উপযুক্ত রোগ বালাইয়ের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষের কৌশল

দেশি পাঙ্গাসের (Yellowtail catfish) বৈজ্ঞানিক নাম: Pangasius pangasius। এরা হচ্ছে Pangasiidae পরিবারের Pangasius গণের একটি স্বাদুপানির মাছ। পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষে করণীয় সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আমাদের দেশে মাছ চাষ একটি লাভজনক পেশা। মাছ চাষ করে অনেকেই তাদের দারিদ্রতা দূর করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

KJ Staff
KJ Staff
Pangas Fish Seed
Pangas Fish (Image Credit - Google)

দেশি পাঙ্গাসের  (Yellowtail catfish) বৈজ্ঞানিক নাম: Pangasius pangasius। এরা হচ্ছে Pangasiidae পরিবারের Pangasius গণের একটি স্বাদুপানির মাছ। পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষে করণীয় সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আমাদের দেশে মাছ চাষ একটি লাভজনক পেশা। মাছ চাষ করে অনেকেই তাদের দারিদ্রতা দূর করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

বর্তমান সময়ে মাছ চাষের সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। আসুন জেনে নেই পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষে করণীয় সম্পর্কে- 

পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষে করণীয় (Fish Farming In Pond) - 

বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে সফলভাবে মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পানি সরবরাহের ব্যবস্থা আছে, উৎপাদিত মাছ ও খাদ্য উপকরণ সহজে পুকুর পাড়ে পরিবহন করার মতো যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে এবং সর্বোপরি পর্যাপ্ত সূর্যের আলো দীর্ঘ সময় পুকুরে পড়ে এরূপ পুকুর নির্বাচন করতে হবে।

পুকুর প্রস্তুতিঃ

চাষের পুকুর অবশ্যই ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুর শুকানোর পর চুন প্রয়োগ করতে হবে শতকে এক কেজি হারে। পুকুরের তলদেশে যদি কাদা থেকে যায়, তবে চুন কাদার সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পুকুরে যদি ইতোপূর্বে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ করা হয়ে থাকে তবে চুনের পাশাপাশি শতকে ৫০০ গ্রাম হারে পটাশ সার দিতে হবে। চুন প্রয়োগের ৪ থেকে ৫ দিন পর পানি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরের পানির গভীরতা এক মিটার হওয়া ভাল।

পোনা মজুদ (Fish Seed) - 

পোনা মজুদের জন্য পরিচিত মৎস্য খামার থেকে ভালোমানের পাংগাস (১৮-২০ সেমি), তেলাপিয়া (৬-৮ সেমি) এবং শিং মাছের (৭-৮ সেমি) পোনা সংগ্রহ করতে হবে। সাথে কার্প জাতীয় মাছের পোনা ছাড়তে হবে ১৪-১৬ সেমি আকারের। এ আকারের পোনা পাওয়া নিশ্চিত করা এবং চাষে অধিক লাভবান হবার জন্য ধানি পোনা সংগ্রহ করে নিজস্ব পুকুরে উপযুক্ত আকার পর্যন্ত বড় করে নিতে হবে। চাষের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে ভালোমানের উপযুক্ত আকারের পোনার ওপর। একটি এক একর পুকুরে পোনা ছাড়ার পরিমাণ নিম্নে দেয়া হলো:

খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ

মাছের খাদ্য প্রদানের মূল নীতি হলো, মাছ যে পরিমাণ খাবার খেতে পারে ঠিক সেই পরিমাণ খাদ্য প্রতিদিন সময়মত নির্ধারিত স্থানে প্রদান করা। সে উদ্দেশ্যে পোনা ছাড়ার পর হতে নিয়মিতভাবে দিনে দুবার মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের ১০-৩ ভাগ হারে খাদ্য দিতে হবে। খাদ্যে আমিষের ভাগ ৩০% হতে হবে। প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির বাণিজ্যিক খাবার  এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে। খাদ্য প্রয়োগের সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাছ সবটুকু খাবার খেয়ে ফেলে।  সব খাবার গ্রহণ না করলে খাদ্য প্রদান অবশ্যই কমিয়ে দিতে হবে।

আরও পড়ুন - হাঁস-মুরগীর পরিবর্তে কোয়েল পালনে বাড়ছে কৃষকদের আগ্রহ

পাঙ্গাস চাষে রোগ বালাই দমনঃ

১. শীতকালে অপোকৃত নিম্ন তাপমাত্রায় ট্রাইকডিনা এবং  এপিসমিয়া নামক বহিঃ পরজীবী দ্বারা অথবা পানির গুণাগুণ সহনীয় মাত্রায় না থাকলে পাংগাস মাছ রোগাক্রান্ত হতে পারে।

২.পাংগাস মাছ লালচে দাগ রোগে আক্রান্ত হলে ত্বক ও পাখনার গোড়ায় লালচে দাগ স্পষ্ট দেখা দেয় এবং কখনও কখনও মুখে ঘা দেখা দেয়। এ রোগে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোস্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় মাছ অস্থির ও এলোমেলোভাবে সাঁতার কাটে।

৩. পুকুরে পাংগাস মাছ বহিঃ পরজীবী বা ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হলে আক্রান্ত মাছগুলোকে জাল টেনে উঠিয়ে ১ মিলি/লিটার পানিতে ফরমালডিহাইড দ্রবণে গোসল করিয়ে পুকুরে ছেড়ে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

৪.আক্রান্ত পুকুরে শতাংশে ০.৫-১.০ কেজি হারে কলিচুন প্রয়োগ করলে পরিবেশের উন্নয়ন হয়।

৫.শীতকালে সপ্তাহে ১-২ দিন পরিমিত পরিমাণে ডিপ টিউবয়েলের পানি পুকুরে সরবরাহ করলে পাংগাস মাছ এ ধরণের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

৬.লালচে দাগ বা লেজ ও পাখনা পচা রোগে পাংগাস আক্রান্ত হলে ০.২৫ মিগ্রা/লিটার মাত্রায় এক্রিফাভিন বা ম্যালাকাইট গ্রিন দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ১-২ মিনিট গোসল করিয়ে পুনরায় পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।

অথবা প্রতি কেজি দেহ ওজনে ১০ মিগ্রা. টেট্রাসাইকিন ইনজেকশন ১ সপ্তাহে ২ বার দিতে হবে অথাব প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৫০ মিগ্রা. টেট্রাসাইকিন মিশিয়ে ৭ দিন খাওয়ালে লেজ ও পাখনা পচা রোগ ভাল হয়।

আরগুলাস বা উকুন দ্বারা পাঙ্গাস মাছ আক্রান্ত হলে প্রতি শতাংশে ৪০-৫০ গ্রাম (৪-৫ ফুট পানি) করে ডিপটারেক্স সপ্তাহে অন্তর ২ বার পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে।

আরও পড়ুন - মেষ পালন করে আয় করুন লক্ষাধিক এবং জেনে নিন মেষের কয়েকটি উন্নত প্রজাতি সম্পর্কে

Published On: 11 March 2021, 09:25 PM English Summary: Pangas fish farming and disease management

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters