কৃষিজাগরন ডেস্কঃ শীত মানেই নলেন গুড়ের মিষ্টি,শীত মানেই খেজুরের রস আর পিঠেপুলির উৎসব। আর এই উৎসবে যিনি প্রতিটি বাঙালীর মনে রাজার সিংহাসনে বিরাজ করেন তিনি অবশ্যই খাঁটি খেজুরর গুড়ে তৈরি নলেন গুড়ের মিষ্টি।
বাংলা জুড়ে শীতের আবহাওয়া। ঠিক যেন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে,এই বুঝি করা নাড়ল বলে। দিনের বেলায় তেমন একটা ঠান্ডা অনুভব না হলেও গভীর রাত এবং সকালে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে শীতের আমেজ।
খেজুরের রস দিয়ে তৈরি গুড়ের রসগোল্লা, পায়েস, মোয়া ও সন্দেশ যেন জিভে জল এনে দেয়। জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। চলছে গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ। খেজুরের রস সংগ্রহ করার আগে গাছ তৈরি করতে হবে, তাই শীতের শুরুতে দম ফেলার সময়টুকু নেই গাছিদের।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জমির ধারে, রাস্তার পাশে এমনকি পুকুর পাড়ে সারিসারি খেজুর গাছের ডাল কেটে পরিষ্কার করছেন গাছিরা। হাতে দা, কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ কাটছেন গাছিরা। এরই মধ্যে অনেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছে নলি গাঁথাও শুরু করেছেন।
আর মাত্র ১০-১৫ দিন পরই রস সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। খেজুরগাছ থেকে রস পাওয়ার জন্য গাছ তৈরি করাকে গাছিরা আঞ্চলিকভাবে ‘গাছ তোলা’ বলে থাকেন।
প্রথমবার গাছ তোলার সাতদিন পরই হালকা কেটে নলি লাগানো হয়। পরে সেখান থেকে রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।গাছিদের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু রস সংগ্রহের।
একটি খেজুরগাছ থেকে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ কেজির মতো রস পাওয়া যায়। আর ছয় কেজি রস থেকে এক কেজি গুড় পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ মৎস্যমন্ত্রীর নিরলস পরিশ্রমে সুরক্ষিত হতে চলেছে ১৫ লক্ষ মৎস্যজীবীর জীবন
তবে গত বছরের চেয়ে এবার গাছের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দ্বারা এক গবেষনায় এই তথ্য উঠে এসেছে। এই গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) রেড লিস্টের ডেটা সহ নতুন মেশিন লার্নিং কৌশলের সাহায্য নিয়েছেন। এই গবেষণার ফলাফল নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে ।গবেষকরা এই গবেষণায় জানার চেষ্টা করেছেন কত প্রজাতির খেজুর গাছ বিলুপ্তির পথে রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ১,৮৮৯ টি খেজুর প্রজাতি গাছের উপর গবেষনা করে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন প্রায় ৫৬ শতাংশ গাছ বিলুপ্তির পথে রয়েছে। এই গাছের মধ্যে এমন ১,৩৮১ টি প্রজাতির গাছ রয়েছে যাদের সম্পর্কে কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে, নদীয়া জেলার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রধান ডাঃ সামসুল হক আনসারী কৃষিজাগরনকে বলেন, “ এই রির্পোট সম্পর্কে আমি বিস্তারিত কিছু জানি না তবে,বাংলাতে খেজুর গাছ নিয়ে একটা বড় দিক রয়েছে চাষিদের।খেজুর থেকে গুড় তৈরি হয়।বিশেষ করে দেশি খেজুর যেগুলো বাংলাতে বেশি হয়।সেখান থেকে কমার্শিয়ালি গুড় তৈরি করে কৃষকরা। সেক্ষেত্রে যদি খেজুর গাছের পপুলেশান কমে যায়া বা বিলুপ্তি ঘটে তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই এটা কৃষকদের রুজিরোগারের সাথে সরাসরি জরিত,সেক্ষেত্রে একটা এফেক্ট তো পরবেই” ।
যদি খেজুর গাছের এই প্রজাতিগুলি বিলুপ্ত হয়ে যায় তবে শুধু পরিবেশের উপর নয়, খেজুরগাছের উপর নির্ভরশীল মানুষের উপরেও এর প্রভাব পরবে। গবেষকদের মতে, খেজুর গাছের সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।