'MFOI, VVIF কিষাণ ভারত যাত্রা' গুজরাটের বিভিন্ন গ্রামে পৌঁছে কৃষকদের সম্মানিত করেছে Weather Update: ঝেঁপে নামবে বৃষ্টি! শনিবার থেকেই আবহাওয়ার আমূল পরিবর্তনের পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের “ট্র্যাক্টর কে খিলাড়ি” কৃষকদের 51 হাজার টাকা পর্যন্ত পুরস্কার
Updated on: 2 September, 2021 4:12 PM IST
Pusa Decomposer

আমরা সকলেই জানি যে, প্রযুক্তি জীবনের সর্বক্ষেত্রে মানুষের পরিশ্রম অনেকাংশে লাঘব করেছে, উৎপাদন বৃদ্ধি ও আর্থিক সুরাহার সহায়ক হয়েছে কিন্তু সুবিধের আড়ালে কোনো কোনো সময়ে এই প্রযুক্তি অসুবিধেরও কারণ হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশের কৃষিতে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষকদের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম অনেকটাই কমিয়েছে।

ক্ষেতে এখন আর বলদ জুতে লাঙল চালিয়ে মাটি তৈরি করার দরকার হয়না, ফসল তোলাতেও কাস্তে শানিয়ে ধান, গম, ভুট্টা, বাজরা, জোয়ার কেটে ঝাড়তে হয় না। তার জায়গায় এসেছে কম্বাইন হারভেস্টর মেশিন, যা দিয়ে খুব দ্রুত শত শত হেক্টর জমিতে চাষ করা ফসল তোলা সম্ভব হচ্ছে, ফলে একদিকে যেমন উৎপাদন বেড়েছে, অন্যদিকে তেমনই কমেছে কৃষি উৎপাদন এর খরচ কারণ দৈত্যাকার এই যন্ত্র যে শুধু ধান কাটছে তাই নয়, ঝেড়ে পরিষ্কার করে বস্তাবন্দীও করে দিচ্ছে। কিন্তু হারভেস্টর যন্ত্র মানুষের হাতে কাস্তের মতো ধান গাছের গোড়া থেকে না কেটে শুধু ধানের শীষ কাটে ফলে মাঠে ধান গাছের অনেকটা লম্বা খড় থেকে যায়। এই খড় বা নাড়া পরিষ্কার না করলে কৃষক জমিকে খরিফের পর রবি ফসলের জন্য তৈরি করতে পারেন না তাই সহজ উপায় হিসেবে মাঠেই নাড়া পুড়িয়ে জমিকে পরবর্তী ফসলের উপযোগী করার রাস্তা তারা বেছে নিয়েছেন।

খড় পোড়ানোর প্রভাব (Stubble burning) - 

প্রতি বছর হাজার হাজার হেক্টর জমিতে নাড়া পোড়ানোর ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড বা সালফার ডাই অক্সাইড এর মতো অত্যন্ত দূষিত, ক্ষতিকারক ও বিষাক্ত গ্যাসের ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে আকাশ, বাতাস দূষিত হচ্ছে, মাটির প্রবল ক্ষতি হচ্ছে, ক্ষেতের উপকারী অণুজীব পুড়ে মরছে আর বাতাসে ভর করে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম থেকে শহরে। ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো বিভিন্ন ধরণের গ্রিনহাউস গ্যাস যেমন প্রায় ১৪৯ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড, ৯ মিলিয়ন টন কার্বন মনোক্সাইড, ০.২৫ মিলিয়ন টন সালফার ডাই অক্সাইড, ১.২ মিলিয়ন টন পার্টিকুলেট পদার্থ এবং ০.০৭ মিলিয়ন টন কৃষ্ণ কার্বন নিঃসরণে প্রচুর অবদান রাখে।

ফসল তুলতে এই রকম সাংঘাতিক পরিবেশ দূষণের সমস্যা কিন্তু আগে ছিল না, কারণ কাস্তে দিয়ে কাটা নাড়া ছোটো হওয়ায় জমি তৈরির সময় সেগুলি পচে মাটিতে মিশে জমির উর্বরতা বাড়াত। তা বলে তো আর কাস্তের যুগে ফেরা সম্ভব নয়। তাই পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের বড়ো অংশের কৃষকেরা প্রতি বছর প্রায় দুই কোটি মেট্রিক টন নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে দিচ্ছেন, যার জেড়ে রাজধানী দিল্লী ও আশেপাশের গ্রাম শহরে পরিবেশ দূষণের সমস্যা ভয়াবহ হয়ে উঠছে। আইন করে নাড়া পোড়ানো নিষিদ্ধ, জেল জরিমানার পদক্ষেপ গ্রহণ করেও এই তিন রাজ্যের চাষিদের বিরত করা যায়নি। তাই নাড়া না পুড়িয়ে লাভজনকভাবে তা ব্যবহারের বিকল্প পথের কথা ভাবতে হচ্ছে। কম্বাইন হারভেস্টর মেশিন -এর ব্যবহার সারা দেশের কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় অন্যান্য রাজ্যেও শুরু হয়েছে সমান তালে নাড়া পোড়ানো।

প্রাকৃতিক সম্পদের অবক্ষয় - 

ভারতীয় কৃষি গবেষণা সংস্থার হিসেব অনুযায়ী জানা গেছে যে, দেশে ফসল তুলতে হারভেস্টর যন্ত্র ব্যবহার করার দরুন প্রায় ১৫ কোটি মেট্রিক টন নাড়া মাঠেই থেকে যাচ্ছে। কৃষককে এই নাড়া পরিষ্কার করার বিকল্প ও লাভজনক পথ না দেখালে সারা দেশে দূষণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলবে। অন্যদিকে নাড়া পোড়ানোর ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালে ঘন ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়, মাটির প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য বা পুষ্টিগুণগুলি নষ্ট হয়ে উর্বরতা হ্রাস পায়, উৎপন্ন তাপ ব্যাকটিরিয়া এবং ছত্রাকের জনসংখ্যা প্রচুর পরিমাণে কমিয়ে দেয়, যা উর্বর মাটির জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ও বায়ুতে অনেক অণুজীব মারা যাওয়ায় শত্রু কীটপতঙ্গ বৃদ্ধি হতে পারে। ফসলের খড় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা যেতে পারে ও পাশাপাশি উচ্চ গ্রেড সম্পন্ন জৈব সার প্রস্তুত করা যেতে পারে খড়ের সঙ্গে গোবর ও কিছু প্রাকৃতিক উৎসেচক এর মিশ্রণ ঘটিয়ে । ফলস্বরূপ রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। কিন্তু ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানোর জন্য প্রচুর নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, সালফার, ফসফরাস এবং জৈব কার্বন প্রতি বছর ধ্বংস হয়, যা জৈব সার তৈরিতে আদর্শভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এইভাবেই আমরা প্রতিবছর খড় থেকে প্রাপ্ত বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ হারাচ্ছি।

আরও পড়ুন - Aquaponics - মাছ ও শাকসব্জি চাষ এখন গৃহকর্মেরই অঙ্গ

এবার আসি আমাদের রাজ্যের কথায় । পশ্চিমবঙ্গের শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত বর্ধমান, হুগলী, নদীয়া, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায় কয়েক বছর ধরে চাষিরা নাড়া পোড়াতে শুরু করেছেন।

রাজ্যে প্রায় ৫৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয় এবং ধান গমের মিলিত চাষ এলাকার ৩.৪% এলাকাতে ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো হয় । জমিতে পড়ে থাকা নাড়ার একাংশ যাতে না পোড়ানো হয় তাই সরকারীভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে, গত বছর রাজ্যে নাড়া পোড়ানো আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এই বছর ৪ ঠা নভেম্বর তারিখটিকে রাজ্য জুড়ে ‘নাড়া পোড়ানো বিরোধী দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সমস্যার অর্থনৈতিক দিকটি বিবেচনার মধ্যে রেখে এর সমাধান করতে হবে, অন্যথায় প্রযুক্তির বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে ।

আরও পড়ুন - Safeda Farming- সবেদার জাত পরিচিতি এবং চাষ পদ্ধতি

English Summary: A microbial cocktail as a transformative invention against straw burning
Published on: 02 September 2021, 04:12 IST

எங்களுக்கு ஆதரவளியுங்கள்!

প্রিয় অনুগ্রাহক, আমাদের পাঠক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকরা আমাদের কৃষি সাংবাদিকতা অগ্রগমনের অনুপ্রেরণা। গ্রামীণ ভারতের প্রতিটি কোণে কৃষক এবং অন্যান্য সকলের কাছে মানসম্পন্ন কৃষি সংবাদ বিতরণের জন্যে আমাদের আপনার সমর্থন দরকার। আপনার প্রতিটি অবদান আমাদের ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান।

এখনই অবদান রাখুন (Contribute Now)