চাল কুমড়ো এক অতি জনপ্রিয় সবজি | গ্রামে ঘরের চালে এ সবজি ফলানো হয় বলে এটি চাল কুমড়া নামে পরিচিত। তবে জমিতে (মাচায়) এর ফলন বেশি হয়। কচি চাল কুমড়ো সবজি হিসাবে খাওয়া যায় | শুধু চাল কুমড়াই নয় এর কচি পাতা ও ডগা খাওয়া যায়। চাল কুমড়োয় বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, আমিষ, শর্করা, চর্বি ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। চাল কুমড়ো খুব সহজেই চাষ (Chal kumro cultivation)করা যায়,
মাটি(Soil):
প্রায় সব ধরনের মাটিতে চাল কুমড়া চাষ করা যায়। তবে চাল কুমড়া চাষের জন্য দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটি উত্তম।
বীজের পরিমাণ:
প্রতি শতাংশ জমিতে প্রায় ১৫-২০ গ্রাম বীজের দরকার হয়।
বীজ থেকে চারা তৈরী:
পলিব্যাগে চারা তৈরি করা সবচেয়ে উত্তম। সে ক্ষেত্রে চালকুমড়ার বীজ থেকে চারা তৈরির সময় প্রথমে বীজ গুলোকে ১২ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর একটি বীজতলা তৈরি করতে হবে। এর জন্য ৬০ ভাগ দোআঁশ মাটি ৪০ ভাগ শুকনো গোবর ও অল্প পরিমাণ ছাই মিশিয়ে বীজতলাটি তৈরি করে নিন। এবার ভেজানো বীজগুলোকে নতুন তৈরি করা বীজ তলায় বসিয়ে একটি পাটের ছালা অথবা সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন।
আরও পড়ুন -Vertical Gardening: এই বর্ষায় বাড়ির ছাদে কোন গাছ রোপন শ্রেয় বা কিভাবে হবে তাদের যত্ন?
এরপর কিছুদিন ওই কাপড় বা ছালার উপর কিছু কিছু করে জল দিয়ে যান। ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই বীজ গুলো অঙ্কুরিত হবে। এবার নতুন গজানো বীজ গুলো তুলে আপনার তৈরি করা পলি ব্যাগ গুলোতে স্থানান্তর করুন। পলিব্যাগের মাটি ও দোয়াশ মাটি এবং গোবর এর মিশ্রণ দিয়ে তৈরি হতে হবে। পলিব্যাগে থাকাকালীন ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ছোট চারাগুলো রোপণের জন্য উপযুক্ত হয়ে যাবে।
জমি তৈরী:
ঘরের কোণে মাদা তৈরি করে তাতে ৩-৪টি বীজ বপন করতে হবে। এবং চারা গজালে ও একটু বড় হলে বাঁশের কঞ্চি বা পাট কাঠি চারার গোড়ায় পুঁতে দিয়ে চারাগুলো চালায় তুলে দিতে হবে। আর জমিতে চাষ করলে জমি ভাল করে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। তারপর জমিতে মাদা তৈরি করে ৪-৫টি বীজ বপণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন বৃষ্টির বা বন্যার জল জমে না থাকে।এরপর ২.৫ ফুট চওড়া ২ ফুট গভীর গর্ত তৈরি করতে হবে। ২ থেকে ২.৫০ মিটার দূরে দূরে মাদা তৈরি করে বীজ বুনতে হবে।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
কুমড়ো গাছে সবসময় জৈব সার অর্থাৎ বাড়ির তৈরী জৈব সার প্রয়োগ করা ভালো | এতে ফলন ভালো হয় | তরকারীর খোসা, ময়লা আবর্জনা, হাস-মুরগীর বিষ্ঠা, কাঠ-কয়লা-ছাই ইত্যাদি। এছাড়াও অজৈব সার হিসেবে ইউরিয়া, টিএসপি, মিউরেট অব পটাশ, জিপসাম, জিংক অক্সাইড ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে |
পরিচর্যা:
প্রত্যেক মাদায় সুস্থ সবল ২-৩ চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে। নিয়মিত বিশেষ করে গাছের গোড়ার আগাছাগুলো পরিষ্কার ও গোড়ার মাটি কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে। জমির মাটিতে রস না থাকলে সেচ দিতে হবে। বর্ষার জল নিকাশের জন্য নালার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে মাচা তৈরি করে দিতে হবে।
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
চাল কুমড়া গাছে বিভিন্ন পোকার আক্রমন হয়। এসকল পোকার মধ্যে মাছি পোকা সবচেয়ে ক্ষতিকর। মাছি পোকার আক্রমনে চালকুমড়ার ফলন মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হয়। এই পোকা প্রথমে চাল কুমড়ার ফুলের মধ্যে ডিম পাড়ে, পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের ভেতর খেয়ে ফল নষ্ট করে ফেলে। এ পোকার জন্য ফলন নষ্ট হয় ৫০-৬০ ভাগ। এ পোকা মারার ফাঁদ তৈরি করা এবং বিষটোপ ব্যবহার করা |
ফসল সংগ্রহ:
চাল কুমড়া গাছ লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করে। চাল কুমড়া সবজি হিসেবে খেতে হলে সবুজ হুল যুক্ত ৪০০-৬০০ গ্রাম হলে তুলতে হবে। এই সবজি চাষে কৃষকদের আর্থিক লাভের সাথে খাদ্যেরও যোগান হয়ে যায় |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -Paddy and Fish Farming: বর্ষায় ধানের জমিতেই মৃগেল কাতলার লাভজনক চাষ করুন