ছাগল পালন (Goat Rearing) আমাদের দেশে এক লাভজনক ব্যবসা, তবে নতুন ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গ্রহণ না করায় অনেক সময় পালনকারীর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। এমন পরিস্থিতিতে যদি আপনি ছাগলের ব্যবসা করতে চান তবে প্রথমে এর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল অনেক শিক্ষিত তরুণ ও প্রগতিশীল কৃষক ছাগল পালনের ব্যবসা করে ভাল লাভ করছেন।
এই লাভজনক ব্যবসায় অধিক মুনাফা করতে হলে পশুপালককে জানতে হবে কোন প্রজাতির ছাগল তাকে পালন করতে হবে। এ সম্পর্কে একটা সম্যক জ্ঞান থাকা দরকার। আজ এই নিবন্ধে এমন কয়েকটি বিশেষ ছাগলের জাত সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হল, যা অনুসরণ করে ব্যক্তি ভাল উপার্জন করতে পারেন-
ভারতীয় ছাগলের প্রধান প্রজাতি:
বিটল ছাগল (Beetal Goat) -
বিটল জাতের ছাগলগুলি মূলত পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুর জেলার বটালা মহকুমায় পাওয়া যায়। এই জাতের ছাগলগুলি পাঞ্জাব সংলগ্ন পাকিস্তানের কয়েকটি অঞ্চলেও পাওয়া যায়। এদের গাত্রে বাদামি বর্ণের দাগ বা কালো বর্ণের উপর সাদা বর্ণের দাগ পরিলক্ষিত হয়। এরা প্রতিদিন ২.৫ -৪ লিটার পর্যন্ত দুধ দিতে পারে। দৈহিক ওজন ছাগীর ক্ষেত্রে ৪৫ কেজি এবং ছাগের ক্ষেত্রে ৬৫ কেজি পর্যন্ত হয়।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল (Black Bengal Goat) -
এই জাতের ছাগলগুলি পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, আসাম, উত্তর উড়িষ্যা এবং বাংলায় পাওয়া যায়। সাধারণত ১২-১৫ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয়। একটি ছাগী বছরে দু’বার বাচ্চা প্রসব করলেও উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় একটি ছাগী থেকে ২-৮ টি পর্যন্ত বাচ্চা পাওয়া যেতে পারে। ২০ কেজি দৈহিক ওজন সম্পন্ন একটি ছাগী থেকে কমপক্ষে ১১ কেজি খাওয়ার যোগ্য মাংস এবং ১-১.৪ কেজি ওজনের অতি উন্নতমানের চামড়া পাওয়া যায়। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের চামড়া একটি অতি মূল্যবান উপজাত। সেমি-ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে ২৫ টি ছাগীর খামার থেকে প্রথম বছরে ৫০,০০০ টাকা, দ্বিতীয় বছরে ৭৫,০০০ টাকা এবং তৃতীয় বছরে ১,০০০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।
বার্বারি ছাগল (Barbari Goat) -
বার্বারি মূলত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকাতে পাওয়া যায়। উত্তর প্রদেশের আগ্রা, মথুরা এবং সংলগ্ন অঞ্চলেও এই প্রজাতির ছাগল পাওয়া যায়। দৈহিক ওজন ছাগীর ক্ষেত্রে ৩০-৩৫ কেজি এবং ছাগের ক্ষেত্রে ৪০ কেজি পর্যন্ত হয়। বছরে ৪ টি বাচ্চা প্রসব করতে পারে। এই জাতের ছাগল প্রতিদিন ১ কেজি পর্যন্ত দুধ দিতে পারে।
হাইব্রিড ছাগল পালনে লাভ -
ভারতে ছাগলের মাংসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। হাইব্রিড জাতের ছাগল পালন এই কারণে ভাল লাভ করতে পারে। হাইব্রিড ছাগল ও উন্নত প্রজাতির ছাগল পালনে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কম, অন্যদিকে তাদের মাংস খুব সুস্বাদু এবং এর চাহিদাও রয়েছে। এ ছাড়া হাইব্রিড ছাগলের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এটি মাত্র ৬ মাসের মধ্যে ২৫ কেজি হয়ে যায়। ব্ল্যাক বেঙ্গল এবং সিরোহি উন্নত জাতের ছাগল যা পালন করলে কৃষকের ভাল লাভ হবে।
আরও পড়ুন - আয় বৃদ্ধির জন্য কোন জাতের গো - পালন করবেন কৃষকবন্ধুরা?
সঠিক ডায়েট ম্যানেজমেন্ট -
দেশের বিভিন্ন কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে আধুনিক পদ্ধতিতে ছাগল পালন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই সময়ে ডায়েট ম্যানেজমেন্ট, টিকা প্রদান সহ অনেকগুলি বিষয় প্রশিক্ষিত হয়। এর সাথে, ছাগলকে দেওয়া খাদ্যে ভিটামিন এবং খনিজগুলির পরিমাণ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বৈজ্ঞানিক ছাগল পালনের জন্য পর্যায়ক্রমে টিকা দেওয়া, কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়া ও পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা করা খুব জরুরী। বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে, ব্যয় কম হয়, সাথে সাথে ছাগল পালন থেকে ভাল লাভ করা যায়।
আরও পড়ুন - Profitable Agriculture- কীভাবে পশুপালন থেকে বেশী আয় করবেন, রইল সহজ উপায়