টার্কি (Turkey Bird) দেখতে মুরগির বাচ্চার মতো হলেও তুলনামূলকভাবে অনেক বড়। এটি ব্রয়লার মুরগির মত দ্রুত বাড়ে এবং খুব তাড়াতাড়ি এদেরকে বাজারে বিক্রি করা যায়। টার্কির চাষ মুরগী বা হাঁস চাষের মতোই।
টার্কির বিভিন্ন প্রজাতি হয়, কিন্তু সব প্রজাতি বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করার জন্য উপযুক্ত নয়। লাভজনক ভাবে এর ব্যবসা করতে হলে আধুনিক প্রজাতির চাষ করতে হবে। হোয়াইট হল্যান্ড এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্রোঞ্জ হলো জনপ্রিয় দুধরনের প্রজাতি।
টার্কি দেখতে মুরগির বাচ্চার মতো হলেও তুলনামূলকভাবে অনেক বড়। এরা পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। মাংস উৎপাদনের দিক থেকে খুবই ভালো (৬ মাস বয়সে ৫-৬ কেজি)। পাখির মাংস হিসেবে এটা মজাদার এবং কম চর্বিযুক্ত। তাই অন্যান্য মাংসের বিকল্প হতে পারে। আমাদের দেশে অনেকের ব্রয়লার মুরগির মাংসের ওপর অনীহা আছে। তাদের জন্য টার্কি হতে পারে সেরা পছন্দ।
টার্কি পাখির বৈশিষ্ট্য (Fervidity of Turkey Birds) :
আমাদের দেশের অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশে পশুপাখি পালন অন্যান্য দেশের তুলনায় সহজ। আবার কিছু প্রাণী আছে যারা দ্রুত পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। আর টার্কি পাখি সে রকম একটি সহনশীল জাত, যে কোনো পরিবেশ দ্রুত এরা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। এরা বেশ নিরীহ ধরনের পাখি, মুক্ত অথবা খাঁচা উভয় পদ্ধতিতে পালন করা যায়। ৬-৭ মাস বয়স থেকে ডিম দেয়া শুরু করে এবং বছরে ২-৩ বার ১০-১২টি করে ডিম দেয়। একটি মেয়ে টার্কির ৫-৬ কেজি এবং পুরুষ টার্কি ৮-১০ কেজি ওজন হয়। এদের মাংস উৎকৃষ্ট স্বাদের। ঘাস, পোকামাকড়, সাধারণ খাবার খেতে এরা অভ্যস্ত, তবে উন্নত খাবার দিলে ডিম ও মাংসের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়। ৪-৫ মাস বয়সের টার্কি ক্রয় করা ভালো, এতে ঝুঁকি কম থাকে এবং লিঙ্গ নির্ধারণ সহজ হয়। প্রথমে বাণিজ্যিকভাবে শুরু না করে ৮-১০ জোড়া দিয়ে শুরু করা ভালো, কারণ তাতে সুবিধা অসুবিধাগুলো নির্ণয় করা সহজ হয়।
রোগবালাই (Disease Management) :
টার্কি পাখির তেমন বড় কোনো রোগবালাই নেই। চিকেন পক্সের টিকা নিয়মিত দিলে এ রোগ এড়ানো সম্ভব। অতি বৃষ্টি বা বেশি শীতের সময় মাঝে মাঝে ঠান্ডাজনিত রোগ দেখা যায়, রেনামাইসিন জাতীয় ওষুধ দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে নিয়মিত টিকা দিলে এসব রোগ থেকে সহজেই টার্কিকে রক্ষা করা যায়।
টার্কি পালনের সুবিধা -
-
এদের মাংস উৎপাদন ক্ষমতা অনেক, টার্কি ব্রয়লার মুরগির থেকে দ্রুত বাড়ে
-
ঝামেলাহীনভাবে দেশি মুরগির মতো পালন করা যায়; অল্প পুঁজিতে একটি আদর্শ টার্কির খামার করা যায়
-
টার্কি পালনে তুলনামূলক খরচ কম, দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি ঘাস, লতা-পাতা খেতেও পছন্দ করে
-
টার্কি দেখতে সুন্দর, তাই বাড়ির শোভাবর্ধন করে
-
টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি, চর্বি কম। তাই গরু কিংবা খাসির মাংসের বিকল্প হতে পারে
-
টার্কির মাংসে অধিক পরিমাণ জিংক, লৌহ, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ই ও ফসফরাস থাকে। এ উপাদানগুলো মানব শরীরের জন্য উপকারী এবং নিয়মিত এ মাংস খেলে কোলেস্টেরল কমে যায়
-
টার্কির মাংসে এমাইনো এসিড ও ট্রিপটোফেন অধিক পরিমাণে থাকায় এর মাংস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
-
অন্যান্য পাখির তুলনায় রোগবালাই কম এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে খামারে ঝুঁকি অনেক কমে যায়
-
উচ্চমূল্য থাকায় খরচের তুলনায় আয় অনেক বেশি
চাহিদা বৃদ্ধিই ব্যবসায় এনেছে মুনাফা -
পশ্চিমবঙ্গে টার্কির চাহিদা ক্রমবর্ধমান। বিশেষ করে উৎসবের মরসুমে রেস্তোরাঁ মালিকরা চাইছেন স্পেশাল ডিস হিসেবে টার্কি রাখতে। এছাড়াও টার্কি বর্তমানে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষেরও বেশ প্রিয়। রেড মিটের থেকে টার্কির মাংসে চর্বির পরিমাণ অনেক কম। এক সূত্র অনুযায়ী জানা গেছে, ২০১৯ সালে কেবল সরকারের ঘর থেকেই টার্কির মাংস বিক্রি হয়েছিল ১০ টন। ২০২০ সালে তা দ্বিগুণ হওয়ার লক্ষ্যে।
এসএইচজি, আতমা প্রকল্প, ব্লক প্রকল্প ইত্যাদি বিভিন্ন গোষ্ঠীর উদ্যোগে গ্রামীণ অঞ্চলে টার্কির বাচ্চা বিতরণ করা হয়। কম খরচে/বিনা খরচে এই সকল গোষ্ঠীর থেকে টার্কি নিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে পালন করলে সহজেই প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা যায়।
আরও পড়ুন - Profitable Goat Rearing - এই প্রজাতির ছাগল পালন আপনাকে দেবে সবচেয়ে বেশী মুনাফা
সফল টার্কি চাষের জন্য ভালো খামারের ও বেড়ার দরকার। এরা খুব বড় আর শক্তিশালী হয়, তাই এদেরকে রক্ষা করার জন্য শক্তিশালী বেড়ার প্রয়োজন। ৭৫ ফুট জায়গা ১২টা টার্কি প্রতিপালন করার জন্য যথেষ্ট। যথেষ্ট পরিমাণে আলো আর বাতাস থাকতে হবে। বেড়ার উচ্চতা বেশী হতে হবে, মাটির থেকে কমপক্ষে ৪ ফুট উঁচু হলে ভালো হয়। শক্ত জিনিস দিয়ে বেড়া বানাতে হবে কারন এরা খুব শক্তিশালী হয়। ভালো এবং পুষ্টিকর খাদ্য টার্কিকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে, তাই এদেরকে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
আরও পড়ুন - Poultry Farming - মুরগি ও ছাগল পালন করে লাভের মুখ দেখছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেকার যুবকরা ও যুবতীরা