এই 20টি ব্যবস্থা পোল্ট্রি খামারকে বার্ড ফ্লু থেকে নিরাপদ রাখবে! ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিটের জন্য ৫০% পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া যাবে, শীঘ্রই আবেদন করুন এই হাইব্রিড জাতের টমেটো 900 কুইন্টাল প্রতি হেক্টর ফলন দেবে দুধের সঠিক সময় বেছে নিলে উৎপাদন বাড়বে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
Updated on: 12 March, 2021 3:39 PM IST
Parameters (Image Credit -Google)

মাছ চাষে (Fish Farming) সফলতার জন্য মৎস্য চাষীর (Fisherman) প্রথম এবং প্রধান কাজ হল জল ও মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করা করা। মাছ চাষে সফলতা অনেকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যার মধ্যে জল ও মাটির উপযুক্ত স্বাস্থ্য অন্যতম। হ্যাঁ উপযুক্ত, অর্থাৎ আদর্শ মাত্রা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা প্রয়োজন। তাই যেকোনো জলাশয় থেকে মাছ চাষ করতে হলে জল ও মাটির গুনাগুন সম্বন্ধে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

জলাশয়ের তলদেশের মাটিই উপরে অবস্থিত জল ভান্ডারের সব ভৌত ও রাসায়নিক গুনাগুনের মুখ্য সঞ্চালক। মাটির উপর একদিকে যেমন জলাশয়ের জল ধারণ ক্ষমতা নির্ভর করে, অন্যদিকে মাছের পুষ্টির জন্যও বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তাই জল ও মাটির গুনাগুন নির্দিষ্ট দিন অন্তর মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে নিতে হবে। 

প্রতিটি ব্লকে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস্য দপ্তরের “জল ও মাটির পরীক্ষাগার” থেকে চাষিভাইয়েরা বিনামূল্যে পরীক্ষা করে নিতে পারেন। আবার মাছচাষি ভাইয়েরা নিজেরাই পুকুরের জল-মাটির পরীক্ষার জন্য “ফিল্ড কিটস বক্স” কিনে নিতে পারেন। আলাদা আলদা করেও পিএইচ পেপার বা ডিজিটাল পেন, ডিও-মিটার, স্যালিনো মিটার প্রভৃতি  কাছে রাখতে পারেন।  

যেহেতু মাছের যাবতীয় শারীরিক কার্যক্রম জলের উপর নির্ভর করে, তাই সফলভাবে মাছ চাষ করতে গেলে এদের ভৌত-রাসায়নিক গুনাগুন সম্পর্কে অবহিত থাকা খুবই প্রয়োজন।

বিশুদ্ধ জল গন্ধহীন, বর্ণহীন এবং স্বাদহীন। এ ধরনের জলে মাছ চাষ হয়না। প্রাকৃতিক জলাশয়ের জলে অক্সিজেন এবং বিভিন্ন রকম অজৈব পদার্থ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে, যা মাছের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য। এরাই পুকুরের জলের রাসায়নিক অবস্থা বজায় রাখে। জলে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, কার্বন ডাই অক্সাইড, অ্যালকানিটি, মোট আয়রন প্রভৃতির পরিমাণ একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় না থাকলে মাছে রোগ ব্যাধি আসে, মাছের উৎপাদন ব্যাহত হয়।

জলের গভীরতা, রঙ, তাপমাত্রা, পিএইচ, স্বচ্ছতা, দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রভৃতি ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলীর বিশ্লেষণ করে জলের উৎপাদনশীলতা ও দূষণ সম্পর্কে অবগত হওয়া যায় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়। জলের রঙ দেখে মাছের খাবার অর্থাৎ প্ল্যাঙ্কটনের অবস্থান বোঝা যায়। হাল্কা সবুজাভ বাদামী রঙই হল উপযুক্ত।

আরও পড়ুন - মৎস্য চাষিদের জন্য ৫০ শতাংশ অনুদান দিচ্ছে সরকার, দেখুন আবেদন পদ্ধতি (50 percent subsidy for fish farmers)

মাছ চাষের জন্য জলের বিভিন্ন গুনাগুনের পরিমাপের পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকলে ভালো। তাই এদের আদর্শ মাত্রা জেনে রাখা প্রয়োজন।

এদের আদর্শ মাত্রা যেমন-  

  • প্রতি লিটার জলে ৫-১৫ মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেন।

  • জলের পি এইচ ৭.৫-৮.৫ মাত্রা আদর্শ মাছ চাষের জন্য।

  • নাইট্রোজেন বিভিন্ন অবস্থায় জলে থাকে, যেমন অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট, নাইট্রাইট।

প্রতি লিটার জলে ০.২-২ মিলিগ্রাম অ্যামোনিয়া, মুক্ত অ্যামোনিয়া হলে ০.১ এর থেকে কম হলে ভালো।

প্রতি লিটার জলে ০.২-১০ মিলিগ্রাম নাইট্রেট।

প্রতি লিটার জলে ০.৩ মিলিগ্রাম-এর কম নাইট্রাইট।

প্রতি লিটার জলে ০.০০৫–০.২ মিলিগ্রাম ফসফরাস।

প্রতি লিটার জলে ১–১০ মিলিগ্রাম কার্বন ডাই অক্সাইড ।

  • অ্যালকানিটি পরিমাপের ক্ষেত্রে, প্রতি লিটার জলে ৫০-৩০০ মিলিগ্রাম বাই কার্বনেট আয়ন ও ০-২০ মিলিগ্রাম কার্বনেট। প্রতি লিটার জলে ০.০৫-০.৫ মিলিগ্রাম মোট আয়রন (ফেরিক ও ফেরাস আয়রন)।

  • জলের স্বচ্ছতা বা ঘোলাটে ভাবের ক্ষেত্রে সেচী ডিস্ক এর গভীরতা ২৫–৫০ সেমি.।

মাছ চাষের পুকুরে জলের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর। যেমন, জলের রঙ দৈনিক পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন এবং দ্রবীভূত অক্সিজেন আর তাপমাত্রা প্রতিদিন পরিমাপ করতে পারলে ভালো। জলের পি এইচ, স্বচ্ছতা ও মুক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড সাপ্তাহিক পরিমাপ করা দরকার। পনেরো দিন (পাক্ষিক) অন্তর অ্যালকানিটি ও বাইকার্বনেট পরীক্ষা করা দরকার এবং জলের গভীরতা বা পরিমাপ ঠিকঠাক আছে কিনা, মাসে মাসে দেখতে হবে। অ্যামোনিয়া-নাইট্রোজেন, নাইট্রাইট-নাইট্রোজেন ও ফসফেট–ফসফরাস প্রতি মাসে একবার পরীক্ষা করা দরকার।

অনুরূপ ভাবে, মাছ চাষে জলাশয়ের জলের যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনই মাটিরও গুরুত্ব রয়েছে যথেষ্ট। সার্বিক ভাবে ওই জলাশয়ের জলের উপর এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে মাছের খাদ্যোৎপাদন, মাছের প্রজনন, বংশবিস্তার, মাছের বৃদ্ধি, স্বাদ ও গন্ধের ক্ষেত্রে মাটির গুরুত্ব অপরিসীম। মাছের উৎপাদনও যথেষ্ট ভাবে প্রভাবিত হয় মাটির জন্য। তাই পুকুরের মাটির স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

মাসে একবার মাটির পিএইচ ঠিক ঠাক আছে কিনা দেখে নিতে হবে। আর তিনমাস অন্তর মাটির জৈব কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফেট-ফসফরাস এর মাত্রা ঠিক আছে কিনা, দেখে নিতে হবে।

পুকুরের তলায় কাদার পরিমাণের বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই তিন মাস পর পর কাদার পরিমাণ দেখে নিলে ভালো হয়।

এভাবে জল ও মাটির গুনাগুনগুলি নির্দিষ্ট দিন অন্তর পরিমাপ করে নিতে পারলে রোগব্যাধি মুক্ত পর্যাপ্ত মাছের উৎপাদন করা সম্ভব। এভাবে যেকোনো মাছ চাষের পুকুরের জল ও মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যেতে পারে। 

তাই নিয়মিত পুকুর, জলাশয়ের জল ও মাটি পরীক্ষা করে রাখলে অতি সহজেই চাষি ভাইয়েরা রোগ মুক্ত অধিক মাছের ফলন আনতে পারবেন। বিনামূল্যে এই পরিষেবা পেতে যোগযোগ করুন মৎস্য দপ্তরে।

আরও পড়ুন - উপযুক্ত রোগ বালাইয়ের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষের কৌশল

English Summary: How to earn more from fish farming? Know what expert advice is
Published on: 12 March 2021, 03:39 IST