শূকর উৎপাদন বর্তমানে একটি অর্থকরী চাষ হিসাবে বিবেচিত। প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাদ্যের অপুষ্টি দেশে বহুলাংশে বর্তমানে বেড়েছে। দেশে শূকর উৎপাদন প্রচুর পরিমাণে হলে এই সমস্যার অনেকটা সমাধান ঘটতে পারে। এই ক্ষেত্রে শূকর মাংসের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে লক্ষ্যনীয়ভাবে। বৈজ্ঞানিক প্রথায় শূকর উৎপাদন করে বহু মানুষ বর্তমানে সংসার চালাচ্ছেন। উত্তরবঙ্গে ডুয়ার্স অঞ্চলে শূকর প্রতিপালন ভীষণই সম্ভাবনাময় অবস্থায় রয়েছে।
এই অঞ্চলে এবং উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে শূকরের মাংস খাদ্য হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। অন্যান্য জাতের শূকরের থেকে এখানকার ঘুঙরু জাতের শূকর অধিক পরিমাণে চাষ হয়। সাধারণ খাবার খেয়েই শূকর খুব সহজেই বেঁচে থাকে। আলাদা করে এই প্রাণীর তেমন কোনও পরিচর্যা নিতে হয় না। শুকরের মাংস স্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা প্রচুর। উত্তরবঙ্গের বহু ভূমিহীন শ্রমিক ও প্রান্তিক চাষিরা অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য শূকর প্রতিপালন করে থাকেন।
ঘুঙরু শূকর পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল ও ভুটানের হিমালায়ের পাদদেশ এলাকায় বহুল পরিমানে মেলে। এদের গায়ের রং কালো, চওড়া কান এবং দেহ বিশালাকার। শান্ত স্বভাবের ঘুঙরু জাতের শূকরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি। প্রজনন ক্ষমতাও এই প্রজাতির শূকরের অত্যন্ত বেশি। এই শূকরের বাচ্চা দেওয়ার ক্ষমতাকে বিদেশী শূকর লার্জ হোয়াইট ইয়র্কশায়ারের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
ঘুঙরু শূকরের বৈশিষ্ঠ্য (Characteristics)
১) এই জাতের শূকরের বৃদ্ধির হার খুব বেশি। ৬-৭ মাসে ঘুঙরু জাতের শূকরের ওজন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কেজি হতে পারে।
২) একটি ঘুঙরু জাতের শূকরীর থেকে একবারে গড়ে ১২-১৫ টি বচ্চা পাওয়া যেতে পারে। শূকর সাধারণত বছরে দুই বার বাচ্চা দেয়। অর্থাৎ একটি শূকরীর থেকে সাড়া বছরে গড়ে ২৪-৩০ টি বচ্চা পাওয়া যেতে পারে।
৩) এই প্রজাতির শূকর সুষম খাদ্য ছাড়াও সব রকমের উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে আলাদা করে প্রচুর পরিমানে খাদ্য এদের জন্য কিনতে হয় না। ঘরের বা দোকানের উচ্ছিষ্ট খেয়ে এরা অনেকাংশে খাদ্য খরচ বাঁচিয়ে যায়।
৪) শূকর পালনে পরিশ্রম অনেকাংশে কম, বরং লাভের পরিমাণ দ্বিগুন।
আরও পড়ুন: Turkey Rearing: টার্কি চাষের সহজতম পদ্ধতি
শূকরের বাসস্থান তৈরী (Making of Farm)
শূকর খামারের চারিদিকে প্রচুর গাছপালা থাকা জরুরি। রোদ, আলো, বাতাস যাতে খামারে চলাচল করতে পারে তার খেয়াল রাখা উচিত। শূকরের বাসস্থান বা ঘর সবসময় শুকনো রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে ঘরে মেঝেতে যেন কোনও গর্ত না থাকে। প্রচণ্ড গরম এবং অত্যধিক বর্ষা শূকর সহ্য করতে পারে না। তাই ঘর বানানোর সময় সেইদিকে খেয়াল রেখে ঘর তৈরী করা উচিত। লোকালয় থেকে একটু দূরে শূকরের খামার বানানো ভালো। খামারের কাছাকাছি যাতায়াত ও নিকাশী ব্যবস্থা যেন ঠিক থাকে তাতে লক্ষ্য রাখা উচিত। ছায়াযুক্ত স্থানে খামার ঘর বানানো সবসময় দরকার। বাসস্থানের ভিতর কোন পোকামাকড় বাঁ ইঁদুর যাতে ঢুকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: Boal Fish Farming: দেখে নিন বোয়াল মাছ চাষ ও প্রজনন পদ্ধতির সম্পূর্ণ পদ্ধতি