“মাল্টিপল স্টকিং ও মাল্টিপল হারভেস্টিং” (Multiple Harvesting) এই পদ্ধতিতে, হেক্টর প্রতি বারো হাজার মাছ ছাড়া যায়। কম্পোজিট মিশ্র মাছ চাষের মতোই একইভাবে পুকুর প্রস্তুত করা হয়। কোন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা কাজ প্রয়োজন হয় না। তবে, একটি নার্সারি পুকুর এই সিস্টেমের একটি পূর্বশর্ত। মাছ চাষ ৩ বছর ধরে ক্রমাগতভাবে সম্পন্ন হয়, যেখানে মাছ ধরা ও পুনরায় ছাড়া শুরু হয় চতুর্থ মাস থেকে।
প্রযুক্তির উপকারিতা হল, এই পদ্ধতিতে, মাছ চাষের (Profitable Fish Farming) জন্য মাছ চাষির বেশি মূলধন প্রয়োজন হয় না।
প্রথমে তাকে সর্বোচ্চ ৪ মাস মেয়াদে পুকুর পরিচালনা করতে হবে। তারপরে তিনি উপার্জন শুরু করেন, যা আরো মাছ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আইটেম কেনার জন্য পুনরায় বিনিয়োগ করা হয়। অতএব, একটি প্রান্তিক কৃষক এই সিস্টেম গ্রহণ করে তার ক্ষুদ্র সম্পদ সঙ্গে বৈজ্ঞানিক মাছ চাষ গ্রহণ করতে পারেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে জাল টানার ফলে ক্ষতিকর গ্যাসগুলি মুক্তি পায় এবং জলাশয়ের তলদেশের মাছের খাদ্যের পরিপোষক পদার্থের উপরের জলের সাথে মিশ্রণের ফলে পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।
মাছ চাষীদের উত্সাহী মাছ চাষের প্রযুক্তিকে উন্নত উৎপাদন করার জন্য অনুপ্রাণিত করার জন্য একাধিকবার মাছ ছাড়া (স্টকিং) এবং একাধিক ফসল সংগ্রহ - একটি দরকারী ধারণা।
তুলনামূলক আলোচনা করলে বিষয়টি আরো সহজে বোঝা যাবে। হাতের আঙুল সাইজের মাছ (১২৫-১৫০ মিমি/৫-৬ ইঞ্চি) ৬-৮ কার্প প্রজাতির সমন্বয় নীচের উল্লেখ ঘনত্ব উপর স্টক করা যেতে পারে অর্থাৎ মাছ ছাড়ের সংখ্যা। একবার মাছ ছেড়ে একবারই ধরা (সিঙ্গল স্টকিং সিঙ্গল হারভেস্টিং/এসএসএসএইচ ) পদ্ধতিতে এক একরে (একশো ডেসিম্যাল) ২৫০০টি মাছ ছাড়া যায়। একবার মাছ ছেড়ে একাধিকবার মাছ ধরা (সিঙ্গল স্টকিং মাল্টিপল হারভেস্টিং/ এসএসএমএইচ ) পদ্ধতিতে এক একরে (একশো ডেসিম্যাল) ৪০০০ টি মাছ ছাড়া যায়।
একাধিকবার মাছ ছেড়ে একাধিকবার মাছ ধরার পদ্ধতি (সিঙ্গল স্টকিং মাল্টিপল হারভেস্টিং / এসএসএমএইচ ) তে এক একরে (একশো ডেসিম্যাল) ৭০০০ টি মাছ ছাড়া যায়।
নিজস্ব পুকুরে (লীজ-এর টাকা ও অন্যন্য আপতকালীন খরচ বাদে) সিঙ্গল স্টকিং সিঙ্গল হারভেস্টিং পদ্ধতিতে এক একরে এক বছরে ৩২ হাজার টাকা খরচ করে উৎপাদন হয় দুই হাজার কেজি মাছ। আয় হয় ৯২ হাজার টাকা। অর্থাৎ চাষির লাভ হয় ৬০ হাজার টাকা । সিঙ্গল স্টকিং মাল্টিপল হারভেস্টিং পদ্ধতিতে এক একরে এক বছরে ৪৬ হাজার টাকা খরচ করে উৎপাদন হয় দুই হাজার দুশো কেজি মাছ। আয় হয় ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা। অর্থাৎ চাষির লাভ হয় ৬৬ হাজার টাকা। মাল্টিপল স্টকিং মাল্টিপল হারভেস্টিং পদ্ধতিতে এক একরে এক বছরে ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে উৎপাদন হয় আড়াই হাজার কেজি মাছ। আয় হয় ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ চাষির লাভ হয় ৭০ হাজার টাকা।
সুতরাং এটি প্রতিষ্ঠিত যে মাছের চাষ অত্যন্ত লাভজনক উদ্যোগ। তবে মাছ চাষের উন্নত পদ্ধতি এই “মাল্টিপল স্টকিং মাল্টিপল হারভেস্টিং পদ্ধতি” গ্রহণ করে আমাদের রাজ্যের বেকার যুবকরা কম মূলধন বিনয়োগ করে অধিক লাভজনক মাছ চাষের মাধ্যমে তাদের জীবিকা অর্জনের জন্য মাছের চাষ অনুশীলন করতে পারে।
সাধারণ চাষে মাছের চারা ছাড়ার পরে মাছ বড় হলে এক সাথে মাছ ধরে, বাজারে পাঠানো হয়ে থাকে। কিন্তু এই “মাল্টিপল স্টকিং ও মাল্টিপল হারভেস্টিং” এই পদ্ধতিতে রুই, কাতলা ও মৃগেল / রুই - গ্রাস কার্প / কাতলা – সিলভার কার্প / মৃগেল – সাইপ্রিনাস কার্প অথবা প্রয়োজনে এদের সাথে অন্য ছোট জাতের মাছও তাদের অনুপাত অনুযায়ী একটু অধিক সংখ্যায় মাছের চারা পুকুরে প্রয়োগ করা হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার প্রয়োগ করা হয়, সজাগ দৃষ্টি রাখা হয় যেন কোনও রকম দূষণ না হয়। এর পর জলাশয় থেকে নিজের আর্থিক প্রয়োজনমতো এবং বাজারের চাহিদা অনুযায়ী মাছ ধরে বাজারজাত করা হয়। প্রতি বার মাছ ধরার সময় সমসংখ্যক চারাপোনা জোগাড় করে ছাড়া হয়। এই পদ্ধতি চলতে থাকে। পর্যায়ক্রমে বারংবার মাছ ধরে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সুবিধামতো বিক্রি করা একটা লাভজনক মাছ চাষ পদ্ধতি। সেই সাথে চাষির প্রয়োজনমতো ঘন ঘন টাকা উপায়ও হয়ে থাকে।
একটি বাস্তবিক মাছ চাষের কেস স্টাডি উল্লেখ করলে বোঝা যাবে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক “মাল্টিপল স্টকিং ও মাল্টিপল হারভেস্টিং” এই পদ্ধতিতে এক একর (১০০ ডেসিম্যাল) জলাশয়ে রুই, কাতলা, সিলভার কার্পের সাথে আমুর মাছ চাষ পদ্ধতি।
আরও পড়ুন - পশুপালন খাত উন্নত করতে সরকারের ৫০০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রচলন
সাধারণ পুকুরে চাষের জন্য যদি মে মাস নাগাদ ডেসিম্যাল পিছু ৩০০ গ্রাম ওজনের কাতলা ২০০ টি, ১০০-১৫০ গ্রাম ওজনের সিলভার কার্প ১৫০ টি, ৫০-১০০ গ্রাম ওজনের রুই মাছ ২০০০ টির সাথে ২-৭ গ্রাম ওজনের আমুর মাছ ৭৫০ টি মজুদ করা হয়, তবে তিন মাস পরে ৬০০ গ্রাম ওজনের রুই ও ১ কেজি ওজনের সিলভার কার্প হবে। সেগুলো বিক্রি করে দিয়ে পুনরায়, ১০০ গ্রাম ওজনের রুই মাছ ২০০০ টি ও ২০০ গ্রাম ওজনের সিলভার কার্প ১৫০ টি মজুদ করা হয়। এরপর মাছ ছাড়ার ৪-৫ মাস পর, ১.২-১.৫ কেজি কাতলা, ১.৫ কেজি আমুর মাছ পাওয়া যাবে এবং ধীরে ধীরে বাজার অনুযায়ী বাকি মাছ গুলো ধরে বিক্রি করতে হবে। এভাবেই “মাল্টিপল স্টকিং , মাল্টিপল হারভেস্টিং” এর মাধ্যমে চাষ করা যায়।
আরও পড়ুন - স্বল্প ব্যয়ে স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে চাষ করুন অ্যাজোলা