বর্ষার অনুপ্রবেশ ঘটেছে প্রায় সকল রাজ্যেই। পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাতে যারপরনাই খুশি কৃষকরা, রাজ্য জুড়ে খরিফ শস্যের বপন শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ফসল ধান। এই সময় আমন ধানের চাষ করে কৃষকরা লাভের প্রত্যাশা করেন। কিন্তু অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের লাভের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তাই দুর্যোগ থেকে ফসল রক্ষার জন্য কৃষি দফতর কৃষকদের তাদের ফসলের বীমা করার জন্য অনুরোধ করেছে। খরিফ -২০২০, ৩১ শে আগস্টের আগে অবশ্যই করুন আপনার ধান ফসলের বীমা।
ফসল বিমার সুবিধা (Benefits from the crop insurance scheme) -
ফসলের বীমা করা থাকলে দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি হলেও কৃষক আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন। যে কৃষকরা কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ফসল লোণ নিয়েছেন, তাদের ফসলের জন্য আলাদা করে বীমা করতে হবে না। কারণ তাদের ফসল এমনিই বীমার আওতায় আসে। অন্যান্য কৃষকরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী ফসলের বীমা করতে পারবেন। ফসল বীমা সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্রগুলিতে (CSC) করা যেতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের ক্ষেত্রে যারা আগের বছর বীমা করেছিলেন অথবা যারা কৃষকবন্ধু প্রকল্পে রয়েছেন, তাদের আলাদা করে বীমা করার প্রয়োজন নেই। তারা এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন। অবশিষ্ট কৃষকরা ফসলের বীমার জন্য যোগাযোগ করুন এই নম্বরে – ১৮০০-৫৭২-০২৫। এই বছর মহামারী পরিস্থিতিতে সরকার কৃষকদের বিশেষ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এই বছর ফসলের বীমা করলে প্রিমিয়ামের খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার।
যে কৃষকরা তাদের ফসলের বীমা করতে চান, তারা প্রধানমন্ত্রীর ফসল বীমা যোজনার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন – https://pmfby.gov.in/
কৃষকরা তাদের নিকটস্থ ব্যাঙ্কে গিয়েও এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে, ধান, ভুট্টা, চিনাবাদাম, সয়াবিন, মটর, মুগ এবং বিউলি - এই ফসলগুলি এ বছর প্রধানমন্ত্রীর ফসল বিমা যোজনার আওতায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সরকার ২ টি বীমা সংস্থাকে দায়িত্ব অর্পণ করেছে, যা জেলাগুলিতে ফসল বীমার কার্য পরিচালনা করবে।
১) Agriculture Insurance Company of India Limited
২) Bajaj Allianz General Insurance Company
প্রিমিয়ামের মূল্য (Premium have to be paid) -
- খরিফ ফসলের জন্য দুই শতাংশ প্রিমিয়াম
- রবি ফসলের জন্য পাঁচ শতাংশ প্রিমিয়াম
এই প্রকল্পের আওতায় বাণিজ্যিক ও উদ্যানজাত ফসলের জন্য কৃষকদের ৫ শতাংশ প্রিমিয়াম দিতে হবে।
প্রয়োজনীয় নথি (Required Documents)-
- কৃষকের ছবি
- পরিচয় পত্র
- ঠিকানার প্রমাণ পত্র
- জমির নথি
- জমিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ
ফসল বীমার অর্থ কৃষক দাবি করলে তাকে উপরিউক্ত নথি দাখিল করতে হবে।
কারা আবেদনের যোগ্য (Eligibility) -
- পশ্চিমবঙ্গের ‘বাংলা শস্য বীমা’ যোজনার ক্ষেত্রে কৃষককে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- জমির মালিক/ভাগচাষী সকলেই বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন।
- এই স্কিম অনুসারে, আবেদনকারীরা ফসলের ক্ষতির সম্মুখীন হলে কেবল বীমা কভারেজ পাবেন বলে সুবিধাভোগীকে কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতির সঠিক প্রমাণ এবং জমির দলিল সহ প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে।
কোথায় কোথায় পাওয়া যাবে এই সুবিধা (পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজ্যে পিএমএফবিওয়াই অথবা নিজ রাজ্য প্রকল্প) –
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দার্জিলিং, কালিম্পং, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, মালদহ, হুগলী, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার, বীরভূম, পুরুলিয়া, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা ইত্যাদি জেলায় এই সুবিধা উপলব্ধ।
নিজের নাম তালিকায় রয়েছে কি না অথবা স্থিতি পরীক্ষা করতে বাংলা শস্য বীমা পোর্টাল- https://banglashasyabima.net/ -এ কৃষক নিজের ভোটার কার্ড নম্বর দিয়ে যাচাই করতে পারেন।
আবেদন পদ্ধতি (Application procedure) –
অনলাইন আবেদন পদ্ধতি –
অনলাইনে এই ‘বাংলা ফসল বীমা’ যোজনার আবেদন করতে হলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইট ‘মাটির কথা’ থেকে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন। নিম্নে তার লিঙ্ক দেওয়া হল-
এই প্রকল্পে রেজিস্ট্রেশনের জন্য কৃষক উপরোক্ত লিঙ্কে ক্লিক করে ফার্মার কর্নার-এ নিজের নাম নথিভুক্ত করে প্রয়োজনীয় তথ্য পরস্পর পূরণ করে সাবমিট করতে পারেন।
অফলাইন আবেদন পদ্ধতি -
অফলাইনে আবেদনের জন্য এই ফর্ম কৃষকরা নিকটবর্তী গ্রাম পঞ্চায়েত, কিষাণ মান্ডি বা ব্লক অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
ফর্ম পূরণ -
কৃষকের নাম, পিতার/স্বামীর নাম, ঠিকানা- মৌজা/গ্রামের নাম ইত্যাদি তথ্য কৃষককে পূরণ করতে হবে। অধিসূচিত ফসল অর্থাৎ কোন ফসলের জন্য বীমা করছেন, জমির পরিমাণ এবং জমির দলিল, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ডিটেলস, কৃষকবন্ধু প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত থাকলে তার নম্বর ইত্যাদি সকল তথ্য বিশদে পূরণ করার পর ফর্মে কৃষকের নিজস্ব স্বাক্ষর করতে হবে অথবা আঙুলের ছাপ দিতে হবে। এরপর তা জমা দিন। সরকারের এই উদ্যোগে বন্যা, খরায় ফসলের ক্ষতির চিন্তা থেকে কৃষক থাকবেন নিশ্চিন্ত।
বিশেষ দ্রষ্টব্য - আমন ধান-এর বীমা করার শেষ তারিখ – ৩১/০৮/২০২০।
বীমার অর্থ দাবির আবেদন (Insurance claiming process) –
ফসলের ক্ষতি হলে আবেদনকারীকে/কৃষককে ৭২ ঘন্টার মধ্যে বীমাকৃত শস্যের তথ্য সরবরাহ করতে হবে। জরিপ নম্বর অনুসারে বীমাকৃত শস্য এবং আবাদ প্রভাবিত ক্ষেত্রের বিশদ থাকতে হবে। কৃষকের সকল তথ্য যাচাইয়ের পরে বীমার অর্থ প্রদান করা হবে।
এ বছর খারিফ শস্যের জন্য ইনসিওরেন্স কোম্পানি Agriculture Insurance Company of India Ltd এবং এর টোল ফ্রি নম্বর ১৮০০৫৭২০২৫৮।
অধিক জানতে লগ ইন করুন https://banglashasyabima.net/
বিশদ তথ্যের জন্য, আবেদনকারী অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর অফ এগ্রিকালচার অফিসে (ADA) অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন বা টোল ফ্রি নাম্বার ১৮০০-১০৩-১১০০ –এ কল করতে পারেন।
Image Source - Google
Related Link - প্রধানমন্ত্রী কুসুম যোজনা (PM Kusum Yojana)- সরকারের ভর্তুকিতে শুরু কৃষকদের সোলার পাম্প বিতরণ