কামরাঙ্গা (Chinese gooseberry )এর বৈজ্ঞানিক নাম: Averrhoa carambolaLinn । ভিটামিন সি যুক্ত টক-মিষ্টি স্বাদের একটি অতি পরিচিত ফল কামরাঙ্গা।এই ফলটি খেতে অনেকেই খুব পছন্দ করে। পাকা কামরাঙ্গা দিয়ে আচার, সস, জেলি, তৈরি করা হয়। গ্রাম বাংলায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কামরাঙ্গা গাছ দেখা যায়। তবে থাই জাতের কামরাঙ্গার স্বাদ মিষ্টি। এই মিষ্টি কামরাঙ্গা অতি সহজেই বাড়ির ছাদে টবে চাষ করা যায়। এই জাতের কামরাঙ্গার ফলন বেশি। একটি থাই মিষ্টি কামরাঙ্গার কলমের চারা থেকে মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়। সারা বছরই কম-বেশী ফল গাছে থাকে।
কামরাঙ্গার পুষ্টিগুণ (Starfruit Benefits) -
প্রতি ১০০ গ্রাম কামারাঙ্গার খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে -
খাদ্যশক্তি- ৩১ কিলোক্যালরি, শর্করা- ৬.৭৩ গ্রাম, চিনি- ৩.৯৩ গ্রাম, খাদ্যআঁশ- ২.৮ গ্রাম, চর্বি- ০.৩৩ গ্রাম, আমিষ- ১.০৪ গ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড- ০.৩৯১ মিলিগ্রাম, ফোলেট- ১২ আইইউ, ভিটামিন সি- ৩৪.৪ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম- ১৩৩ মিলিগ্রাম, জিংক- ০.১২ মিলিগ্রাম, থায়ামিন- ০.০১৪ আইইউ, রিবোফ্লেভিন- ০.০১৬ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন- ০.৩৬৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬- ০.০১৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই- ০.১৫ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম- ৩ মিলিগ্রাম, আয়রন- ০.০৮ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম- ১০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস- ১২ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ- ০.০৩৭ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম- ২ মিলিগ্রাম।
আসুন জেনে নেই কামরাঙ্গা চাষের পদ্ধতি (Cultivation Method) -
চারা সংগ্রহ:
প্রথমেই একটি অরিজিন্যাল থাই মিষ্টি কামরাঙ্গা কলমের চারা সংগ্রহ করতে হবে । চারাটি অবশ্যই কলমের হতে হবে । অন্যথায় টবে বীজের চারায় ফল পাওয়া এত সহজ হবে না ।
কামরাঙ্গা চাষে মাটি:
বেলে মাটি ছাড়া যেকোন মাটিতে কামরাঙ্গার চাষ করা যায়।
টব সংগ্রহ ও টবের মাটি তৈরি:
ছাদে কামরাঙ্গার চারা লাগানোর জন্য ২০ ইঞ্চি কালার ড্রাম বা টব সংগ্রহ করতে হবে। ড্রামের তলায় ৩-৫ টি ছিদ্র করে নিতে হবে, যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে। টব বা ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।
এবার ২ ভাগ বেলে দোআঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ৪০-৫০ গ্রাম টি,এস,পি সার, ৪০-৫০ গ্রাম পটাশ সার, একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টব ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ১০-১২ দিন। অতঃপর মাটি কিছুটা কুঁড়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন এভাবেই রেখে দিতে হবে।যখন মাটি ঝুরঝুরে হবে তখন একটি সবল সুস্থ কলমের চারা উক্ত টবে রোপন করতে হবে। সেই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উঁচু করে দিতে হবে এবং মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে।
সার প্রয়োগ:
তিন ভাগের দুই ভাগ মাটি এবং এক ভাগ পঁচা গোবর সার, ১০০গ্রাম টি,এস,পি, ১০০গ্রাম পটাশ, ২০০গ্রাম হাড়ের গুড়া, ৫০গ্রাম সরিষার খৈল একত্রে মিশিয়ে পানিতে ভিজিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ:
চারা লাগানোর পর প্রথম দিকে একটু অল্প পরিমানে পানি দিতে হবে। গাছ আস্তে আস্তে বড় হলে পানির পরিমান বাড়াতে হবে । বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে ছাদের গাছে অনেক বেশী পানি দিতে হয় ।
কামরাঙ্গা চাষে পরিচর্যা:
১.গাছ লাগানোর ৪/৫ মাস পর থেকে নিয়মিত ২৫-৩০ দিন অন্তর অন্তর সরিষার খৈল পচা পানি প্রয়োগ করতে হবে।
২.সরিষার খৈল ১০ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সেই পচা খৈলের পানি পাতলা করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে।
৩.এক বছর পর টবের আংশিক মাটি পরিবর্তন করে দিতে হবে। ২ ইঞ্চি প্রস্থে এবং ৬ ইঞ্চি গভীরে শিকড়সহ মাটি ফেলে দিয়ে নতুন সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে তা ভরে দিতে হবে।
৪.গাছের মরা ডাল কেটে দিতে হবে। অধিক ফলন পেতে হলে প্রতিবছর একবার ডালগুলি কেটে গাছকে ছোট রাখতে হবে। ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর টবের মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিতে হবে।
আরও পড়ুন - শাখা কলম পদ্ধতিতে চারা তৈরির মাধমে চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষ (Chrysanthemum Flower)