাড়তে বাড়তে সমগ্র পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। পুরোনো পাতা গুলিই প্রথমে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, পরে পাতার গোড়ায় পেঁয়াজের শল্কপত্রেও এই রোগের প্রভাব দেখা যায়। স্বাভাবিকের তুলনায় ছোটো কন্দ গঠিত হয়।

নিয়ন্ত্রণ-

  • জমিতে ভাল জলনিকাশী ব্যবস্থা করতে হবে।
  • মেটালাক্সিল+ম্যাঙ্কোজেব ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
Onion cultivation

) গুদামজাত পেঁয়াজ পচা রোগ -

বিজ্ঞানসম্মত নাম- অ্যাস্পারজিলাস নাইজার

সংক্ষিপ্ত বিবরণ- এটি ছত্রাকঘটিত রোগ। আক্রান্ত পাতায় জলে ভেজা দাগ দেখা যায়। সল্কপত্রের মধ্যবর্তী স্থানে সাদা ছত্রাক জন্মায় এবং পরে কালো পাউডারের মতো আকার ধারণ করে।

ক্ষতির লক্ষণ- পেঁয়াজ গুদামে তোলার পর থেকে পেঁয়াজের পচার লক্ষণ শুরু হয়। পেঁয়াজের খোসার স্তরে এই ছত্রাকটি বড়ো হয় এবং সময়ের সাথে সাথে পরিমাণে বাড়ে। শল্কপত্রের উপরের স্তর বিবর্ন হয়ে যায় ও পেঁয়াজের স্বাদ বিস্বাদ হয়। তখন সেটি বাজারে বিক্রির অযোগ্য হয়ে ওঠে।

নিয়ন্ত্রণ-

  • পেঁয়াজের তুলো

    আগে সাধারণ লবন ১০০ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
  • পেঁয়াজ তোলা, পরিবহন ও গুদামজাত করার সময় পরিচ্ছন্নতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ক্ষত সৃষ্টি হওয়া চলবে না।
  • গুদামজাত করার আগে যথাযথ প্যাকিং দরকার। ০-১° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ও ৭০-৭৫% আপেক্ষিক আর্দ্রতায় গুদামে সংরক্ষণ করতে হবে।

) হলদে কুটে রোগ -

সংক্ষিপ্ত বিবরণ- মোজাইক ভাইরাসের কারণে এই রোগ হয়। এই রোগ জাবপোকার সাহায্যে ছড়ায়।

ক্ষতির লক্ষণ- পেঁয়াজের পাতা এবড়ো-খেবড়ো হয়ে যায়। হলুদ সবুজ লম্বাটে দাগ দেখা যায়। পরে গোটা পাতা হলদে হয়ে যায়।

নিয়ন্ত্রণ-

  • কুটে রোগে আক্রান্ত কন্দ কখনই ব্যবহার করা চলবে না। রোগ মুক্ত কন্দ লাগাতে হবে।
  • জাবপোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য কীটনাশক ইমিডাক্লোপ্রিড ১মিলি/৫ লিটার বা ডাইমিথোয়েট ৩০% ১.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।

) চারার ধসা রোগ -

সংক্ষিপ্ত বিবরণ- এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ।

ক্ষতির লক্ষণ- বীজতলায় কচি চারার ডগা অংশ হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায়। চারা কমজোরি হয় ও পরবর্তীতে চারা মারা যায়।

নিয়ন্ত্রণ-

  • এই রোগ দেখা মাত্র স্ট্রেপ্টোসাইক্লিন দ্রবন ১ গ্রাম ১০ লিটার জলে গুলে আঠার সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

নিবন্ধ – অর্ক সামন্ত এবং প্রত্যুষা বক্সী

Image source - Google

Related link - (Pest management) বর্ষাকালীন পেঁয়াজে কীট আক্রমণ ও তার নিয়ন্ত্রণ

(Chilli farming in scientific way) আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লংকা চাষ করে করুন অতিরিক্ত আয়

English Summary: Remedy for various diseases including root rot and tuber rot of Kharif onion
Published on: 30 August 2020, 04:38 IST