গোটা রাজ্যর মৎস্য চাষে নয়া বিপ্লব হলদিয়ার হাত ধরেই শুরু, এই কথা অস্বীকারের আজ কোনও জায়গাই নেই। আরতি বর্মণ, মৃন্ময় সামন্ত, নারায়ণ বর্মণের মতন রাজ্য সরকারের পুরস্কারপ্রাপ্ত দিকপাল মৎস্যচাষিরা আজ হলদিয়ার গর্ব। মৎস্য দফতরের উদ্যোগে এই অঞ্চলের চাষিদের মাছ চাষের আগ্রহ আজ সারা বাংলার কাছে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নিত্যনতুন মাছ চাষ আর তা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা এখানকার মৎস্যচাষিদের দৈনন্দিন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় মাছেদের নতুন করে উদ্ধার করতেও হলদিয়ার মাছ চাষিরা পিছপা নন। এই কাজের দৃষ্টান্ত স্বরূপ উল্লেখ করা যায় হলদিয়া চাউলখোলা অঞ্চলের সুব্রত মাইতির নাম।
হলদিয়ার মাছ চাষের জগতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন পেশায় মৎস্য ব্যবসায়ী এই ব্যক্তি। নিজের মৎস্য হ্যাচারিতে একের পর এক বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজনন ঘটিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন এলাকায়। নীল বিপ্লব প্রকল্পে গড়ে ওঠা এই হ্যাচারিতে সুব্রত বাবুর ব্যবস্থাপনায় ১৭ জুলাই, শনিবার শুরু হল হারিয়ে যেতে চলা পাঙ্গাস মাছের কৃত্রিম প্রজনন। কাঁচের ত্রিকোণ বাক্সের মতো গ্লাস জার হ্যাচারী বানিয়ে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির কৌশল ইতিমধ্যেই বিপুল সাড়া ফেলেছে। ঠিক সেই পদ্ধতি অনুসরণ করেই সুব্রত বাবু তাঁর হ্যাচারিতে বিলুপ্তপ্রায় মাছের উৎপাদন শুরু করছেন।
মূলত পাঙ্গাস মাছ নদী এবং মোহনা অঞ্চলে মেলে। শামুক এবং ছোট ছোট কীট জাতীয় খাবার খেয়ে বেঁচে থাকা পাঙ্গাস মাছের স্বাদ অসাধারণ! কম কাঁটা থাকায় এই মাছ সব বয়সের মানুষদেরই পছন্দের। ২০১৫ সালে আইসিইউএন পাঙ্গাসকে বিপন্নপ্রায় মাছের প্রজাতির তালিকাভুক্ত করে।
আরও পড়ুন: Lavender Cultivation: জেনে নিন সহজ উপায়ে ল্যাভেন্ডার চাষ পদ্ধতি
ওইদিন হ্যাচারিতে উপস্থিত হলদিয়ার মৎস্যচাষ সম্প্রসারক আধিকারিক সুমন কুমার সাহু জানান, বেকার যুবক যুবতীরা যাতে মাছ চাষ বা মাছের কৃত্রিম প্রজননের ব্যবসায় স্বনির্ভর হতে পারেন তারই উদ্যোগ এখানকার মৎস্য দফতরের থেকে নেওয়া হচ্ছে। অতিমারীর সময়ে মাছ চাষের পদ্ধতি ভার্চুয়ালি শেখানোর উপরেও জোর দেন তিনি। হলদিয়ার মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ গোকুল মাঝিও এদিন অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত ছিলেন। গোকুল বাবুর কথায়, হলদিয়ার আধুনিক মৎস্য কর্ম পদ্ধতি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কাছেও আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে। নবীন ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই আধুনিক উপায়ে মাছ চাষ শেখা ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন। হলদিয়ায় অধিক মাছের উৎপাদন যে তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য, তা মৎস্য কর্মাধ্যক্ষের কথায় স্পষ্ট।