মহামারির সময় যে যোদ্ধারা একদম সামনের সারিতে দাড়িয়ে,পরিবারের মায়া মমতা ত্য়াগ করে,জীবনের পরোয়া না করে, প্রথম ঢেউ থেকে তৃতীয় ঢেউ পর্যন্ত করোনা রোগীদের পাশে থেকে সেবা শুশ্রূষা করে গেল, আজ তাদের বড় বিপদের দিন। কোভিড নেই বলে একের পর এক হসপিটালের অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীদের ছাটাই পত্র ধরিয়ে দিয়ে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করছে বিভিন্ন মহলে।
কলকাতা মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে ডিভিশন রেলওয়ে হসপিটাল, আদ্রা,পুরুলিয়া, বেলেঘাটা আইডি হসপিটাল, বীরভূমের রামপুরহাট স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রভৃতি হসপিটালের অস্থায়ী স্বাস্থ্য কর্মীদের ছাটাই পত্র দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভের ছায়া দেখা গেছে অস্থায়ী স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্য়ে।
আদ্রা,পুরুলিয়া সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে ডিভিশন হাসপাতালের এক অস্থায়ী স্বাস্থ্য কর্মী সোমনাথ ঘোষ বলেন," মহামারীর বিপদের দিন যে সমস্ত ভাই বোনেরা নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা শুশ্রূষা করে বাঁচিয়ে বাড়ি ফিরিয়েছে, আজ তাদেরই কাজ নেই। এই বিপদের দিনে সরকার অস্থায়ী স্বাস্থ্য কর্মীদের পাশে থাকুক এটাই আমরা চাই"।
তিনি আরও বলেন,"করোনার বীভৎস পরিস্থিতির সাক্ষী আমরা সহ গোটা রাজ্য তথা দেশের মানুষ।গৃহবন্দি ছিল সকল মানুষ, লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন করোনা আক্রান্ত হয়েছিল তখন আমরা (অস্থায়ী কর্মীরা) ছুটে গেছি অসহায় মানুষদের উদ্ধার করতে। চোখে জল নিয়ে অসহায় মানুষদের বাঁচানোর লড়াইয়ে সামিল হয়েছি। প্রাণে মৃত্যুর ভয়, চোখে জল, বুকে অদম্য সাহস নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছি শত শত রোগীর।
আরও পড়ুনঃ সতীমায়ের ঐতিহ্য়কে রক্ষা করতে মরিয়া লড়াই, একদল তরুণ তুর্কির
দ্বিতীয় ঢেউ এর সময় শত শত মানুষের মুখে একটি কথায়ই বারবার বলতে শুনেছি, অক্সিজেন। দিন নেই, রাত নেই হাসপাতাল কক্ষে প্রতিটি রোগীর কণ্ঠস্বর শুধু যেন অক্সিজেন বলে চিৎকার করছিল। সেই সময় গোটা হাসপাতালে কান পাতলেই শোনা যেত অক্সিজেন সিলিন্ডারে খোলা, লাগানো, লোড-আনলোডের শব্দ। হাসি কান্নার সাক্ষী আমরা। মৃত্যুকে তুচ্ছ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতের নিস্তব্ধতা আর কুকুরের করুণ কান্নার আওয়াজের সাক্ষী হয়ে আনতে গেছি করোনা রোগীর লাশ। নিয়ে যেতে হয়েছে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হসপিটালে রোগীদের। রোগীদের খাবার দেওয়া, স্নান করানো, করোনা রোগীর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া সব কাজই করেছি আমরা । পরিবারের লোকেরা রোগীর কাছে আসত না, তখন আমরাই হয়ে উঠেছিলাম রোগীর ভাই,বোন,ছেলে,মেয়ে। সেইসব দিনগুলো ভোলা যায় না। আর ভোলার ও নয়। কত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সময় জোড়হাত করে চোখে জল মুখে সদ্য বেঁচে ফেরা আনন্দে বলে যেত - "আজ বাবা,তোমাদের জন্য প্রাণে বেঁচে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।"
কথা বলতে বলতে গলা জরিয়ে আসে কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে হাসপাতালের আর এক অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মী জীষান জাফেদের, একটু থেমে তিনি বলেন, আজ আমাদের কাজ নেই। কারণ আমরা ছিলাম কন্ট্রাকচুয়াল প্যারা মেডিকেল স্টাফ। কন্ট্রাক শেষ হতেই হতে চলে এল টার্মিনেশন লেটার অর্থাৎ ৩১/ ৩/২০২২ এর পর থেকে আমরা আরা কাজ করতে পারব না।
আরও পড়ুনঃ মহিলা কৃষকদের এক অসম্পূর্ণ অধিকার,এবং এক সম্পূর্ণ কাহীনি
অভিমান আর ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, " করোনা নেই, তাই তোমাদের বিদায় দেওয়ার পালা। ঠিক যেন ইউজ এন্ড থ্রো পেন এর মত ব্যবহার করে ফেলে দিল"।
জীষান এবং সোমনাথ বাবুর মত হাজার হাজার কোভিড বীরযোদ্ধারা আজ অসহায় বেকার অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এমত অবস্থায় এই অস্থায়ী কর্মীদের দাবি, সরকার যেন এই অস্থায়ী কোভিড যোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন হসপিটালে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করার সুযোগ দেয়।