ভারতে নারী ও পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান। সেটি ভারতের কৃষি অর্থনীতিতেও প্রযোজ্য। কিন্তু অনান্য ক্ষেত্রের মতো গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীদের বিশেষ ভূমিকা থাকলেও, তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত থেকে যান। কৃষিতে চাষের কাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাড়ির মহিলারা নিযুক্ত থাকেন। বীজ বোনা (Sees Sowing), আগাছা তোলা (Weed Management), ফসল কাটা (Harvesting), ফসল ঝাড়াই এবং ফসল ঘরে তোলার সময় পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সমানভাবে পরিশ্রম করেন।
নারী কৃষির অগ্রদূত, যে নারী আমাদের বিশ্ব সংসারকে গৌরবান্বিত করেছে, তাদেরই এ দেশে (৭০% নারীর) উপার্জনের স্বাধীনতা নেই। মাত্র ৩০% নারী নিজের ইচ্ছায় উপার্জনের স্বাধীনতা পেয়ে থাকেন। আর যারা আয় করেন তাদের মধ্যেও বেশীরভাগেরই নিজের আয়ের ওপর কোন অধিকার থাকে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পুরুষশাসিত সমাজে নারী যেন আজও বড়ই অবহেলার জিনিস। তবে গ্রামের তুলনায় শহুরে নারীদের ক্ষেত্রে এই অবস্থা কিছুটা ভালো।
কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে কৃষিকাজে সবচেয়ে বেশি নারী নিয়োজিত রয়েছেন। ফসলের প্রাক বপন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন, বীজ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এমন কি বিপণন পর্যন্ত অনেক কাজ নারীরা এককভাবেই করে থাকেন। একথা বলাই যায়, কৃষি খাতের মেরুদন্ডই হচ্ছে নারী। কিন্তু কোনো পরিসংখ্যানে নারীর এই অবদানের কোন স্বীকৃতি নেই। এমনকি কৃষি কাজে জড়িত নারী শ্রমিকের তেমনভাবে মূল্যায়নও করা হয় না।
গ্রামীণ সমাজে নারীদের কৃষিতে সংযুক্ত থাকাকে দৈনন্দিন কাজের অঙ্গস্বরূপ বিবেচনা করা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরুষ শ্রমিকের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলেও তারা মজুরি পান না। নারীদের মজুরি প্রদানের বিষয়টি সেখানে অবান্তর। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র মজুরি দেওয়া হলেও তারা তীব্রভাবে বৈষম্যের শিকার হন। কোনভাবেই সম্মান প্রাপ্তি হয়না, স্বীকৃতির অভাব প্রকট হয়ে ওঠে। অথচ কৃষিতে সার্বিকভাবেই জরিয়ে রয়েছেন নারীরা।
পরিশেষে বলা যায়, বছরের মাত্র একদিন নারীদিবস (৮ ই মার্চ) পালন না করে, যদি নারীদের প্রত্যহ সম্মান করা হয়, কৃষিতে সংযুক্ত নারীদের যোগ্য সম্মান দেওয়া হয়, তাঁদের প্রাপ্য মজুরি দেওয়া হয়, সর্বোপরি নারীদের স্বাধীনতার বিষয়টি উপলব্ধি করে তাঁদের এগিয়ে যেতে দেওয়া হয়, তাহলে আখেরে আমাদের সমাজেরই উন্নতি ঘটবে।
আরও পড়ুন - উন্নত যন্ত্রাংশের ব্যবহারে চাষে শ্রমের সাশ্রয় ও কৃষকের অধিক অর্থ উপার্জন (Use Of Agri Machinery)