কৃত্রিম প্রজনন একটি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে পুরুষ পশুদের থেকে বীর্য সংগ্রহ করে তা কৃত্রিম উপায়ে স্ত্রী পশুদের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতিতে স্ত্রী পশুটি গর্ভবতী হয় এবং সঠিক সময়ে সন্তান উৎপাদন করে। পুরুষ পশুদের থেকে বীর্য সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয় । বীর্য সংগ্রহের পরে তাকে লঘু করা হয় এবং হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীকালে গাভী গরম হলে এই সংরক্ষিত বীর্যকে স্বাভাবিক উষ্ণতায় নিয়ে আসা হয় এবং গাভীর জরায়ুতে একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্সেমিনেশন গান (এ আই গান) - এর মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হয়। সঠিকভাবে কৃত্রিম প্রজনন করার জন্য গাভীর গরম হওয়ার লক্ষণ গুলি জানা একান্ত প্রয়োজন।
নিম্নে গাভীর গরম হওয়ার লক্ষণ গুলি আলোচনা করা হল -
- পশুটি খুবই উত্তেজিত অবস্থায় থাকবে এবং কখনো এক জায়গায় শান্তভাবে স্থির থাকবে না
- পশুটি বারবার ডাকাডাকি করবে
- এই সময়ে পশুদের খাদ্যগ্রহণ কমে যায়
- গরম হওয়া পশুটি কাছাকাছি থাকা অন্য পশুদের উপর ওঠার চেষ্টা করে এবং অন্য পশু তার ওপরে উঠলে বাধা দেয় না
- পশুটি ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ করবে
- এই সময় পশুদের যোনি থেকে স্বচ্ছ মিউকাস নিঃসৃত হয়
- যোনির চারিপাশ অল্প স্ফীত থাকবে এবং সেখানে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে
- এই সময় পশুদের দুগ্ধ উৎপাদনও স্বল্প পরিমাণ হ্রাস পায়
কৃত্রিম প্রজনন একটি অত্যন্ত লাভজনক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির সহায়তা নিলে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায় । যেমন :
- কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গবাদি পশুদের গর্ভধারণ করালে কৃষকদের আলাদাভাবে কোন ষাঁড় প্রতিপালন করার প্রয়োজন হয় না
- বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ এবং যৌন রোগের হাত থেকে পশুদের রক্ষা করা যায়
- অত্যন্ত সহজভাবে ভাল গুণ সম্পন্ন একটি ষাঁড়ের বীর্য ব্যবহার করে পশুদের গর্ভবতী করা যায়
- পুরুষ পশুটি মারা যাওয়ার পরেও তার বীর্য ব্যবহার করা সম্ভবপর হয়
- সংরক্ষিত বীর্যকে গ্রাম ও শহরের যে কোন অঞ্চলে নিয়ে গিয়ে কৃত্রিম প্রজনন করা সম্ভব
- এই পদ্ধতিতে যেহেতু বীর্য সংগ্রহের পরে তা লঘু করে ব্যবহার করা হয়, তাই একটি ষাঁড়ের বীর্য নিয়ে কয়েক হাজার পশুকে গর্ভবতী করা যেতে পারে। প্রাকৃতিক প্রজনন পদ্ধতিতে এটি কখনোই সম্ভব নয় ।
- যেসকল ষাঁড় প্রাকৃতিক ভাবে সঙ্গমে সক্ষম নয়, তাদের থেকেও বীর্য সংগ্রহ করে কৃত্রিম-প্রজননে ব্যবহার করা যেতে পারে
- এই পদ্ধতিতে গর্ভধারণ ক্ষমতার হার বৃদ্ধি পায়
কৃত্রিম প্রজননের অসুবিধা :
- এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গেলে বিশেষ যন্ত্রপাতি এবং প্রশিক্ষিত কর্মী থাকা প্রয়োজন
- যন্ত্রপাতিগুলিকে ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত এবং সঠিক স্বাস্থ্য সচেতনতা মেনে চলা উচিত, নতুবা গাভীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে
- যে ব্যক্তি এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করবেন, তাঁর গাভীর প্রজনন তন্ত্র সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন
কৃত্রিম প্রজননের সঠিক সময়:
যদি সকালে গাভীর মধ্যে গরম হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়, তাহলে সন্ধ্যার দিকে তার কৃত্রিম প্রজনন করানো উচিত। আর যদি রাত্রিবেলায় গাভী গরম হয়, তাহলে পরদিন সকালে তার প্রজনন করানো দরকার ।
কৃত্রিম প্রজনন একটি অত্যন্ত সহজ এবং লাভজনক প্রযুক্তি। দেশি গাভীকে উন্নত প্রজাতির ষাঁড়ের বীর্য দ্বারা গর্ভবতী করলে গাভীটি একটি সংকর প্রজাতির সন্তান উৎপাদন করে। এই বাছুরটি ভবিষ্যতে আরো বেশি পরিমাণ দুগ্ধ উৎপাদন করার ক্ষমতা ধারণ করে এবং কৃষকদের লাভের পথ সুগম করে। তাই কৃষক বন্ধুদের অবশ্যই কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তিটিকে ব্যবহার করা উচিত।
তথ্যসূত্র - ড. প্রসন্ন পাল
অনুবাদ - স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
Share your comments