বাঙ্গালীর রসনার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, মাছ ছাড়া বাঙ্গালীয়ানা অসম্পূর্ণ। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে মধ্যাহ্ন ভোজনে পাতে মাছ না থাকলে যেন রসনা তৃপ্ত হয় না। শুধুমাত্র নিত্যনৈমিত্তিক ভাবেই নয়, বিলাস-ব্যসনে, উৎসবে আজ মাছ বাঙ্গালী জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। যতদিন গেছে বাঙ্গালীর পাত থেকে হারিয়ে গেছে বহু মাছ, তবে নবসংযোজন যে হয়নি তা নয়, নতুন ভাবে, নতুন স্বাদে বাঙ্গালী আজ হয়ে উঠেছে “মাছে ভাতে”। তবুও গ্রীষ্মে রুই, কাতলা; বর্ষায় ইলিশ, পাবদা, ফ্যাসা; শীতে আমুদি-ঋতুচক্রের মতো বাঙ্গালীর পাতে আসে ঘুরে ফিরে।
মাছ চাষে যে আধুনিকতা এসেছে, একথা বলাই বাহুল্য, কিন্তু নতুন যে পদ্ধতিতে রাসায়নিকের মাধ্যমে মাছের ফলন বৃদ্ধি করা হচ্ছে, তাতে মাছের পুষ্টিগুণ নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাচ্ছে। উন্নততর মাছ চাষ মানে এই নয়, যে বিভিন্ন রাসায়নিকের ব্যবহার করে ফলন বাড়ানো, বরং দেশী পদ্ধতি ব্যবহার করেও তা বাড়ানো যেতে পারে। ২০১৭ সালের সমীক্ষা অনুসারে বঙ্গে মাছের উৎপাদনের পরিসংখ্যান অত্যন্ত ভালো, ২০০৮ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে মাছের মোট উৎপাদন ১৪৪৭.২৬ হাজার মেট্রিক টন। পরবর্তী তিন বছর উৎপাদন উর্দ্ধমুখী হলেও ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত উৎপাদনের ঘাটতি পড়ে, তবে ২০১৩ এর পরবর্তী বছরগুলিতে অবশ্য মাছের উৎপাদন অবশ্য মাছের উৎপাদন পুনরায় উর্দ্ধমুখী হয়ে শেষ ২০১৭ FY( Fiscal Year ) –এ বিগত বৎসরগুলির তুলনায় সর্বাধিক ১৬৭১.৪২ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করা গেছে । পশ্চিমবঙ্গে উপকূলীয় মৎস্য উৎপাদনের তুলনায় আভ্যন্তরীণ জলাভূমির মৎস্যচাষের পরিসংখ্যান অপেক্ষাকৃত ভালো, কিন্তু তাতেও অনেক সমস্যা । ভবিষ্যতে এই ফলন ধরে রাখা যাবে কিনা তা বলা দুষ্কর, কারণ এর পেছনে জলাভূমি ভরাটের একটা সমস্যা প্রবল।
মাছ চাষের রাজ্যভিত্তিক বৈষম্যকে মেটানোর জন্য “ব্লু রিভলিউশন” প্রকল্প গৃহীত হয়েছিল। আভ্যন্তরীণ জলাজমিতে রাসায়নিক মুক্ত মাছ চাষ করবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প রূপায়নে CIFRI (Central Inland Fisheries Research Institution)-এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে রাসায়নিক মুক্ত মাছ উৎপাদনের পরিকল্পনা রূপায়নের জন্য দেশী উপায়ে মাছ চাষকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।