বাস্তুতন্ত্রের প্রধান উপাদান পরিবেশ। প্রতিটি প্রাণের বেঁচে থাকার তিনটি মুখ্য বিষয় - জল, বায়ু ও মৃত্তিকা আজ সংকটজনক। অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বিশ্বায়নের যুগ পর্যন্ত মানুষের বিভিন্ন অপরিকল্পিত ও যথেচ্ছ কার্যকলাপের ফলে বিপুলা পরিবেশ আজ নিঃস্ব হতে চলেছে। পরিবেশের প্রতি কপট অত্যাচারের ফলে নিঃশেষ হতে চলেছে মানুষ তথা জৈব বাস্তুতন্ত্র। সেই কারণে বর্তমান পরিবেশ হারিয়েছে তার ভারসাম্য, ছন্দ হারিয়েছে ঋতুচক্র, খামখেয়ালি হয়েছে আবহাওয়া, রুক্ষ হয়েছে ভূমি, আর মানুষ হারিয়েছে মনুষ্যত্ব।
পরিবেশ পরিবর্তনের প্রধান কারণ শিল্পজাত বর্জ্যের অপরিকল্পিত নিঃসরণ, কঠিন বর্জ্যের অনিয়ন্ত্রিত অবক্ষেপণ, অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার, দ্রুত নগরায়ন ও শিল্পায়নের পরিব্যপ্ততা, অনিয়ন্ত্রিত জনবিস্ফোরণ, কৃষিতে রাসায়নিক ও কীটনাশকের অবৈজ্ঞানিক ও অপরিমিত ব্যবহার, বায়ুতে বৃদ্ধি পেয়েছে NOx ও SOx এর বিষাক্ত অক্সাইডস্, জলে মিশেছে পারদ, সীসা, আর্সেনিক ও ফ্লুরিন ঘটিত বিষাক্ত রাসায়নিক যৌগ, মাটির গর্ভ থেকে তোলা হচ্ছে যথেচ্ছ পরিমাণ জল, ফলে মাটি হারিয়েছে তার আর্দ্রতা, বায়ু দূষণের কারণে বৃষ্টির জলে বাড়ছে অম্লত্ব, যা মাটির pH পরিবর্তনের মাধ্যমে বদলে দিয়েছে মাটির চরিত্র।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবেশ ও আবর্জনা-দূষণ, ভারতের বিভিন্ন শহরাঞ্চলে প্রদূষণের মাত্রা প্রায় একশো শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে, যা সত্যিই চিন্তার বিষয়, অথচ এই দূষণ নিয়ন্ত্রণের কোনো সুস্থ পরিকাঠামো নির্মাণ এখনও পর্যাপ্ত নয়। অন্যদিকে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে আবহাওয়া ও জলবায়ুর খামখেয়ালিপনা ক্রমবর্ধমান, যার প্রভাব কৃষিতেই সর্বাধিক পরিলক্ষিত হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যদি এই দূষণ কোনো ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেদিনই আধুনিক সভ্যতার সুদিন ফিরবে। জড়াজীর্ণতা কাটিয়ে বসুন্ধরা হয়ে উঠবে সুজলা, সুফলা, ও শস্যশ্যামলা।