পেঁপে একটি ফল যা ভারতীয়দের কোনও বিশেষ পরিচয়ের প্রয়োজন হয় না। পুষ্টির ক্ষেত্রে পেঁপে সর্বাগ্রে রয়েছে। পেঁপে ভিটামিন এ এর একটি সমৃদ্ধ উত্স, যা শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও প্রয়োজনীয়। কেবল ফলই নয় সবজি হিসেবেও এর ব্যপক চাহিদা রয়েছে, পেঁপে অত্যান্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ঔষধি গুণ সম্পন্ন। কাঁচা পেঁপেতে পেপেইন নামের উৎসেচক আছে যা আমাদের খাবার হজম করতে সহায়তা করে।
পেঁপের পুষ্টি এবং ঔষধি গুণাবলী -
পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ এবং ভিটামিন এ, বি, বি ২ এবং সি রয়েছে। সবুজ পেঁপে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং আয়রন সমৃদ্ধ। পেঁপের পাতায় অ্যালকালয়েড কার্পাইন থাকে। পেঁপে আয়ুর্বেদিক চিকিত্সায় ব্যবহৃত হয়। ব্রণ এবং স্কিনের অন্যান্য চিকিৎসার জন্য পেঁপে ব্যবহার করা হয়। সোরিয়াসিসের জন্য আয়ুর্বেদিক চিকিত্সায় এটি ব্যবহৃত হয়।
পেঁপের অনেক জাত রয়েছে। কিন্তু পেঁপের কোন জাতের চাহিদা বেশী তা জানেন কি? আমরা আজ এই নিবন্ধে আপনাদের জানাতে চলেছি পেঁপের কোন জাতটি চাষ কৃষকদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক।
রেড লেডি হাইব্রিড পেঁপে জাতের বৈশিষ্ট্যঃ (Characteristics of Red Lady Hybrid Papaya variety) -
এটি তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির পেঁপে। রেডলেডি জাতের প্রত্যেকটি গাছে পেঁপে ধরে । রেডলেডি জাতের পেঁপে গাছ সর্বোচ্চ ১০’ ফিট হয়। গাছের উচ্চতা ৬০-৮০ সেঃ মিঃ হলে ফল ধরা শুরু হয়। প্রতিটি গাছে ৫০-১২০ টি পর্যন্ত ফল ধরে, ৫-৬ মাসের মধ্য ফুল আসে এবং প্রথম ফল পাওয়া যায় ৭-৯ মাসের মধ্যে। এই জাতের পেঁপে গুলি বেশ বড়, ফলের রং লাল-সবুজ, এক একটি ফলের ওজন ১.৫ থেকে ২ কেজ, মাংস বেশ পুরু, গাঢ় লাল, স্বাদে বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধযুক্ত। কাঁচা ও পাকা উভয়ভাবে বাজারজাত করা যায়। পাকা অবস্থায় সহজে নষ্ট হয় না বলেই, দূর দুরান্তে বাজারজাত করা যায়। এই জাতের পেঁপের রিং স্পট ভাইরাস রোগ সহ্য ক্ষমতা আছে। এই জাতের গাছের জীবন কাল ২ বছরের বেশী।
চাষ পদ্ধতি (Cultivation Method)-
(১) বীজের হারঃ-
প্রতি গ্রামে বীজের সংখ্যা ৬০-৭০টি। হেক্টর প্রতি ৭০-১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন। সে হিসেবে ৩০০০-৩২০০ চারা দিয়ে ১ হেক্টর জমিতে পেঁপে চারা লাগানো যায়।
(২)চারা তৈরিঃ-
বীজ থেকে বংশ বিস্তার করা যায়। বীজের প্যাকেট কেটে ২ ঘন্টা রোদে শুকানোর পর ২ ঘন্টা রোদে শুকানোর পর ঠান্ডা জায়গায় রেখে ঠান্ডা করে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা জলে ভেজানোর পর পলেথিন ব্যাগে চারা তৈরি করতে হবে। পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপনের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ৫X৬ সেঃ মিঃ আকারে ব্যাগে সম পরিমাণ বেলে দোয়াশ মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে, ব্যাগের তলায় ২-৩ টি ছিদ্র করতে হবে। তারপর এতে সদ্য সংগৃহীত বীজ হলে একটি এবং পুরাতন বীজ হলে ২টি বীজ বপন করতে হবে। ১টি ব্যাগে এক এর অধিক চারা রাখা উচিৎ নয়।
(৩) চারা রোপণ-
১.৫ থেকে ২ মাস বয়সের চারা রোপন করা হয়। ২ মিটার দূরে দূরে ৬০X৬০X৬০ সেঃ মিঃ আকারে গর্ত করে রোপনের ১৫ দিন পূর্বে গর্তের মাটির সার মিশাতে হবে। জমির জল নিষ্কাশনের জন্য ২ সারির মাঝখানে ৫০ সেঃ মিঃ নালা রাখতে হবে।
(৪) সারের পরিমানঃ-
প্রতি পেঁপে গাছে নিন্মরূপ সার ব্যবহার করতে হবে।
(৫) রোপনের সময়ঃ-
চারা লাগানোর পর নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ হবে। শেষ ফল সংরহের পূর্বেও সার প্রয়োগ করতে হবে।
(৬) অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ-
বাগান সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গাছের গোড়া থেকে আগাছা তুলে ফেলে দিতে হবে। গাছের গোড়া মাটি কোদাল দিয়ে হালকা করে দিতে হবে। গাছে অতিরিক্ত ফল ধরলে কিছু ফল পেরে নিয়ে হালকা করে দিলে, বাকি ফল গুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। পেঁপে গাছে বিভিন্ন হরমোন প্রয়োগ করে বেশ সুফল পাওয়া যায়।
(৭) ফল চয়ন -
পেঁপে গাছে সাধারণত ৫-৬ মাসের মধ্য ফুল আসে এবং প্রথম ফল পাওয়া যায় ৭-৯ মাসের মধ্যে। পুষ্ট হওয়ার সময় কোন কোন ফলে হলুদ রং ধারন করবে। পুষ্ট ফলে কিছু দিয়ে খোঁচা দিলে হালকা জলের মত তরল আঠা বের হবে। অপুষ্ট ফল থেকে দুধের মত ঘন আঠার মত হবে। পরিপক্ক ফলের ওজন ২-৬ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। উচ্চতা কম থাকার কারণে, নীচ থেকে ফল সহজেই সংগ্রহ করা যেতে পারে। একটি গাছ থেকে ৫০ টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। বাজারে এর দাম প্রতি কেজি ৩০ টাকা। বিশ্বস্ত নার্সারি বা সরকারী মালিকানাধীন খামার থেকে চারা কেনা যায়। বা সংকর বীজ চাষের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
Image source - Google
Related link - (Unconventional vegetable zucchini) অপ্রচলিত সবজী জুকিনি-র চাষে লাভ ৩ লক্ষ পর্যন্ত টাকা