'রাক্ষুসে মাছ'-বিপদ কোথায়? 'MFOI, VVIF কিষাণ ভারত যাত্রা' গুজরাটের বিভিন্ন গ্রামে পৌঁছে কৃষকদের সম্মানিত করেছে কাঁচা আম খেলে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ হবে এবং এই সমস্যাগুলো দূর হবে!
Updated on: 3 July, 2021 1:50 PM IST
Shoal Fish (Image Credit - Google)

আমাদের দেশীয় মাছগুলির মধ্যে যে বিশেষ কয়েকটি মাছের আস্বাদন ও পুষ্টির যুগলবন্দী ছাড়া সহজপাচ্য পথ্য ও ঔষধিগুন সম্পন্ন খাদ্য হিসাবে বিশেষ গুরুত্ব আছে শোল মাছ তাদের মধ্যে অন্যতম। এই মাছটির আরও কয়েকটি গুনের কারণে অন্তত দুটি রাজ্যের সেরা মাছের শিরোপা পেয়েছে দীর্ঘদিন আগেই (অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা রাজ্য)।

আক্ষেপের বিষয় আমাদের রাজ্যে এই মাছটি এখনও তেমনভাবে সমাদৃত নয়। বাজারে যেটুকু পাওয়া যায়, সবটাই প্রায় প্রকৃতিজাত। এই মাছটির চাষ পদ্ধতির সরলীকরণ করা না গেলে আগামীদিনে যোগানে অপ্রতুলতা থেকেই যাবে। সর্বত্রই এই মাছটি জীবন্ত অবস্থাতেই কেবল বিক্রি হয় এবং ক্রেতাও কখনই মৃত/বরফ দেওয়া মাছ কিনবেন না – অর্থাৎ পুষ্টির নিরিখে এদিক থেকেও সবসময় এগিয়ে আছে টাটকা ও একটি মাত্র কাঁটার মাছটি। ফলে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ যে কোন মানুষ অনায়াসেই খেতে পারবেন কোন অসুবিধা না বোধ করেই এই পুষ্টি সমৃদ্ধ মাছটিকে।

প্রকৃতিতে যেটুকুও এখন পাওয়া যায় – পোনা মাছ চাষের পুকুর প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত মহুয়া খোল বা অনুরূপ উপাদান (যেমন, রোটিনোন) প্রয়োগের ফলে শুরুতেই এই মাছ মারা পড়ে। এ এক বিচিত্র পদ্ধতি চলে আসছে অনাদিকাল থেকে – যেন রাজ্যে অন্য মাছ থাকবে না। চাষ হবে শুধু কাতলা, রুই, ম্রিগেল, বাটা ইত্যাদি মাছগুলি। এ মাছ চাষের অপছন্দের তালিকাভুক্ত। কারন সে নাকি রাক্ষুসে মৎস্যভুক মাছ, তাই তাকে সমূলে উৎপাটিত করা দরকার। নিজের পছন্দের খাবার না পেলে যে কোন মাছ কেন যে কোন প্রাণী যে রাক্ষুসে স্বভাব ধারন করতে পারে এই ধারণা কেন যে হয় না, সেটাই চিন্তার। অন্যন্য রাজ্যে বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে এই মাছ অতি সমাদৃত।

মাছ চাষের পদ্ধতি (Fish Farming) -

যে কোন ধরণের পুকুরে (পুকুর না থাকলেও – ১০ ফুট* ৬ ফুট* ৫ ফুট দৈর্ঘ্য/প্রস্থ/গভীরতায় মাটি খুঁড়ে) পিট তৈরী করে পলিথিন চাদর বিছিয়ে ছবিতে দেখানো হয়েছে যেরকম বৃষ্টির জল ধরে নিয়ে - তাতে অন্য পুকুর থেকে প্ল্যাঙ্কটন নেটের সাহায্যে প্রাণীকণা যোগান দিয়ে – অন্য পুকুর বা জলা থেকে অ্যাজোলা পানা ছেড়ে দিয়েও সেই পুকুরে বা পিটেও) চাষ করা সম্ভব এই মাছের। ডোবা জাতীয় জলাশয় বা ছোট পুকুর যেখানে অল্প কচুরীপানা, কলমি/শুষুনি/শাপলা আছে, সেখানে এই জাতীয় পোনা প্রাকৃতিকভাবেই পাওয়া যেতে পারে – কোন প্রণোদিত প্রজননের দরকারই পড়ে না। যদি তা না পাওয়া যায়, যে কোন ছোট পুকুর বা বড় পুকুরে বাঁশের/নাইলনের খাঁচা বসিয়ে যে কোন জলাভূমি থেকে চারা সংগ্রহ করে কিংবা রাজ্যের বিশেষ কয়েকটি মাছের বাজারে (যেমন রাজেন্দ্রপুর বটতলা রাত্রির মাছের বাজার, ক্যানিং স্টেশন সংলগ্ন মাছের বাজার, হুগলী শ্রীরামপুর কিংবা পূর্ব বর্ধমান কালনা) সারা বছর অল্পবিস্তর পোনা পাওয়া যায়- যা সংগ্রহ করে এনে চাষ করা সম্ভব। 

এই মাছটির দুটি ফুলকা ছাড়াও অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র থাকায় এরা বাড়তি সুবিধা পায়- কম হলেও বেঁচে থাকতে পারে সহজে – যেখানে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকে কম কিংবা কার্বনডাই অক্সাইড ও অ্যামোনিয়া থাকে মাত্রায় বেশী। এই জাতীয় জলাশয়ে জিওল মাছ নয়, এরকম মাছের চাষ সম্ভব নয়। এই মাছ চাষে তাই ঝুঁকি কম, বিনিয়োগের অর্থ তুলনামূলকভাবে অনেক কম সময়ে লভ্যাংশ সহ ফেরত পাওয়া যায়, চারা পরিবহনের সুবিধা আছে – মাছ বিক্রয় না হলে ফের তাকে পুকুরজাত করা যায় বলে চাষীর লোকসানের সম্ভবনা থাকে না একেবারেই।

ছোট অগভীর পুকুর যেখানে তিন চার ফুট জল থাকে অন্তত, চার মাস সেখানেই এই মাছের চাষ সম্ভব। পুকুর প্রস্তুতির জন্য প্রায় কিছুই করতে হয় না। মাঝে মধ্যে জলের পিএইচ দেখে নিয়ে প্রয়োজনবোধে চুন প্রয়োগ করার দরকার হতে পারে, তাও তেমন জরুরী নয়। পুকুরে রাত্রের দিকে ৩ ওয়াট –এর একটি আলো জ্বালানো থাকলে পোকামাকড়, মশার লার্ভা বাড়তি খাবার হিসাবে পাওয়া সম্ভব। অ্যাকোরিয়ামের দোকানে থেকে পাওয়া টিউবিফেক্স বা সরু কেঁচো, পিঁপড়ের ডিম এদের পছন্দের খাবার। বড় হয়ে গেলে গেঁড়ি বা গুগলির মাংস টুকরো করে সেদ্ধ অবস্থায় ছোট করে যোগান দিলেও খাবার হিসাবে তা খুব ভালো কাজ করে। চারা বাইরে থেকে কিনে এনে ছাড়ার আগে একটু পরিচর্যার প্রয়োজন হতে পারে। খুব সামায় পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে (১ লিটার জলে ২ গ্রাম মাত্র) চুবিয়ে বা ডুবিয়ে নিয়ে (১ মিনিটের জন্য) তবেই পুকুরে ছাড়া ভালো, নচেৎ রোগ বালাইয়ের সম্ভবনা থেকে যেতে পারে। মাছের বাড়বৃদ্ধি নজর রাখার জন্য বা মধ্যবর্তীকালীন সময়ে অবস্থা স্বাভাবিক আছে কিনা দেখার জন্য পুকুরের মধ্যেই মাটির তৈরী পাইপ (আগে ব্যবহৃত হত বাড়ির ছাদ থেকে বৃষ্টির জল নির্গমনের জন্য) বা পিভিসি পাইপের বড় টুকরো রেখে দেওয়া যেতে পারে। আলাদা করে জাল না ফেলে যে কোন একটি বা দুটি পাইপের খোলা মুখ হাতে চেপে জাল বাইরে আনলেই দু’একটি মাছ পাওয়ার সম্ভবনা থাকে, যা থেকে বাড়বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য কেমন, তা দেখা সম্ভব। জলের গুণমান মাঝেমধ্যে দেখে নেওয়া যেতে পারে। অক্সিজেন কম থাকলেও চিন্তা থাকে না, তবে পিএইচ ৭.৫-৭.৭ থাকা দরকারই। কম হলে চুন প্রয়োগ আর যদি কোন কারনে বেশী হয়ে যায়, তাহলে টোটকা হিসাবে তেঁতুল গাছের ডাল পাতাসমেত দুদিন রেখে তুলে নিলেই বেশী পিএইচ কমে স্বাভাবিক হতে পারে।

খাদ্য প্রয়োগ (Fish Feed) - 

পরিপূরক খাবার প্রয়োগ একান্ত জরুরী – আগে যেমন বলা হয়েছে, প্রাণীকণার যোগান (৫০ লিটার জলে ১.৫ ml আনুমানিক) টিউবিফেক্স কেঁচো খুব কার্যকরী ও পছন্দের খাবার। একটু বড় হলেই কিন্তু পিঁপড়ের ডিম, গুগলি সেদ্ধ দেওয়া যেতে পারে। তার খাবার প্রয়োগের নির্দিষ্ট একটি বা দু’টি জায়গা বেছে নিয়ে সেই জায়গা থেকেই দিনে এক বা দু’বার খাবার প্রয়োগ ধৈর্য সহকারে করতে হবে। রাত্রে বাল্বের আলোর প্রভাবে কিছু কীটপতঙ্গের যোগান বাড়তি খাবার হিসাবে কাজ করে। মশার লার্ভা এদের অত্যন্ত পছন্দের খাবার। তাই যেখানে শোল মাছ চাষ হবে, সেখানে মশার উৎপাত থাকবে না ধরে নেওয়া যেতে পারে।

রোগ-বালাইয়ের সংক্রমণ সচরাচর বেশ খানিকটা কম থাকে, তবে পুকুরে বা জলাশয়ে মাসে একদিন করে নিমপাতা, কাঁচা হলুদের সঙ্গে তুলসী পাতা ও রসুনের কোয়া মিশিয়ে জলে প্রয়োগ করা যেতে পারে – যেমনভাবে গ্রীষ্মকালে বাড়িতে তুলসী গাছে সারাদিন ধরে ফোঁটা ফোঁটা করে জল দেওয়া হয়। এজন্য বাতিল করা পেট (PET) বোতলে এই মিশ্রণ জলে গুলে উল্টো করে ও পিছনে একটি সূঁচের সাহায্যে ছিদ্র করে নিয়ে এবং ছিপিতে করে দেওয়া ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে ঝোলানো অবস্থায় এই মিশ্রণ জলে পড়লে সারাদিন ধরে, জলে রোগ সংক্রমণের সম্ভবনা কমে।

মাছ ধরা হয়ত কিছুটা শ্রমসাধ্য হবে, কিন্তু পুকুরে জল কমে গেলে জাল টেনে মাছ ধরার তেমন অসুবিধা হয় না। পরিপূরক খাদ্য তৈরী করতে হলে শুঁটকি মাছের গুঁড়ো, সেদ্ধ করা গম বা খুদের সাথে মিশিয়ে চিটে গুড় ও সাবুর সাহায্যে আঠালো অবস্থায় মেখে নিয়ে ট্রে বা পুকুরে রাখা পাইপের মধ্যে দেওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন - Cattle Care – জানেন কি নবজাতক বাছুরের যত্ন নেবেন কীভাবে? জেনে নিন সহজ কিছু পদ্ধতি

একটি তিন কাঠা পুকুর থেকে ৭-৮ মাসের মধ্যে ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজন হতে পারে একটি মাছের, যার ফলে মাছের উৎপাদন ৫০০ কেজি সহজেই সম্ভব। আর্থিক দিক থেকে তাই এই মাছ চাষ অত্যন্ত লাভজনক।

আরও পড়ুন - Poultry Farm – পোল্ট্রি পালনে হাঁস মুরগির রোগ প্রতিরোধ কীভাবে করবেন? জেনে নিন, বর্ষায় পোল্ট্রি ফার্ম পরিচর্যা পদ্ধতি সম্পর্কে

English Summary: Earn more from shoal farming with less investment
Published on: 03 July 2021, 01:50 IST

எங்களுக்கு ஆதரவளியுங்கள்!

প্রিয় অনুগ্রাহক, আমাদের পাঠক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকরা আমাদের কৃষি সাংবাদিকতা অগ্রগমনের অনুপ্রেরণা। গ্রামীণ ভারতের প্রতিটি কোণে কৃষক এবং অন্যান্য সকলের কাছে মানসম্পন্ন কৃষি সংবাদ বিতরণের জন্যে আমাদের আপনার সমর্থন দরকার। আপনার প্রতিটি অবদান আমাদের ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান।

এখনই অবদান রাখুন (Contribute Now)