২০০০ সালে আমেরিকায় মোটা টাকার চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন অমৃতা চৌধুরি এবং সন্মিত্র পান্ধারপুর। তারপরই নতুন করে চাকরি না খুঁজে লেগে পড়েন অর্গানিক সবজি চাষে। প্রথমেই ক্ষেতে নয়, নিজেদের বাড়ির সামান্য জমিতে শুরু করেন চাষ। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের সেই সবজি বিলি করেন। যখন এর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে তখন অমৃতা এবং সন্মিত্র নিজেদের ব্যবসা বাড়াতে শুরু করেন এবং রিটেল স্টোর এবং বাজারে সেই সবজি সরবরাহ করতে শুরু করেন। ২০১০ সালে এই যুগল তাঁদের কোম্পানি ‘অফারিং ফার্ম’ শুরু করেন।
প্রত্যেক সপ্তাহে এই ফার্ম থেকে উৎপন্ন হয় ১-২ টন বিরল ও এক্সটিক প্রজাতির বিভিন্ন সবজি। যার মধ্যে রয়েছে পালংশাক, মাইক্রোগ্রিন, ওয়াটারক্রেস, শিয়া সিড, এমারেল্ড রঙের কপি, রোমাইন লেটুস, জুচ্চিনি ফুল এবং আরও কত কী। এখনও পর্যন্ত যেহেতু সেরকম কোনও প্রতিযোগী এই বাজারে নেই, সেইহেতু অমৃতা এবং সন্মিত্রর ফার্ম বেশ ভালোই ব্যবসা করছে। যাঁরা স্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করেন এবং নিজেদের খাবারের রুটিনটাও বদলাতে চাইছেন, তাদের অত্যন্ত প্রিয় মহারাষ্ট্রের এই ফার্মটি।
অমৃতা এবং সন্মিত্র মূলত জোর দিয়েছেন বিটুবি ক্লায়েন্টের ওপর। এঁদের গ্রাহক মূলত ছড়িয়ে আছে মুম্বই, পুনে, গোয়া, গুরুগ্রাম এবং জয়পুরে। কিচেন গার্ডেনের মতো অর্গানিক ক্যাফে তাদের গ্রাহক। গোডরেজ নেচারস বাস্কেট, গোরমেন্ট ডিলাইট এবং জামা অর্গানিকের মতো রিটেলার এবং হাই-এন্ড হোটেল চেইনস যেমন জেডব্লু ম্যারিয়ট, ওয়েস্টিন এবং গ্র্যান্ড হায়াতের মতো গ্রাহক রয়েছেন অমৃতা এবং সন্মিত্রর সঙ্গে।
সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার থেকে অর্গানিক সবজির কৃষক -
অমৃতা এবং সন্মিত্র আমেরিকার একজন সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। সেখানে তাঁরা এক্সোটিক স্যালাড তৈরি করতেন। অমৃতা জানিয়েছেন, ৯০-এর দশকে ভারতের উন্নতিতে কাজ করে এমন কতকগুলি সংস্থার সঙ্গে কাজ শুরু করেন তিনি। যেখানে তিনি জানতে পারেন ভারতের বিভিন্ন পরিবেশগত অবস্থার কথা। সেই সময়ই তাঁর মাথায় আসে অর্গানিক সবজি চাষের ব্যাপারটি। তারপরই চাকরি ছেড়ে ভারতে আসেন। একটি ছোট জমি কিনে সেখানে অর্গানিক সবজির চাষ করবেন এই আশায়।
এখানে এসে তাঁর দেখা হয় সন্মিত্রর সঙ্গে। যাঁরও পরিবেশের প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসা রয়েছে। অর্গানিক ফুড চাষে যাঁর কোনও আপত্তি নেই। সুতরাং দুজনের লক্ষ্য এক হতে সময় লাগেনি। কিন্তু অমৃতার মায়ের বাড়িতে কিছু সবজি চাষের অভিজ্ঞতাই সম্বল ছিল তাঁদের দুজনের। তাই ফার্মিং নিয়ে প্রচুর বই পড়তে শুরু করেন দুজনে। বিভিন্ন ফার্মে যাতায়াত শুরু করলেন প্রক্রিয়াগুলি বোঝার জন্য। সেখানকার কৃষকরাই তাঁদের অনেক কিছু বুঝিয়েছেন। এছাড়াও পরিবেশবিদ কিষাণ মেহতার সঙ্গেও তাঁরা দেখা করেন। এর ফলে তাঁদের অনেকটাই সুবিধা হয়।
ছোট থেকেই ধীরে ধীরে এসেছে সাফল্য -
প্রথমেই বড় কোনও জমি নয়, বাড়ি লাগোয়া ছোট জমিতেই চাষ করতে শুরু করেন দুজনে। প্রথমে মাইক্রোগ্রিন বা স্যালাড দিয়েই শুরু করেন, যেগুলি তাঁদের অঞ্চলে ছিল বিরল। যখন ফলনের ফলাফল, পুষ্টি, স্বাদ নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট হন, তখন তাঁরা নিজেদের আত্মীয় এবং স্থানীয়দেরও এই চাষবাসে যুক্ত করেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে সাহায্যও পেয়েছেন প্রচুর জানিয়েছেন অমৃতা। কোনও রকম কেমিক্যাল এবং ক্ষতিকারক কীটনাশক ছাড়াই এই ফলন মানুষ গ্রহণ করেছে খোলা মনে। সন্মিত্র জানিয়েছেন, তাঁদের এই ফার্মের কথা লোকমুখে বেশি প্রচারিত। ৮০ শতাংশ মার্কেটিং তাঁদের এভাবেই হয়। খুব কম সময়ই তাঁদের কোনও রিটেল আউটলেট বা হোটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।
একই জমিতে বিভিন্ন শস্যের ফলন -
একই জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষই তাঁদের ফার্মকে এতখানি সফল হতে সাহায্য করেছে। রোটেশনের ভিত্তিতে বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়। এতে মাটিরও ক্ষতি হয় কম। বীজ স্বাস্থ্যকর থাকে। অর্গানিক ফার্মিং-এর ক্ষেত্রে মাটিতে তৈরি করাটা খুব দরকার। যাতে মাইক্রোঅর্গানিজমের প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং কীটের আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করা যায়। এছাড়াও জমিকে ঢেকে ফেলাও অর্গানিক ফসল চাষের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর সঙ্গে কার্বনের উপস্থিতি গাছে পুষ্টি বৃদ্ধি করে। এই মুহুর্তে অমৃতা এবং সন্মিত্র নতুন একটি পরীক্ষায় নেমেছেন। ক্যায়োস গার্ডেনিং। যেখানে মূলা, বিট, ভুট্টার বীজ একসঙ্গে মাটিতে দেওয়া হয়েছে। এতে ফলনের মাত্রা অনেকটাই বেশি হবে বলে আশা রাখছেন সন্মিত্র। ক্ষেতে জলের ব্যবস্থার জন্য তাঁরা ব্যবহার করেন ড্রিপ ইরিগেশন। প্রত্যেক বর্ষাকালে তাঁরা কয়েক হাজার লিটার জল সংরক্ষণ করেন। সেই জল সরাসরি গাছের গোড়ায় পৌঁছয়। এরফলে জলের ব্যবহার ৮০ শতাংশ হ্রাস হয়।
অমৃতা, সন্মিত্রর সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারণ হল তাঁদের অর্গানিক ফার্মিং।
ত্রয়ী মুখার্জী
Image Source - Google
Related Link - (Subsidy on agriculture machinery) কৃষি যন্ত্র ক্রয় করতে চান সরকারি ভর্তুকিতে? এই লিঙ্কে ক্লিক করুন