গোলাপ অত্যন্ত সুন্দর ও লাবন্যময় একটি ফুল। এটি শীতকালীন ফুল । তবে বর্তমানে প্রায় সারা বছরই গোলাপ চাষ করা যায়। গোলাপকে বলা হয় ফুলের রানী। গোলাপ পছন্দ করেনা এমন কেউ নেই। গোলাপ ফুল আতর ও সুগন্ধি শিল্পে ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
মাটি ও জলবায়ু(Soil & climate):
গোলাপ শীতকালীন ফুল। উষ্ণ আবহাওয়ায় এর ফলন ভালো হয় না। গোলাপ চাষের জমি সুনিষ্কাশিত হতে হবে। সাধারনত উর্বর দোআঁশ মাটি গোলাপ চাষের জন্য উত্তম। সূর্যের আলোর উপর গোলাপের ফলন ও গুনগত মান নির্ভর করে । গোলাপ গাছের জন্য সকালের রোদ বেশি উপকারী।
চারা রোপনের সময়ঃ
সাধারনত অক্টোবর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত গোলাপের চারা রোপন করার উপযুক্ত সময়।
বংশ বিস্তারঃ
গোলাপ সাধারনত কলমের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে থাকে। বীজের মাধ্যমে ও বংশ বিস্তার হয়ে থাকে তবে সেটা শুধুমাত্র প্রজনন এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গুটি কলম ও চোখ কলমের মাধ্যমে গোলাপ গাছ বংশ বিস্তার করে থাকে। বাণিজ্যিক ভাবে কাটা ফুলের উৎপাদন করার জন্য চোখ কলম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর জন্য বাছাই কৃত জাতটি নিয়ে তার চোখ একটি সুবিধা অনুযায়ী আদি জোড় এর উপর স্থাপন করতে হবে। এই আদি জোড়ের কাটিং গ্রীষ্ম কালের শেষে তৈরি করা হয়ে থাকে। এটি নার্সারিতে সারি করে লাগানো হয় । প্রতিটি সারির দূরত্ব থাকে ২৫-৩০ সেমি। প্রায় ৬ মাস পর এই কাটিং থেকে বাডিং এর জন্য উপযোগী চারা তৈরি হয়ে থাকে।
জমি তৈরি ও বেড তৈরিঃ
গোলাপ চাষে জমি খোলা মেলা ও আলো বাতাসপূর্ণ হতে হবে। জমি সমতল হতে হবে ও উচু হতে হবে। জমি গভীর ভাবে চাষ ও মই দিয়ে কুপিয়ে মাটি সমতল করে দিতে হবে। মাটি নরম ও ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। জমি থেকে আগাছা, ইটের টুকরা ও অন্য কোন আবর্জনা থাকলে তা ফেলে দিতে হবে। উন্নত জাতের চাষ করতে হলে ও বড় বাগান হলে বর্ষাকালের আগে মে মাস থেকে জুন মাসের মধ্যেই বেড তৈরি করতে হবে। এমন ভাবে বেড তৈরি করতে হবে যেন বেডের খৈল ও অন্যান্য জৈব উপাদান ভালো ভাবে পচে অক্টোবর মাসে গাছ লাগানোর উপযোগী হয়ে উঠে। বেডের আশে পাশে যাতে জল না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন -Dillenia Indica cultivation: জেনে নিন চালতা চাষের সহজ ও সঠিক পদ্ধতি
চারা রোপনঃ
গোলাপের চারা পলিথিনের ব্যাগে থাকে। তাই চারা রোপন করার সময় এই পলিথিন ব্যাগটি ছিড়ে ফেলে দিতে হবে। তারপর গর্তের মধ্যে চারাটি রোপন করতে হবে। চারা রোপন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে পলিথিনে রাখা অবস্থায় এটি যতটুকু মাটির নিচে ছিল গর্তে লাগানোর পরে ও যেন ঠিক ততটুকু মাটির নিচে থাকে। চারার গোড়া যেন সোজা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
চারা গাছ রোপনের পর গর্তে সার প্রয়োগ করতে হবে। ভালো ফলন পেতে হলে নিয়মিত সার প্রয়োগ করা জরুরি। গর্তের মধ্যে পচা গোবর ও ভিটির বালি ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়া ভালো দো আuশ মাটি গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে শিকড়ের আশে পাশে ছিটিয়ে দিতে হবে। গোড়ার মাটি ভালো করে চেপে দিতে হবে। প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে। চারা লাগানোর পর প্রথম কয়েকদিন তীব্র রোদ থেকে গাছ কে রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে গাছকে ছায়ায় রাখতে হবে।
আগাছা দমনঃ
ভালো ফলন পেতে হলে নিয়মিত আগাছা দমন করতে হবে। গাছ যদি পুরনো হয় তাহলে কচি ডগা, মরা ডাল পাতা ইত্যাদি ধারালো ছুরি দিয়ে ছেটে দিতে হবে। ছাটাই এর মাধ্যমে মরা ডাল পাতা , দুর্বল ডাল পাতা অপসারন হয়। এত গাছের কাঠামো ভালো থাকে।
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ
গাছে নিয়মিত জল সেচ দিতে হবে। পুরনো গাছ যদি এক স্থান থেকে উঠিয়ে নিয়ে অন্য স্থানে লাগানো হয় তাহলে গর্তে লাগানোর পর সেখানে প্রচুর জল সেচ দিতে হবে। তবে গোলাপ বাগানে জল যেন জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে অতিরিক্ত জল বের হয়ে যাওয়ার জন্য।
রোগ দমন ব্যবস্থাপনা(Disease management system):
গোলাপ গাছে কালো দাগ রোগ, ডগা শুকানো রোগ, পাউডার মিলডিউ রোগ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। কালো দাগ রোগ ও ডগা শুকনো রোগ দেখা দিলে জমিতে ১.৫ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম একলিটার জলের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। পাউডার মিলডিউ রোগ দেখা দিলে সালফার জাতীয় ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।
ফুল সংগ্রহঃ
জমিতে চারা লাগানোর ৮০-১১০ দিনের মধ্যেই গাছে কুড়ি আসা শুরু করে। এই পর্যায়ে ফুলের পাপড়ি মেলে না। এই অবস্থায় ফুল কাটা উচিত। সদ্য ব্যবহার করার জন্য সব সময় অর্ধেক ফোটা ফুলের কুড়ি কাটা উচিত। লম্বাদন্ড সহ এবং কয়েকটি পাতা সহ ধারালো ছুরি দিয়ে ফুল কাটতে হয়। জাত ভেদে গোলাপের ফলন ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারনত প্রতি বছর গাছ প্রতি ১৫-৩০ টি ফুল উৎপন্ন হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন -Weed management methods: দেখে নিন ক্ষেতের আগাছা দমন করার উপায়