বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন পেশা মৌমাছি প্রতিপালন। সামান্য বিনিয়োগেই এই পেশায় লাভবান হওয়া যায়, তাই যুগের পর যুগ মানুষ মৌমাছি চাষ করে আসছে। গবেষণায় প্রমাণিত মৌমাছি বনজ এবং কৃষিজ ফসলের উৎপাদন অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয় শুধুমাত্র ফুলের পরাগায়নের মাধ্যমে। প্রাকৃতিক সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্য মৌমাছি পালন খুবই প্রয়োজনীয়। বিশ্বখ্যাত মৌমাছি বিশেষজ্ঞ হ্যাজেল থমাস জানিয়েছেন, মৌমাছি পালন মানুষের বড় শখের বিষয়। মোমাছি পালন খুবই লাভজনক এক পেশা। বিজ্ঞানী ল্যাংস্ট্রোথের হাত ধরেই আধুনিক উপায়ে মৌমাছি চাষ শুরু হয়। তাই বৈজ্ঞানিক ল্যাংস্ট্রোথকে আধুনিক মৌমাছি চাষের জনক বলে অভিহিত করা হয়।
স্বীকৃতি (Recognition)
মৌমাছির জীবনচক্র’ নিয়ে গবেষণা প্রারব্ধ ফল অষ্ট্রিয়ান বৈজ্ঞানিক Karl Von-Frisch-কে নোবেল এনে দেয়। ‘The dancing bees’ হল তাঁর লেখা মৌমাছি সংক্রান্ত একটি জনপ্রিয় বই। মৌমাছি যে তিন ধরনের তিনিই তা প্রমাণ করেন। তাঁর গবেষণায় উঠে আসে রানী মৌমাছি, পুরুষ মৌমাছি এবং কর্মী মৌমাছির বিষয়ে। রানী মৌমাছি ও পুরুষ মৌমাছি, এই গোত্রের বংশবিস্তার ঘটাতে সাহায্য করলেও, শ্রমিক মৌমাছির অবদানও কোনও মতেই খাটো করা যাবে না। এই শ্রেণীর মৌমাছি বন্ধ্যা হলেও, মৌচাক বানানো থেকে মধু সংগ্রহ সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ এরাই সম্পন্ন করে।
মধু: (Honey)
মৌমাছি যে মধু উৎপন্ন করে তাতে ৪৫ রকমের খাদ্য উপাদান সঞ্চিত থাকে। মানুষের ক্ষেত্রে মধু সেবনের স্বাস্থ্যকর দিক অজস্র। মধু নিয়মিত খেলে সর্দি কাশির উপশম হওয়া থেকে শুরু করে, শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমে। গবেষণায় প্রমাণিত, নিয়মিত মধু খেলে স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটে, ত্বকের রোগের সমাধানেও মধু এক কার্যকরী ওষুধ। এমনকি মাথায় খুশকি হলেও মধুর ব্যবহারে তা বিদায় নেয়। সুষ্ঠ নীরোগ দেহ সাথে দীর্ঘায়ু পেতে গেলেও নিয়মিত মধু সেবন আবশ্যক।
মোম (Wax):
মৌচাক থেকেই মোম মেলে। বর্তমানে মোম একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। মোমবাতি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক তৈরিতে মোমের ব্যবহার করা হয়।
মৌমাছির বিষ (Bee Venom):
মৌমাছির বিষও মানব দেহ সুষ্ঠ করতে ব্যবহার করা হয়। স্টিং থেরাপি, বাতের রোগীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর হিসাবে বর্তমানে স্বীকৃত।
পরাগায়নের সুবিধা:
মৌমাছি পরাগায়নের ক্ষেত্রে উপকারী, ফলে কোনও ব্যক্তিগত বাগানে মৌমাছির চাষ হলে সেই বাগানের ফল-ফুল-সবজির শ্রী-বৃদ্ধি ঘটে।মনে রাখা দরকার মৌমাছি পালনে খুব একটা রক্ষনাবেক্ষনের দরকার পড়ে না।
অল্প বিনিয়োগে লাভবান ( Benefit through small invest):
অ্যাপিস মেলিফেরা, অ্যাপিস সেরানা, অ্যাপিস ডরসেটা ও অ্যাপিস ফ্লোরিয়া এই চার ধরনের মৌমাছি মূলত দেখতে পাওয়া যায়। ভারতে অ্যাপিস সেরানা প্রজাতির মৌমাছি পালন খুবই জনপ্রিয়। গোটা বছর এই প্রজাতির মৌমাছি চাষ করলে অনেকটা মধু মেলে। যা বিক্রি করলে বাজারে ভালো মতোই লাভের মুখ দেখতে পাওয়া যায়
অ্যাপিস মেলিফেরা মৌমাছি চাষে অনেক বেশি মধু পাওয়া যায়। কম করে বছরে ৫০ কেজি মধু এই মৌমাছি পালনে মেলে। বাজারে এই প্রজাতির মৌমাছি প্রাপ্ত মধুরও চাহিদা প্রচুর। তথ্যানুযায়ী গোটা বিশ্বে চীন মধু উৎপাদনে সবার সেরা। ভারতেরও মধু রফতানিতে সমগ্র বিশ্বের কাছে এক আলাদা উচ্চতা রয়েছে। তবে ভারতে যেই পরিমাণে অন্যান্য ফল-সবজির চাষ হয়, ততটাও মৌমাছি পালনে এখানকার চাষিরা এখনো একাত্ম হতে পারেননি। তবে দিন বদলাচ্ছে, বহু তরুণই এখন মৌ-পালনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অল্প বিনিয়োগে চড়া লাভের আশাতেই তাঁরা মৌমাছি পালনে কাজে হাত লাগাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: Village Organica-:খাঁটি দেশীয় খাদ্যসামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে এই ই-কমার্স
Share your comments