পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) মূলত কৃষি প্রধান রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রকৃতি খুবই সুন্দর, মনোরম ও বৈচিত্রময়। এখানকার ভৌগলিক অবস্থা, ও কৃষি উপযোগী মৃত্তিকার জন্য প্রতি ঋতুতে কৃষিকাজ খুব ভালোভাবে হয়ে থাকে। এ রাজ্যের অধিকাংশ মানুষের পেশা হল কৃষিকাজ (Farming)। এই রাজ্যের মোট আয়ের ৫০ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। এখানে ধান চাষ থেকে শুরু করে মাছ চাষ (Fish farming),গবাদিপশু (Animal husbandry) এবং হাঁস-মুরগী পালন (Poultry farming) করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ফসল গুলি হল-
ধান, গম, আলু, পাঠ, চা, তৈলবীজ, আখ, যব, পান, শাক সবজী, ফল ও তামাক।
চলুন দেখে নেওয়া যাক পশ্চিমবঙ্গের প্রধান কৃষিজ ফসল গুলির আদর্শ অঞ্চল গুলিকে-
ধানঃ পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ফসল ও মুখ্য খাদ্য শস্য হল ধান। পশ্চিমবঙ্গের ২৩ টি জেলার মধ্যে ৭০ শতাংশ ধান উৎপাদন হয় পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম , হুগলি, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা , উত্তর ও দক্ষিণদিনাজপুর। এবং ৩০ শতাংশ হয় হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার, মালদহ, জলপাইগুড়ি। তবে হ্যাঁ কলকাতা, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়িতে ধান চাষ হয় না। পশ্চিমবঙ্গের সর্বাধিক ধান উৎপাদিত জেলা হল বর্ধমান (পূর্ব)। একারণেই এই জেলাকে ধানের গোলা বলা হয়।
গমঃ বর্তমান সময়ে পশ্চিমবঙ্গে যে খাদ্যটির চাহিদা বেশি সেটি হল আটা ও ময়দা। আর এই আটা ও ময়দা আসে গম থেকেই। তবে পশ্চিমবঙ্গে গম চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও সঠিক জলবায়ু না থাকায় গম চাষের পরিমান অনেকটাই কম। তবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, মালদহ ছাড়াও বেশ কিছু জেলায় গম চাষআবাদ হচ্ছে।
আলুঃ পশ্চিমবঙ্গের অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থকারি ফসল হল আলু। হুগলী, বাঁকুড়া, বর্ধমান, পশ্চিম মেদনীপুর জেলাতে বেশি আলু চাষ হয়। তবে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলাতেও আলু চাষ হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৫টি ফল
পাঠঃ পাঠ অতন্ত্য গুরুত্ব পূর্ণ ফসল। পশ্চিমবঙ্গে সর্বাধিক পাঠ চাষ করা হয়। প্রায় ২০ লক্ষ্য মানুষ পাঠ চাষ করে জীবিকা করে নির্বাহ করে। পশ্চিমবঙ্গের যে সব জেলাগুলিতে সর্বাধিক পাঠ চাষ করা হয় সেগুলি হল- নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলী। যে জেলাগুলিতে তুলনামূলক ভাবে কম পাঠ চাষ করা হয় সেগুলি হল- কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, উত্তর-দক্ষিণ দিনাজপুর,পূর্ব মেদনিপুর ও পূর্ব বর্ধমান।
চাঃ পশ্চিমবঙ্গে চা এক অর্থকারি ও বাণিজ্যিক ফসল। ভারতে চা উৎপাদনের দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের স্থান দ্বিতীয়। পশ্চিমবঙ্গে চা উৎপাদক অঞ্চল গড়ে উঠেছে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায়। এছাড়াও তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্ছলের জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের বেশ কিছু জায়গায় চায়ের বাগিচা রয়েছে।
তৈলবীজঃ আমরা কম বেশি অনেকেই জানি সরিষার তেলের তুলনায় তিল তেল অতন্ত্য স্বাস্থ্যকর। শুধু তেল না তিলের একাধিক মুখরোচক খাবার রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের যে সমস্ত জেলায় সরিষা ও রাই তৈলবীজের চাষ ব্যাপক পরিমানে হয় সেগুলি হল মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, বর্ধমান, উত্তর-দক্ষিণ দিনাজপুর। তিলের চাষ হয় বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদনীপুর। এছাড়াও বাঁকুড়া, বীরভূম ও পুরুলিয়ায় তিসি উৎপাদন হয়।
আখঃ আখ হল একটি অর্থকারি ফসল। চিনি ও গুড় তৈরির জন্য আখের চাষ করা হয়। পৃথিবীর মোট শর্করা উৎপাদনে ৭৫ শতাংশ শর্করার আসে আখ থেকে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ায় আখের চাষ বেশি হয়।
যবঃ মনোকট শ্রেনীর উদ্ভিদ হল যব। যবের দানা বিয়ার ও অন্যান্য পানীয়তে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও যব গবাদিপশুর খাদ্য হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি জেলা গুলিতে বেশি যবের চাষ হয়।
পানঃ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঔষধ তৈরি থেকে শুরু করে, পূজাঅর্চনার কাজে পান পাতার গুরুত্ব অপরিসীম। পশ্চিমবঙ্গে পান চাষের জন্য পূর্ব মেদনীপুর, ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলা দুটি বিখ্যাত।
শাক সবজীঃ সুস্থ্য ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য পুষ্টি কর খাবার প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক। তাই শাক সবজী খাওয়া অতন্ত্য জরুরী। শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থসহ অন্যান্য অনেক পুষ্টি উপাদান পশ্চিমবঙ্গে মূলত পটল, উচ্ছে, ঝিঙে, মুলো, বেগুন, টম্যাটো, লঙ্কা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ডাল, পালং শাক, লালশাক,পুঁইশাক, সজনে, ওলকচু, সরিষার পাতা, ধনে পাতা, পেঁপে, শিম, শাপলা।
আরও পড়ুনঃ গাছির অভাবে কাটা যাচ্ছে না খেজুরগাছ,রসের জোগান হতে পারে অর্ধেক
তামাকঃ পশ্চিমবঙ্গের এক উচ্চমানের বাণিজ্যিক ফসল হল তামাক। কোচবিহারের হলদিবাড়ি মাথাভাঙা, শীতলকুচি তামাক চাষের জন্য বিখ্যাত।