আম, কলা ও আনারসের পরে পশ্চিমবঙ্গের চতুর্থ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফল। পেঁপে নিয়ে গবেষণা ১৯৮২ সালে শুরু হয়েছিল এবং পুরো বছর ধরে এর উৎপাদন নিয়ে কাজের পর মানসম্মত করা হয়েছে। চাষিদের 'রাঞ্চি' এবং 'ওয়াশিংটন' কে টেবিল ফলের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল।
পেঁপে "কারিকা পাপায়া" নামেও পরিচিত। এটি একটি ক্রান্তীয় ফল, যা উচ্চ পুষ্টিকর এবং ঔষধি গুনের কারণে বাণিজ্যিক গুরুত্ব অনেক বেশি। পেঁপে চাষ দক্ষিণ মেক্সিকো ও কোস্টা রিকাতে প্রথম শুরু হয়েছিল।
পেঁপের মধ্যে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং বিটা-ক্যারোটিন মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহের সমৃদ্ধ যা আপনার ত্বকের বিভিন্ন ক্ষতিকারক ক্ষতি থেকে বাঁচায় এবং বার্ধক্য বৃদ্ধির অন্যান্য লক্ষণগুলি রোধে সহায়তা করে। পেঁপে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহের একটি সমৃদ্ধ উৎস, ফাইটনট্রিয়েন্টস এবং ফ্ল্যাভোনিয়েডস যা আপনার কোষগুলিকে আণ্ডারগোয়িং র্যাডিকাল ক্ষতি থেকে আটকাতে সাহায্য করে।
ভারতে রেড লেডি (Red Lady) নামক মেক্সিকান প্রজাতির পেঁপে চাষ ভীষণ লাভজনক কারন এই গাছ ২ থেকে ২.৫ বছর বাঁচে, প্রায় প্রতি একরে ৯০০ টি করে গাছ রোপণ করা যায়। প্রতি ঋতুতে ৭০ থেকে ১২০ টি ফসল পাওয়া যায় এবং যার বাজার মূল্য ১৫ থকে ২০ টাকা কাঁচা অবস্থায় এবং ৮০ টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া যায় পাকা অবস্থায়।
সারাবছরই পেঁপে পাওয়া যায়, এবং বাড়ির বাগানে স্বল্প পরিসরে নিজের মতো করেও এর চাষ সম্ভব৷ সাধারণত দোআঁশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য প্রয়োজন৷ তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মাটিতে জল না জমে যায় এবং জমিকে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে৷ গ্রীষ্মকালে এক সপ্তাহ পর পর সেচ করতে হবে৷ আর শীতকাল হলে ১০ থেকে ১২ দিন৷ গাছে পোকা না লাগলে একটি গাছ থেকে বছরে তিন-চারবার ফলন পাওয়া যেতে পারে৷
চারা রোপণ (Plantation) -
পলিব্যাগে বীজ রোপনের সময় দুই ভাগ মাটির সঙ্গে এক ভাগ জৈব সার মিশিয়ে নিতে হবে৷ অথবা আপনি ভালো মানের চারা নিকটস্থ নার্সারি থেকেও নিযে আসতে পারেন৷ চারা রোপণের আগে প্রতি গর্তে পচা গোবর, টিএসপি ও এমপি, খৈল মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি দিয়ে গর্ত ভরাট করে রাখতে হবে৷ প্রায় দু সপ্তাহ এভাবে থাকবে এবং এতে একটু একটু করে জল দিতে হবে রোজ৷ ১৫ দিন পর মাটি তৈরি হবে চারা রোপণের জন্য৷
পেঁপে গাছের চারার বয়স মাস খানেক হয়ে গেলে সেগুলি পলিব্যাগ থেকে সাবধানে বের করে এনে, রোদ কমে এলে অর্থাৎ বিকেল বেলায় জমিতে ৬ফিট দূরত্বে ওই গর্ত করে রোপন করতে হবে৷ মনে রাখবেন, স্ত্রী এবং পুরুষ গাছের চারা প্রতি গর্তে কিছুটা দূরে দূরে রোপন করবেন তবে একটি গর্তে দুই-তিনটের বেশি চারা রোপন করবেন না৷ ফুল না আসা পর্যন্ত প্রতিমাসে ৫০ গ্রাম এমওপি সার এবং ৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার দিতে হবে প্রতিটি চারার জন্য৷ এবং ফুল এলে সেই পরিমাণ বাড়িয়ে গাছ প্রতি ১০০ গ্রাম করতে হবে৷ অর্থাৎ, ১০০ গ্রাম এমওপি এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া৷
পরিচর্যা (Crop Care) -
গাছ যাতে ঝুঁকে না পড়ে তার জন্য শক্ত খুঁটির ব্যবহার করতে হবে৷ এবং মাঝে মাঝে জল দিতে হবে তবে তা যেন কখনোই মাটিতে জমে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে নাহলে গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ খুব কম সময়ের মধ্যেই পেঁপের ফলন হয়৷ চারা রোপণের প্রায় ৩ মাসের মধ্যেই ফুল আসে এবং ফল ধরার ২-৩ মাস পরেই পেঁপে খাওয়ার জন্য বা বিক্রির জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়৷
আরও পড়ুন - Indian Pearl Culture: ভারতীয় মুক্ত চাষের বিশেষত্ব ও সাফল্য