শীতকালীন ফুল চাষ – শীত মানেই প্রাণের ছোঁয়া। হিমের কনকনে ঠাণ্ডা আর চারিদিক কুয়াশাচ্ছন্ ঢাকা প্রকৃতি, সঙ্গে পুলিপিঠে। যেন এক অপূর্ব পরিবেশের মেল বন্ধন। তার সঙ্গে বাড়তি পাওনা বাহারি রঙের শীতকালীন ফুল। এমন কোন মানুষ নেই যে ফুল ভালবাসে না।
ফুল হল পবিত্রতা ও ভালবাসার প্রতীক। শীতকালীন ফুল লাগানোর উপযুক্ত সময় হল নভেম্বর মাস। শীতকালে বিভিন্ন ধরণের নাম না জানা, রঙিন ফুল ফোটে। অনেকেই টবে বা বাগানে রঙিন ফুল লাগাতে পছন্দ করেন। ফুল প্রেমিকদের জন্য রইল কিছু রঙিন শীতকালীন ফুল এর বৈশিষ্ট।
কি কি ফুল চাষ করবেন শীত কালে ?
ডালিয়া ফুল (Dahlia flowers)
শীতকালীন ফুল এর মধ্যে ডালিয়া খুব বিখ্যাত। বর্ণ বৈচিত্র, বড় আকারের ও নিবাসের জন্য এটি জনপ্রিয়। ডালিয়া গাছের উচ্চতা ১০০ থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ডালিয়া বিভিন্ন রঙের হতে পারে। সিঙ্গেল, ডবল শো ফ্যান্সি, রেড মনার্ক, ক্যাকটাস, স্টার প্রভৃতি উন্নত মানের ডালিয়া। এই ফুলগুলি সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে।
বাড়ির টবে ডালিয়া ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ
বাড়িতে ডালিয়া চাষের জন্য একটি বড় আকারের টব জোগাড় করতে হবে।
দোআঁশ মাটি এই ফুল চাষের জন্য খুবই ভালো।
ছোট টব হলে ডালিয়ার কাটিং চারা কোন নার্সারি থেকে নিয়ে এসে মাটিতে পুঁতে দিতে হবে।
গাছের সাথে কোনো শক্ত কাঠি বেঁধে দিন। যাতে গাছ নুইয়ে না পড়ে।
কিছু দিন অন্তর অন্তর প্রয়োজন মতো গাছের গোড়ায় সার অর্থাৎ সরষের খোল পচা জল দিতে হবে।
মাঝে মাঝে গাছের ডগা ছেঁটে দিতে হবে।
সূর্যমুখী (Sunflower)
এটি শীতকালীন ফুল। এটি দেখতে সূর্যের মতো। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকার জন্য এর নাম সূর্যমুখী। এর বীজ হাঁস, মুরগী খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। পৃথিবী বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপক চাষ হয়। এই তেল অন্যান্য রান্নার তেলের তুলনায় ভালো। এই গাছ ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন -Singh fish farming: শিং মাছ চাষে তিন বন্ধুর ব্যাপক সাফল্য
বাড়ির টবে সূর্যমুখী ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ
নার্সারি থেকে গাছ এর জন্য ভালো বড় টব কিনে আনতে হবে।
অল্প ভেজা ভেজা মাটি প্রয়োজন। তাঁর মধ্যে জৈব সার মিশিয়ে মাটিটিকে তৈরি করে নিতে হবে।
টবে মাটিতে বীজটি পুঁতে দিন।
রোজ দুবেলা করে প্রয়োজন মতো জল দিতে হবে।
গাছের গোড়ায় জল জমতে দেওয়া যাবে না।
মাটি স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে জল দেবেন না।
একমাস হওয়ার পরই গাছের গোড়ায় বাড়তি সার দিতে হবে প্রয়োজন মতো।
চন্দ্রমল্লিকা (Chandramallika)
সাধারণত অক্টোবর – নভেম্বর মাসে এই গাছের ফুল ফোটে। এই ফুল প্রায় সাড়ে তিন হাজারেরে ধরনের হয়ে থাকে। এই গাছের ফুল প্রায় ২০-২৫ দিন তাজা থাকে। এই গাছ ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। চন্দ্রমল্লিকার আদি নিবাস চীনে। চীনে এটি ঔষুধিগাছ হিসেবে পরিচিত। ফুলগুলি সাধারণত গোলাকার, পুরু ধরনের হয়ে থাকে। পাঁপড়িগুলি লম্বা, উঁচু ও সরু হয়ে থাকে।
বাড়ির টবে চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ
চন্দ্রমল্লিকার গাছ থেকে ডাল কেটে ছোট পাত্রের মধ্যে জল দিয়ে রেখে দিন।
শিকড় গজিয়ে গেলে টবে মাটির মধ্যে পুঁতে দিতে হবে।
মাটির সঙ্গে সমপরিমাণ গোবর সার দিন।
ফুলের জন্য দরকার ঝলমলে রোদ ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া। তাই এটিকে কোন ছায়া যুক্ত জায়গায় রেখে দিন।
গাঁদা(Marigold)
এই ফুলটি খুব জনপ্রিয়। বেশিরভাগ বাড়ির টবে বা বাগানে এই ফুল দেখা যায়। শীত হোক বা গরম সব সময় এই ফুল ফোটে। কিন্তু শীতকালে এর চাষটা বেশি। লাল, হলুদ, কমলা রঙের হয়ে থাকে। গাঁদা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমন- চায়না গাঁদা, রক্ত গাঁদা, দেশি গাঁদা, বড় ইনকা গাঁদা প্রভৃতি।
বাড়ির টবে গাঁদা ফুলের চাষের পদ্ধতিঃ
বাজার থেকে টব এবং গাঁদা ফুলের চারা কিনে আনুন।
দোআঁশ মাটির সঙ্গে জৈব সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করে টবে ভরে নিন।
টবের মাটিতে গাঁদা ফুলের চারা লাগিয়ে নিন।
প্রতি সপ্তাহে একদিন অন্তত প্রয়োজন মতো সরষে পচা জল দেবেন।
আরও পড়ুন -Cabbage farming guide: জেনে নিন বাঁধাকপি চাষ করে কিভাবে লাভবান হয়ে উঠবেন