গুলশা মাছ চাষকৃত অন্যান্য ছোট মাছগুলোর মধ্যে অন্যতম। মিঠাপানির এই প্রজাতির মাছটি একসময় বেশি পরিমাণে নদী-নালা, খাল-বিল এবং হাওর-বাওড়ে পাওয়া যেত। বাংলাদেশে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বর্তমানে এই মাছের পোনা উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং এই মাছ চাষ কৃষকদের জন্য বেশ লাভজনক |
গুলশা মাছ চাষের সুবিধাঃ
১) এই মাছ মৌসুমী পুকুর, বার্ষিক পুকুর এবং অন্যান্য জলাশয়ে চাষ করা যাবে।
২) এই মাছ চাষে পুকুরের সব স্তরের খাবারের ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
৩) ৫-৬ মাসের মধ্যেই রুইজাতীয় মাছের পাশাপাশি গুলশা মাছ বাজারজাত করা যাবে।
৪) শুধু রুইজাতীয় মাছ চাষের চেয়ে গুলশা মাছ চাষে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়।
৫) গুলশা মাছ সুস্বাদু হওয়ার কারণে এর বাজার মূল্যও বেশি।
পুকুর প্রস্তুতি:
১) শুকনো মৌসুমে পুকুর থেকে জলজ আগাছা পরিষ্কার করে পাড় মেরামত করতে হবে।
২) ছোট মাছ চাষের বেলায় পুকুর শুকানো উচিত নয়। যার ফলে বার বার ঘন ফাঁসের জাল টেনা দিয়ে
৩) রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী অপসারণ করতে হবে।
৪) প্রতি শতকে ১-২ কেজি পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে। মাটির গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে চুনের মাত্রা কম-বেশি করা যাবে।
আরও পড়ুন - Malabar spinach farming: সহজ উপায়ে পুঁই শাক চাষে অধিক উপার্জন করুন
৫) পুকুরে মাছের পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মানোর জন্য পোনা ছাড়ার আগেই পরিমাণমতো সার ভালোভাবে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি শতকে ৪-৬ কেজি গোবর সার, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
৬) জলের রং সবুজ/বাদামি সবুজ হলে পোনা ছাড়তে হবে।
পুকুরে পোনা মজুদঃ
১) পুকুরে মাছ চাষের সফলতা সাধারণত নির্ভর করে সুস্থ, সবল ও ভালো প্রজাতির পোনা সঠিক পরিমাণে মজুদের ওপর।
২) পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ার আগে পরিবহনকৃত পোনাগুলো পুকুরের পানির তাপমাত্রার সাথে খাপখাইয়ে নিতে হবে। পরে ১০ লিটার পানি ও ১ চামচ (৫ গ্রাম) পটাসিয়াম পারম্যাংগানেট বা ১০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে নিতে হবে এবং উক্ত দ্রবণে পোনাগুলোকে ১-২ মিনিট গোসল করিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
৩) কার্পজাতীয় মাছের সাথে নিম্নে বর্ণিত ছকের নমুনা অনুযায়ী ১০-১২ সেমি আকারের কার্পজাতীয় মাছ ও ৫-৭ সেমি আকারে গুলশা মাছের সুস্থ সবল পোনা মজুদ করতে হবে।
খাদ্য:
১০-১২ ঘণ্টা ভিজানো সরিষার খৈলের সাথে শুকনো গমের ভুসি বা চালের মিহি কুঁড়া মিশিয়ে গোলাকার বল তৈরি করে নিতে হবে। এরপর পুকুরে মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের ৫-৩ % হারে পুকুরে দৈনিক খাবার সরবরাহ করতে হবে। শীতকালে পুকুরে খাবারের পরিমাণ শতকরা ১-২ ভাগ হারে প্রয়োগ করতে হবে। বরাদ্দকৃত খাবার দিনে ২ বার প্রয়োগ করা উত্তম। মাসিক নমুনায়নের মাধ্যমে খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিতে হবে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর বাণিজ্যিক পিলেট খাবারও পুকুরে মাছের জন্য সরবরাহ করা যেতে পারে।
মাছ আহরণ:
গুলশা মাছ কার্পজাতীয় মাছের সাথে চাষ করা হয়ে থাকে। কারণ কার্প জাতীয় মাছ ও গুলশা মাছের একই সময়ে বড় হয় না। বেশি লাভের জন্য বড় মাছ আহরণ করে ছোট মাছগুলোকে বড় হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। গুলশা মাছের বয়স ৮-৯ মাস হলে তা ৪৫-৫০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে যা বাজারে বিক্রির উপযোগী।
আরও পড়ুন - Pangas Fish Farming: জেনে নিন পাঙ্গাস মাছের চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা