ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির স্মরণে দেশ ‘’ভারত কা অমৃত মহোৎসব ’’(Bharat Ka Amrut Mahotsav) উদযাপন করছে। ২০২২ সালের ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত এক বছরেরও বেশি দীর্ঘ সময় ধরে এই মেগা ইভেন্ট চলাকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দেশের স্বাধীনতা-উত্তর যাত্রায় সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত দিকগুলির উচ্চতর বিষয়গুলিতে আলোকপাত করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নির্ধারণ করেছে।
ভারত কা অমৃত মহোৎসব (Bharat Ka Amrut Mahotsav)-
এই ক্রমে, আইসিএআর-সেন্ট্রাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর জুট অ্যান্ড অ্যালাইড ফাইবার্স (ICAR-CRIJAF), ব্যারাকপুর ‘’ভারত কা অমৃত মহোৎসব’’ এবং বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন উপলক্ষে, ‘’ক্লিন অ্যান্ড গ্রীন ইন্ডিয়া’’ (Clean and Green India)-র বিষয়বস্তুর উপর ৪-৭ জুন, ২০২১ পর্যন্ত "প্লাস্টিক প্রতিস্থাপনে প্রাকৃতিক তন্তুগুলির ভূমিকা", "বর্জ্য এবং ইকো ফার্মিং থেকে সম্পদ" এবং "পাটের জিনোম এডিটিং" সম্পর্কিত তিনটি ভার্চুয়াল লেকচারের আয়োজন করেছে। প্রাকৃতিক তন্তু ফসলগুলির দ্বারা পরিবেশিত পরিবেশগত উপকারগুলি এবং বাস্তুতন্ত্র পরিষেবাগুলি তুলে ধরতে ইনস্টিটিউট কর্তৃক এই তিনটি ভার্চুয়াল বক্তৃতার আয়োজন করা হয়েছে।
আইসিএআর-ক্রাইজাফের নির্দেশক, ডঃ গৌরাঙ্গ কর এই অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক মন্তব্যে বলেছেন যে, প্রাকৃতিক তন্তু বিশেষত: পাট প্লাস্টিক প্রতিস্থাপন এবং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে আদর্শ তন্তু হিসাবে আবার তার সোনালী দিন দেখবে।
আইসিএআর-ক্রাইজাফের প্রধান বৈজ্ঞানিক ডঃ এস. কে. ঝা প্রথম বক্তৃতায় প্লাস্টিকের বর্জ্য দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন ধরণের দূষণ, কৃষিকাজ, বন্যজীবন, জলজ জীবন, সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র এবং মানব স্বাস্থ্যের উপর প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন। প্লাস্টিকের বিকল্প অনুসন্ধান করার কারণগুলি এবং প্রাকৃতিক তন্তুগুলি, বিশেষত: পাট কেন ভাল বিকল্প হতে পারে তার ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন।
ডঃ গৌরাঙ্গ কর তাঁর বিশেষ বক্তব্যে প্লাস্টিক দূষণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং একবার ব্যবহারের প্লাস্টিক (Single use plastic) ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে পাট এবং সমবর্গীয় তন্তুগুলির ভবিষ্যতের চাহিদা অর্জনের জন্য প্রযুক্তি এবং রোডম্যাপ তৈরি করার উপর জোর দিয়েছেন। দেশ-বিদেশে জুট শপিং ব্যাগ তৈরির নতুন চাহিদার কারণে প্রতি বছর আট লক্ষাধিকের বেশি বেল অতিরিক্ত পাট তন্তু প্রয়োজন হবে। পাটজাত বিবিধ পণ্যগুলি প্লাস্টিককে সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপন করতে পারে, তাই আগামী দশকগুলিতে পাট উত্পাদনশীলতার বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত প্রযুক্তি এবং রোডম্যাপ আইসিএআর-ক্রাইজাফের কাছে রয়েছে।
কলকাতার আইসিএআর-নিনফেট (ICAR-NINFET)-এর নির্দেশক ডঃ ডি॰ বি॰ শাকিয়াবার এই ব্যাখ্যা সূত্রের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তিনি তাঁর বক্তব্যে জুট সেক্টরকে আরও প্রাণবন্ত করতে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে দৃঢ় সংযোগ এবং সমন্বয়ের পক্ষে সওয়াল করেন ।
৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের বক্তব্যে ডঃ গৌরাঙ্গ কর বলেন যে, কৃষি প্রযুক্তিগুলিকে অবশ্যই অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে যাতে এই জাতীয় প্রযুক্তিগুলি উত্পাদনশীলতা, গুণমান, মাটির স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণে আরও দীর্ঘস্থায়ী ভূমিকা নিতে পারে ।
এই দিন আইসিএআর-ক্রাইজাফের প্রধান বৈজ্ঞানিক ডঃ এ॰ কে॰ সিংহ "বর্জ্য এবং ইকো ফার্মিং থেকে সম্পদ" বিষয়ে একটি ভার্চুয়াল বক্তৃতা দেন। কৃষি বর্জ্যগুলির যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব বায়ু, মাটি এবং জল দূষণের কারণ হয়। ভারত প্রতি বছর প্রায় ৫০০ মিলিয়ন টন কৃষি বর্জ্য এবং ৬২ মিলিয়ন টন পৌর কঠিন বর্জ্য উত্পাদন করে, যা স্থলভাগের আশেপাশে বিষাক্ত গ্যাস এবং গ্রীন হাউস গ্যাস তৈরি করে। দেশে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ কৃষি ও পৌর বর্জ্য কৃষিতে ব্যবহারের জন্য বিদ্যুত এবং সবুজ সার উৎপাদনে খুব ভাল রূপান্তরিত হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী ইকো-ফার্মিং-এর জন্য এবং গ্রামীণ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য কৃষি কার্যক্রমের সময় উত্পন্ন বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থকে ব্যবহার করে সম্পদ তৈরির জন্য প্রচুর প্রযুক্তি রয়েছে।
ব্যারাকপুরের আইসিএআর-সিফরি (ICAR-CIFRI)-এর নির্দেশক ডঃ বি॰ কে॰ দাস এই দিনের ব্যাখ্যা সূত্রের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তিনি বলেন যে, কৃষকদের এবং পরিবেশের উপকারের জন্য কৃষি বর্জ্য থেকে সম্পদ তৈরি করার প্রযুক্তিগুলি সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করার সময় এসেছে।
৭ই জুন, আইসিএআর-ক্রাইজাফের প্রধান বৈজ্ঞানিক ডঃ এস॰ দত্ত তৃতীয় বক্তৃতাটি দেন যার বিষয় ছিল "পাটের জিনোম এডিটিং"। তিনি তাঁর ব্যাখ্যানে জিনোম এডিটিং প্রযুক্তি এবং স্বল্প মেয়াদে উচ্চ উত্পাদনশীলতার সাথে উন্নত গুণমানের পাটের তন্তু পাওয়ার জন্য এই প্রযুক্তির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
আইসিএআর-ক্রাইজাফের নির্দেশক ডঃ গৌরাঙ্গ কর পাট এবং সমবর্গীয় তন্তু ফসলগুলির উন্নত জাতের বিকাশের জন্য নিয়মিত পদ্ধতিতে জিনোম-এডিটিং প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করার উপর জোর দেন যা আগামী কয়েক দশকের জলবায়ু অবস্থায় ভালো এবং দীর্ঘস্থায়ী ফল দেবে।
আরওপড়ুন - PM Tweet: রাজ্যে বজ্রাঘাতে নিহতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
তিনটি মহত্বপূর্ণ ব্যাখ্যান সমন্বিত ৪-৭ই জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই ওয়েবনার সিরিজ ছাড়াও, আইসিএআর-ক্রাইজাফ ‘’ভারত কা অমৃত মহোৎসব ’’ এবং বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন উপলক্ষে, ভার্চুয়াল চিত্রকলা ও কবিতা প্রতিযোগিতার আয়োজনও করেছে, যাতে সংস্থার বিভিন্নবর্গের কর্মচারীরা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উত্সাহের সাথে অংশ নিয়েছে।
(সূত্র: ডঃ গৌরাঙ্গ কর, নির্দেশক, আইসিএআর-সেন্ট্রাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর জুট অ্যান্ড অ্যালাইড ফাইবার্স, ব্যারাকপুর, কলকাতা -৭০০ ১২১)