নারকেল (Coconut tree) গাছে পরিমাণ মত পুষ্টির যোগান দিলে যে ফলন বাড়তে তাতে কোন সন্দেহ নেই। শুধু তাই নয়, কচি ফল বা মুচি ঝরে যাওয়া সমস্যারও সমাধান হবে; সমাধান হবে দেরীতে ফুল-ফল আসার সমস্যা; গাছের পাতা ধনুকের মত বেঁকে যাওয়ার সমস্যা। নারকেল গাছে বেশি সংখ্যায় স্ত্রী ফুল আনতে হলে ঠিকমতো নাইট্রোজেন (Nitrogen) সার দিতে হবে আর শাঁস ও তেলের পরিমাণ বাড়াতে পটাশ সারের মাত্রা সঠিক হওয়া দরকার।
গৌণ-খাদ্যের প্রয়োগ -
মাটিতে গৌণ-খাদ্য যেমন জিংক বা দস্তা, বোরণ বা সোহাগা এবং ম্যাগনেসিয়ামও ঠিকমতো থাকতে হবে বা মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈবসার হিসাবে কম্পোস্ট, খামার-পচা সার, সবুজপাতা সার, খোল দেওয়া যেতে পারে। ৪ বছর বা ততোধিক বয়স্ক প্রতিটি গাছে প্রতি বছর ১০০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০০ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট এবং ২০০০ গ্রাম মিউরিয়েট অব পটাশ দিতে হবে। তিন বছরের গাছে পূর্ণমাত্রার সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং ২ বছরের গাছে এক তৃতীয়াংশ সার প্রয়োগ করতে হয়। মোট সারকে দু'দফায় ভাগ করে দেওয়া হয় - প্রথম দফায় বর্ষার শুরুতে এবং দ্বিতীয় দফায় বর্ষার শেষে।
যেহেতু নারকেল গাছের গোড়ার চারপাশের ২ মিটার এলাকার মাঝেই শতকরা ৮০ ভাগ শিকড় থাকে, তাই এর মধ্যেই খাবার দিতে হবে। গাছের গোড়ার কিছুটা ছেড়ে গাছকে ডাইনে বা বামে রেখে কোদালে মাটির চাপড়া তুলে সারের মিশ্রণের খানিকটা দিয়ে ওই মাটি দিয়েই চেপে দিলে ভালো। গাছকে সামনে বা পিছনে রেখে কোদাল চালালে শিকড় কেটে যাবার সম্ভাবনা থাকে বলে তা করা থেকে বিরত হন নারকেল চাষী; যদিও দেখা গেছে উপরের ৩০ সেন্টিমিটারের মধ্যে কোনো ভাল শিকড় থাকে না। যাইহোক 'বিড়াল-পায়খানা' অনুসরণে সার দিলে (এক কোদাল মাটি তুলে সার দিয়ে ওই মাটিই চাপা দেওয়া) ভালো ফল পাওয়া যায় বলে দেখা গেছে। জমিতে সার দেবার পর হাল্কা সেচ দিতে হবে।
কীট নিয়ন্ত্রণ (Pest Management) –
নারকেলের প্রধান শত্রু সাদা মাছি। পাতার নিচের অংশ থেকে রস শুষে খেয়ে ফসলের প্রভূত ক্ষতিসাধন ছাড়াও এরা অনর্গল ‘হানি ডিউ’ অথবা আঠাল মধুর ন্যায় মিষ্ট তরল নিঃসরণ করতে থাকে। এই ‘হানি ডিউ’ আশেপাশের এবং নিচের পাতায় পড়ার পর তার উপর ‘ব্ল্যাক শুটি মোলড’ বা কালো রঙের ছোপ বিশিষ্ট ছত্রাক বাসা বাঁধে। এর ফলে গাছের পাতার উপরিভাগ সম্পূর্ণ কালো আস্তরণে ঢেকে যায় এবং তা গাছের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় বাঁধা প্রদান করে।
নারকেলের সাদা মাছির পূর্ণাঙ্গ দশা সাধারণ সাদা মাছির তুলনায় ৩ গুণ (প্রায় ২.৫ মিলিমিটার) বড় হয় এবং এরা বেশ অলস প্রকৃতির। একটি পূর্ণাঙ্গ মাছির ডানার রঙ সাদা হয় এবং অগ্রভাগের ডানায় হালকা বাদামী রঙের ছোপ দেখতে পাওয়া যায়। পুরুষ মাছির দেহের নিম্নভাগে সাড়াশির ন্যায় গঠন দেখতে পাওয়া যায়।
নিয়ন্ত্রণ কৌশল:
১. যেসব পাতায় কালো ছোপ বা ‘Black Sooty Mould’ রয়েছে, সেখানে ১% স্টার্চের দ্রবণ স্প্রে করুন। স্টার্চ শুকিয়ে গেলে তা পাঁপড়ের মত কালো ছোপ গুলি সমেত উঠে আসবে।
২. বাগানে প্রতি নারিকেল গাছে হলুদ রঙের আঠালো ফাঁদ/Sticker ব্যবহার করুন। যেকোনো নিকটবর্তী সার-কীটনাশকের দোকানে এটি পাওয়া যায়।
৩. বাগানে বন্ধু পোকা/natural predator নিয়ে আসুন।
৪. অযাচিত ভাবে রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ করুন। প্রকোপ খুব বেশি হলে পাতায় এবং গাছের কাণ্ডে ০.৫% নিম তেলের মিশ্রণ স্প্রে করতে পারেন।
৫. যেহেতু, এটি নতুন ধরনের একটি কীট, তাই কোনভাবেই একই কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না। একই রাসায়নিক বারংবার ব্যবহার করলে এরা সহজেই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। তার ফলে পরবর্তীকালে তাদের নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
যদি, নিম তেল প্রয়োগে একান্তই সুফল না পাওয়া যায়, তবে এই নিম্নলিখিত, রাসায়নিকের মিশ্রণ যেমন, Acephate ৫০ + Imidacloprid ১.৮ SP (১ মিলিলিটার/লিটার জলে), Buprofezin ১৫ + Acephate ৩৫ WP (১ মিলিলিটার/ লিটার জলে) অথবা Thiamethoxam ১২.৬ + Lambda cyhalothrin ৯.৫ ZC (০.৫ মিলিলিটার/ লিটার জলে) আঠা সহযোগে ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুন - অনুর্বর জমিতে কাশ্মীরি আপেল কুল চাষ করে আয় করুন অতিরিক্ত অর্থ (Kashmiri Apple Ber)