কোয়েলের বাচ্চার ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা এবং যত্ন

সদ্য ফুটন্ত কোয়েলের বাচ্চা খুবই ছোট থাকে। এক দিন বয়সের কোয়েলের বাচ্চার ওজন মাত্র ৫-৭ গ্রাম থাকে। তাই ঠান্ডা বা গরম কোনটাই তারা সহ্য করতে পারে না।

KJ Staff
KJ Staff
কোয়েলের বাচ্চার ব্রুডিং।

কৃষিজাগরন ডেস্কঃ সদ্য ফুটন্ত কোয়েলের বাচ্চা খুবই ছোট থাকে। এক দিন বয়সের কোয়েলের বাচ্চার ওজন মাত্র ৫-৭ গ্রাম থাকে। তাই ঠান্ডা বা গরম কোনটাই তারা সহ্য করতে পারে না। এমতাবস্থায় কাঙ্খিত তাপমাত্রা এবং খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বজায় রাখতে হবে। এ সময় কোন রকম ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা বা কোন রকম ধকল হলে এর বিরূপ প্রভাব দৈহিক বৃদ্ধি, ডিম উৎপাদন এবং জীবনি শক্তির থাকার উপর পড়ে। বাচ্চাকে তাপ দেয়া বা ব্রুডিং সাধারণত দুই পদ্ধতিতে করা যায়। যেমনঃ খাঁচায় বা কেইজে ব্রুডিং এবং মেঝেতে ব্রুডিং। যে পদ্ধতিতেই তাপ দেয়া হোক না কেন তাপমাত্রার প্রয়োজনীয়তা একই রকম। প্রথম সপ্তাহে সাধারণত ৩৫০সে তাপমাত্রা দিয়ে ব্রুডিং আরম্ভ করা হয় এবং এই তাপমাত্রা প্রতি সপ্তাহে পর্যায়ক্রমে ৩.৫০সে কমিয়ে নিম্নলিখিত মাত্রায় আনতে হবে।

উপরে যে তাপের উল্লেখ করা হলো তা হলো ব্রুডারের তাপমাত্রা। থার্মোমিটারের সাহায্যে সরাসরি এই তাপমাত্রা নিরূপণ করা যায়। তবে থার্মোমিটার ছাড়াও ব্রুডারের তাপ সঠিক হয়েছে কি না তা ব্রুডারের বাচ্চার অবস্থান দেখে বুঝা যায়। বাচ্চারা যদি বাল্বের কাছে জড়োসড়ো অবস্থায় থাকে তবে বুঝতে হবে তাপমাত্রা কম হয়েছে। আর যদি বাল্ব থেকে দূরে গিয়ে থাকে তবে বুঝতে হবে তাপমাত্রা অধিক। অন্যদিকে বাচ্চাগুলো যদি চারিদিকে সমভাবে ছড়িয়ে থাকে এবং স্বাভাবিক ঘুরাফেরাসহ খাদ্য পানি গ্রহণ করতে থাকে তবে বুঝতে হবে পরিমিত তাপমাত্রা আছে। বাংলাদেশে গরমের সময় দুই সপ্তাহ এবং শীতের সময় তিন চার সপ্তাহ কৃত্রিম উপায়ে তাপ দিতে হয়। গবেষণা থেকে জানা যায় যে, দুই সপ্তাহ কেজে ব্রুডিং করে পরবর্তীতে মেঝেতে পালন করলে মৃত্যু হার অনেক কম হয় এবং বাচ্চার ওজন অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। কোয়েলের মৃত্যুহার নির্ভর করে এদের উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার উপর। ব্রুডিংকালীন পর্যাপ্ত তাপ প্রদান করতে না পারলে বাচ্চার মৃত্যুহার নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। কাজেই এ সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর বয়স্ক কোয়েলের মৃতু্যহার তুলনামূলকভাবে খুব কম।

ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফোটার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্রুডিং ঘরে এনে প্রথমে গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি এবং পরে খাদ্য দিতে হবে। খাদ্যের সাথে সাথে পর পর তিনদিন গ্লুকোজ পানি পান করতে দেয়া ভাল। তারপর ভিটামিন জলের সঙ্গে তিন দিন সরবরাহ করতে হবে। প্রথম সপ্তাহ খবরের কাগজ বিছিয়ে তার উপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হবে এবং প্রতিদিন খবরের কাগজ পরিবর্তন করতে হবে। এক সপ্তাহ পর ছোট খাবার পাত্র বা ফ্লাট ট্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। জলের পাত্রে বাচ্চা যাতে পড়ে না যায় সেজন্য মার্বেল অথবা কয়েক টুকরা পাথর খন্ড জলের পাত্রে রাখতে হবে। সর্বদাই পরিষ্কার-পরিচছন্ন পানীয় জল সরবরাহ করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ এই পদ্ধতিতে কোয়েলের বাচ্চা উৎপাদন করলে বেশি লাভবান হবেন

অন্যান্য পোল্ট্রির মত কোয়েলের জীবন চক্রকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ বাচ্চা, বাড়ন্ত এবং বয়স্ক। অনেকে আবার কোয়েলের জীবনচক্র সংক্ষিপ্ত বিধায় তাকে শুধু বাচ্চা এবং বয়স্ক এই দুইভাগে ভাগ করেন। স্বাভাবিকভাবে ১-৩ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাচ্চা বলা হয়। ৩-৫ সপ্তাহ বয়সের কোয়েলকে বাড়ন্ত এবং ৫ সপ্তাহের অধিক বয়সের কোয়েলকে বয়স্ক বলে। অধিকতর সহজ ব্যবস্থাপনার জন্য এই অধ্যায়ের কোয়েলের জীবন চক্রকে দুই ভাগে যেমনঃ ১-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চা এবং তিন সপ্তাহের বেশি বয়েসের কোয়েলকে বয়স্ক কোয়েল বলে অভিহিত করা হয়েছে।

খাবার পাত্র বাচ্চা অবস্থায় ফ্লাট ট্রে বা ছোট খাবার পাত্র দিতে হবে যেন খাবার খেতে কোনো রকম অসুবিধা না হয়। স্বাভাবিকভাবে প্রতি ২৮টি বাচ্চার জন্য একটি খাবার পাত্র (যার দৈর্ঘ্য ৫০৩ সেমি, প্রস্থ ৮ সেমি এবং উচ্চতা ৩ সেমি) এবং প্রতি ৩৪ টি বয়স্ক কোয়েলের জন্য একটি খাবার পাত্র (যার দৈর্ঘ্য ৫৭ সেমি প্রস্থ ১০ সেমি এবং উচ্চতা ৪ সেমি) ব্যবহার করা যেতে পারে। দিনে দুইবার বিশেষ করে সকালে এবং বিকালে খাবার পাত্র ভাল করে পরিষ্কার করে মাথা পিছু দৈনিক ২০-২৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে। উল্লেখ্য প্রথম সপ্তাহ থেকে ৫ গ্রাম দিয়ে শুরু করে প্রতি সপ্তাহে ৫ গ্রাম করে বাড়িয়ে ২০-২৫ গ্রাম পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রতিটি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১.২৫ থেকে ২.৫ সেমি (১/২ থেকে ১ ইঞ্চি) খাবার পাত্রের জায়গা দিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ বিকল্প আয়ের উৎস: কোয়েল পাখি পালন

জলের পাত্রে সর্বদাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পানীয় জল সরবরাহ করতে হবে। প্রতিটি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ০.৬ সেমি (১/৪ ইঞ্চি) পানির পাত্রের জায়গা দিতে হবে। অটোমেটিক বা স্বাভাবিক যে কোনো রকম পানির পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতি ৫০টি কোয়েলের জন্য একটি জলের পাত্র দেয়া উচিত। নিপল ড্রিংকার বা কাপ ড্রিংকারও ব্যবহার করা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রতি ৫টি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১টি নিপল বা কাপ ড্রিংকার ব্যবহার করা যেতে পারে।

আলোক ব্যবস্থাপনা কাঙ্খিত ডিম উৎপাদন এবং ডিমের উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য দৈনিক ১৪-১৮ ঘন্টা আলো প্রদান করা প্রয়োজন। শরৎকাল এবং শীতকালে দিনের আলোক দৈর্ঘ্য কম থাকে তাই কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করা হয় । পুং কোয়েল, যেগুলো প্রজনন কাজে এবং শুধুমাত্র মাংস উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয় সেগুলোর জন্য দৈনিক ৮ ঘন্টা আলোকই যথেষ্ট। প্রাকৃতিক আলোর সাথে কৃত্রিম আলোর সমন্বয় করে নিম্ন সারণী মোতাবেক আলো দিলে কাঙ্খিত ডিম উৎপাদন সম্ভব।

Published On: 28 March 2023, 03:41 PM English Summary: Brooding management and care of quail chicks

Like this article?

Hey! I am KJ Staff . Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters