বর্তমান করোনা আবহে সকলেই রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপরে জোর দিচ্ছেন | আর এক্ষেত্রে ভেষজ উদ্ভিদ হিসাবে তুলসীর জুড়ি মেলা ভার | স্বল্প ব্যয়ে তুলসী চাষ করে কৃষকরা অধিক লাভ ঘরে তুলতে পারেন | সর্বোপরি, পতিত জমিতেই তুলসী চাষ করা যায় | এছাড়া, অন্য ফসলের সঙ্গে অন্তর্বতী ফসল হিসাবেও তুলসীর চাষ করা যেতে পারে অনায়াসে | অনেক কৃষকভাইদের মতে, তুলসী চাষে মশা-মাছির উপদ্রবও কম হয় |
তুলসী একটি অসাধাণ ভেষজ উদ্ভিদ | যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর গুনাগুন | প্রায় সবরকম ভেষজ গাছের মধ্যে তুলসীকে "রানী" বলা হয় | আমাদের দেশে বহু বছর ধরে তুলসীর চাষ (Tulsi farming) হয়ে আসছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বাণিজ্যিকভাবে তুলসীর চাষ করে কৃষক নিশ্চিত লাভবান হবেন। ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিনমাসে প্রায় দু’লক্ষ টাকা আয় করা যেতে পারে। বাজারে তুলসীর প্রচুর চাহিদা। সারা বছর ধরেই চাষ করা যায়। তবে মোটামুটিভাবে বর্ষায় তুলসীর চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
মাটি (Soil):
উন্নত নিকাশযুক্ত সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ মাটি এই তুলসী চাষের জন্য উপযুক্ত। উচ্চ ক্ষারীয়, লবণাক্ত এবং জলাবদ্ধ জমি একেবারেই এর জন্য অনুপযুক্ত। ভাল জৈব পদার্থযুক্ত মাটিতে এই উদ্ভিদের দ্রুত বৃদ্ধি হয়। মাটির পিএইচ মান ৫.৫-৭ এর মধ্যে থাকা দরকার |
জাত:
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, তুলসীর বহু প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রজাতি হলো, বিষ্ণু তুলসী, রাম তুলসী, শ্যাম তুলসী, ভান তুলসী প্রভৃতি।
জমি তৈরী:
তুলসীর আবাদ করার জন্য, শুকানো মাটি প্রয়োজন। জমিতে ভালো করে লাঙল দিয়ে কর্ষণের পরে এফওয়াইএম ভালভাবে মাটিতে মেশাতে হবে। তুলসীর প্রতিস্থাপন সূক্ষ্ম বীজতলায় করা হয়।
বীজের পরিমান:
এক হেক্টর জমির জন্য তুলসীর বীজ প্রয়োজন ১০ কেজি।
রোপণ:
প্রধানত, ৪.৫ x ১.০ x ০.২ মিটার আকারের বীজতলা তৈরি করতে হবে । ২ সেমি গভীরতায় এবং ৬০ সেমি. দূরত্বে বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের ৬-৭ সপ্তাহ পরে জমিতে ফসল রোপণ করা হয়। বীজ বপন করার আগে মাটিবাহিত রোগ ও পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য মানকোজেব ৫ গ্রাম/কেজি প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্ৰয়োগ:
তুলসী চাষে রাসায়নিক সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। জৈবসার প্রয়োগেই ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। ইউরিয়া ১০৪ কেজি, এমপিও ৪০ কেজি এবং এসএসপি 1 কেজি / একর হারে , নাইট্রোজেন ৪৮ কেজি এবং পটাশ ২৪ কেজি এবং ফসফরাস ২৪ কেজি / একর হারে প্রয়োগ করতে হবে। নাইট্রোজেনের অর্ধেক ডোজ এবং ফসফেট পেন্টক্সাইডের সম্পূর্ণ ডোজ প্রতিস্থাপনের সময় প্রয়োগ করতে হবে |নাইট্রোজেনের অবশিষ্ট ডোজ প্রথম ও দ্বিতীয়বার কাটিং নেওয়ার পর প্রয়োগ করা যেতে পারে |
সেচ (Fertilizer):
বর্ষায় তুলসীর জমিতে সেচের প্রয়োজন হয়না | গরমের সময় একটি করে সেচ দিতে হবে |
রোগবালাই ও দমন (Disease management system):
তুলসীর জমিতে লিফ রোলার পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এক্ষেত্রে একরে ১৫০ লিটার জলে ৩০০ মিলি কুইনালফস মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। পাউডারি মিলডিউ রোগ দেখা দিলে ম্যানকোজেব ৪ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। ছত্রাকের আক্রমণে সিডলিং ব্লাইট দেখা দিতে পারে। এতে বীজ বা চারা মারা যায়। এছাড়া শিকড় পচা রোগ দেখা দিলে ব্যাভিস্টিন ১ শতাংশ জলে মিশিয়ে তুলসীর চারার জমি ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন - Flower farming: আপনি কি জানেন টবে ফুল চাষ করার বিশেষ সুবিধা?
ফসল সংগ্রহ:
চারা রোপণের ৩ মাস পরে ফলন শুরু হয়। ফুল ফোটার সময়কালে ফসল সংগ্রহ করা হয়। শাখাগুলির পুনর্জন্মের জন্য গাছটি মাটির উপরে কমপক্ষে ১৫ সেমি উপরে থাকতে হবে। সংগ্রহের পর সতেজ পাতাগুলি ব্যবহার করা হয় বা এটি ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য শুকনো হয়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Mushroom Cultivation: শিখে নিন বাড়িতে মাশরুম চাষের দুর্দান্ত পদ্ধতি