২০১৪-১৫ সালে দেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রচারের জন্য ভারত সরকার একটি বিশেষ উত্সর্গীকৃত প্রকল্প 'সাব মিশন অন এগ্রিকালচারাল মেকানাইজেশন' চালু করেছে।
এই প্রকল্পটির লক্ষ্য কাস্টম হিয়ারিং সেন্টার (সিএইচসি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের (এসএমই) সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষি যন্ত্র ক্রয়ে সহায়তা করা, উচ্চ প্রযুক্তির এবং উচ্চমূল্যের কৃষি সরঞ্জাম এবং খামার যন্ত্রপাতি ব্যাংকগুলির কেন্দ্র তৈরি করা এবং মানুষের কাছে পৌঁছানো, যার নাগাল এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। কৃষকের কাছে বিভিন্ন ভর্তুকিযুক্ত কৃষি সরঞ্জাম ও মেশিন বিতরণও এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত অন্যতম কার্যক্রম।
২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ এর মধ্যে রাজ্য এবং অন্যান্য বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলিকে ৪৫৫৬.৯৩ কোটি টাকা জারি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৩ লক্ষেরও বেশি কৃষিক্ষেত্রে সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে এবং ২৭.৫ হাজারেরও বেশি কাস্টম নিয়োগের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ২০২১-২২ সালে এসএমএএমের জন্য ১০৫০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় বেশি।
কৃষি কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছিল লাঙ্গল ব্যবহারের মাধ্যমে। তারপর বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষি প্রক্রিয়া আরও সরলীকরণ ও চাহিদার উপযোগী করে তোলার চেষ্টা হয়ে চলেছে আজও। প্রাচীন লাঙ্গলের ব্যবহার থেকে আজ পাওয়ার টিলারের ব্যবহার - এই উন্নতি একদিনে হয়নি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলির চাষের পরিকাঠামো আজও আমাদের তাক লাগিয়ে দেয়। GPS নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের মাধ্যমে চাষ, ফসল কাটা-বোনার জন্য স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র , কীটনাশক ড্রোণের মাধ্যমে ছড়ানো, ইত্যাদি আপনারা কৃষি জাগরণের প্রতিবেদনগুলিতে হামেশাই দেখতে পান।
আমাদের দেশ এই উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে এখনও বেশ খানিকটা পিছিয়ে । আমাদের রাজ্য বাংলার অবস্থা এখনও করুণ , কৃষিকাজে যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তির ব্যবহারের নিরিখে । যদিও কীটনাশক স্প্রেয়ার, ফসল কাটার যন্ত্র, পাওয়ার টিলার যন্ত্রাংশগুলি আমাদের চাষীদের কাছে আজ পরিচিত, কিন্তু ব্যবহার করার সামর্থ্য ও বিচারে তারা অনেকটা পিছিয়ে।
সরকারী প্রকল্পগুলি যদিও তাদের দিশা দেখাচ্ছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে, রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন মেশিন, কম খরচে রাইসমিল মুখে হাসি ফুটিয়েছে অনেক কৃষকের। কাস্টম হায়ারিং সেন্টারগুলির মাধ্যমে পাওয়া যন্ত্রাংশের সুবিধা এখনকার চাষীদের বড় সাহায্য।
কিন্তু রাজ্যের অনেক অংশেই এই সেন্টারগুলির বিরুদ্ধে চাষীদের সঠিক সুবিধা না পাওয়ার ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঠিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশের ব্যবহারের সুবিধে যাতে সকল চাষী পান তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। প্রযুক্তি ও উন্নত যন্ত্রাংশের ব্যবহার চাষে শ্রমের সাশ্রয় করে, চাষীর ইনপুট খরচ কমায় ও আয় বৃদ্ধি করে । এই সকল বিষয় মাথায় রেখে রাজ্যের সরকারী - বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলির নতুন উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
আরও পড়ুন - নারী কৃষির অগ্রদূত, ভারতের কৃষিতে মেরুদন্ডই নারী